কোনোভাবেই স্বাভাবিক হচ্ছে না নিত্যপণ্যের বাজার। একেক সময় একেক ছলছুতোয় পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে বাজার সন্ত্রাসীরা। এই অসৎ অতি মুনাফালোভী ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট কোনো সময় চাল, চিনি, ভোজ্যতেল আবার কোনো সময় পেঁয়াজ ও ডিমের দাম বাড়িয়ে ইতোমধ্যে জনগণের পকেট থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা ছিনতাই করে নিয়েছে । কিন্তু এদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গ। ফলে এই অপ্রতিরোধ্য সিন্ডিকেট এবার কাঁচা মরিচ নিয়ে অতি বাণিজ্যে মেতেছে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। ১০০ টাকা কেজির কাঁচা মরিচ এখন অঞ্চল ভেদে ৮০০ টাকা থেকে ১০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ কী কারণে অকস্মাৎ কাঁচা মরিচের এই উচ্চমূল্য মন্ত্রণালয়ের কাছে তার কোনো সঠিক ব্যাখ্যা নেই। এমনকি বাজার নিয়ন্ত্রণেও নেই কোনো কার্যকর উদ্যোগ। গতকাল সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন ,কাঁচা মরিচ কৃষিজাত পণ্য, এর দাম কেন বেড়েছে, তা কৃষি মন্ত্রণালয় ভালো বলতে পারবে। এর উৎপাদন কতটুকু, তা কৃষি মন্ত্রণালয় জানে। সরকার কাঁচা মরিচ আমদানির অনুমতি দিয়েছে।’ আমরা মনে করি, বাজার নিয়ন্ত্রণের সম্পূর্ণ দায়িত্ব বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের, কাজেই বাজার নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বশীল মন্ত্রীর কাছ থেকে জনগণ এধরনের বালখিল্য মন্তব্য কখনোই প্রত্যাশা করেন না। এমনকি এধরনের কথাবার্তা বলে তিনি তাঁর ব্যর্থতার দায় কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না। কেননা এক্ষেত্রে প্রশ্ন থেকে যায়, তাঁর (বাণিজ্যমন্ত্রী) যদি কোনো দায়িত্বই না থাকে তাহলে বাজার স্থিতিশীল রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করার দায়িত্বটি তাহলে কার?
নতুন অর্থবছরের বাজেটে ব্যাপকভাবে মূল্যস্ফীতি কমে গিয়ে সেটা ৬ শতাংশ হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। কিন্তু এই মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন যে খুবই কঠিন তা বর্তমান বাজার পরিস্থিতি দেখেই উপলব্ধি করা যায়। উচ্চমূল্যস্ফীতির কারণে দেশের ৪২ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যতার মধ্যে আছে এবং এটি ক্রমবর্ধমান হারে বাড়ছে। রাজধানী ঢাকায় নতুন দরিদ্র হয়েছে ৫২ শতাংশ। দ্রব্যমূল্য কমাতে গেলে মন্ত্রণালয়কে প্রথমেই সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। অনিয়ম লুটপাট বন্ধ করতে হবে। না হলে মূল্যস্ফীতি কমানো যাবে না। কিন্তু বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বারবার বাজার নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে।
আমরা লক্ষ্য করছি, গত কয়েক বছর ধরেই নিয়ন্ত্রণহীন নিত্যপণ্যের বাজার। ভোজ্যতেল, আদা, রসুন, আলু ও পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। চিনির দাম বাড়ানো হয়েছে কয়েক দফা। বাড়ানো হয়েছে ভোজ্যতেলের দামও। এখন অরাজকতা চলছে কাঁচা মরিচ নিয়ে। বাজারের নৈরাজ্যের ফলে নাভিশ্বাস উঠেছে শ্রমজীবী ও স্বল্প আয়ের মানুষের জীবনে। বাজারে পর্যাপ্ত পণ্যের সরবরাহ থাকা সত্ত্বেও পণ্যের দাম বাড়ছে। মূলতঃ ত্রুটিপূর্ণ বাজার ব্যবস্থাপনার কারণেই এটা হচ্ছে । এমতাবস্থায় আমরা মনে করি, নিত্যপণ্যের বাজারে চলমান অরাজকতা দূর করতে হলে প্রথমেই ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট ভাঙার উদ্যোগ নিতে হবে। বাজার সন্ত্রাসীদের কাছে জিম্মি হলে চলবে না। এজন্য ভ্রাম্যমাণ আদালতের সংখ্যা বাড়াতে হবে। এই দায়িত্বটি বাণিজ্যমন্ত্রীকেই নিতে হবে। তিনি যদি এই দায়িত্ব পালন করতে না পারেন, তাহলে জনস্বার্থ বিবেচনা করে নিজ থেকেই পদত্যাগ করা উচিত।