চামড়ার দাম নিয়ে কারসাজি বন্ধ হওয়া জরুরি

সম্পাদকীয়

পশুর চামড়া
ফাইল ছবি

গত কয়েক বছর ধরে চামড়ার দাম নিয়ে দেশে একধরনের কারসাজি চলছে। যদিও এ সময়ে আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়ার উচ্চমূল্য রয়েছে, তাসত্ত্বেও দেশের চামড়া বিক্রেতারা পণ্যটির ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না। ২০১৯ সালে কোরবানির চামড়া নিয়ে একধরনের বিপর্যয় ঘটেছিল। দাম না পেয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চামড়া মাটিতে পুঁতে ফেলার ঘটনাও ঘটে। বিষয়টি নিয়ে তখন দেশব্যাপী ব্যাপক সমালোচনা হয়েছিল। এরপর কোরবানির চামড়া ন্যায্য দাম নিশ্চিতের লক্ষ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নানামুখী প্রচেষ্টা চালালেও আকাঙ্ক্ষিত কোনো অর্জন চোখে পড়েনি।

দেশে চামড়ার দাম কম থাকলেও চামড়াজাত পণ্যের দাম বিগত বছরগুলোতে তিন গুণের অধিক বৃদ্ধি পেয়েছে। গত অর্থবছরে চামড়াজাত পণ্য থেকে যে পরিমাণ রপ্তানি আয় হয়েছে, তা থেকে বোঝা যায়, অভ্যন্তরীণ ব্যবসায়িক সিন্ডিকেটের কারণেই এই শিল্পে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। আমরা দেখেছি চামড়ার দাম কমাতে ট্যানারি ব্যবসায়ীরা অনেক ক্ষেত্রে নিজেরাই সমস্যা তৈরি করে থাকেন। কিন্তু তাদের এধরনের অসৎ প্রচেষ্টা রুখতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে দেখিনি।

universel cardiac hospital

কোরবানির ঈদের আগে ট্যানারির মালিকেরা চামড়া কিনতে বিশেষ সুবিধায় ব্যাংকঋণ নেন, যদিও এসব টাকা তাঁদের অন্য খাতে বিনিয়োগের অভিযোগ আছে। কেননা, চামড়া সংরক্ষণের ব্যবস্থা ট্যানারির মালিকদের হাতে নেই। এ কাজের দায়িত্ব বর্তায় বিসিকের ওপর। এ ক্ষেত্রে তারা বরাবরই ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে।

এবার ঢাকায় প্রতি বর্গফুট লবনযুক্ত গরুর চামড়ার দাম ৫০ থেকে ৫৫ টাকা এবং ঢাকার বাইরে গরুর চামড়া প্রতি বর্গফুট ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতি বর্গফুট খাসির চামড়া ১৮ থেকে ২০ টাকা, বকরির চামড়া প্রতি বর্গফুট ১২ থেকে ১৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ঢাকায় ও ঢাকার বাইরে বকরি ও খাসির চামড়ার দাম একই থাকবে বলে জানিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। প্রতিবছর মন্ত্রণালয় থেকে পশুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। কিন্তু যথোপযুক্ত মনিটরিংয়ের অভাবে সরকার নির্ধারিত দাম কার্যকর হয় না। ফলশ্রুতিতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত মৌসুমি ব্যবসায়ীরা।

এহেন পরিস্থিতিতে চামড়ার বাজার মনিটরিংয়ের জন্য জেলা প্রশাসক, বিভাগীয় কমিশনার, পুলিশসহ সংশ্লিষ্টদের সমন্বয়ে যে মনিটরিং টিম রয়েছে তাদেরকে সক্রিয় ভূমিকা পালন করা জরুরি। আমরা আশা করব, মনিটরিং টিমগুলো চামড়া শিল্পকে সিন্ডিকেট মুক্ত করার জন্য সবধরনের অনিয়মের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে