‘ক্ষমতায় থাকাকালে বিএনপি পাকিস্তানি হানাদারদের মতো নির্যাতন চালিয়েছিল’

নিজস্ব প্রতিবেদক

ফাইল ছবি

ক্ষমতায় থাকাকালে বিএনপি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর মতো সারাদেশে নির্যাতন চালিয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, তারা আমাদের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে, চোখ তুলে নিয়েছে, হাত কেটে দিয়েছে, মেয়েদের ওপর পাশবিক অত্যাচার চালিয়েছে।

বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে বাজেট অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, ২০০১ সালের পহেলা অক্টোবর নির্বাচন। সেই নির্বাচনের আগে থেকেই তারা (বিএনপি) আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর অকথ্য নির্যাতন চালিয়েছে। বাড়ি-বাড়ি গিয়ে তারা মানুষের ওপর অত্যাচার করেছে। আর নির্বাচনের দিন আমাদের আওয়ামী লীগের নির্বাচিত চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে নেতাকর্মী কেউই ঘরে থাকতে পারেনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সমগ্র বাংলাদেশে সেনাবাহিনী নামিয়ে দিয়ে তারা যে নির্যাতন চালিয়েছিল, সেটা ভাষায় বর্ণনা করা যায় না। তারা আমাদের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে, চোখ তুলে নিয়েছে, হাত কেটে দিয়েছে, মেয়েদের ওপর পাশবিক অত্যাচার চালিয়েছে।

বিএনপির আমলে দক্ষিণাঞ্চলে কোনো সাংবাদিক যেতে পারতো না উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, সাংবাদিকরা কোনো সংবাদ পরিবেশন করতে পারত না। একমাত্র জনকণ্ঠ পত্রিকা জোর করে কিছু সংবাদ পরিবেশন করত। তাদের কিছু সাংবাদিক গোপনে যেত এবং তথ্য আনতো। পরবর্তীতে তাদের দেখাদেখি অনেক পত্রিকা সংবাদ পরিবেশন শুরু করে। এটা হলো বাস্তবতা। বিএনপির নির্যাতনের সঙ্গে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যেই নির্যাতন চালিয়েছিল শুধু সেটার সঙ্গেই তুলনা করা যায়।

‘খালেদা জিয়াকে ক্ষমতায় আনার জন্য কোনো কোনো মহল খুবই তৎপর ছিল। কারণ আমাদের গ্যাস বিক্রির একটা প্রস্তাব ছিল। আমি সিদ্ধান্ত দিয়েছিলাম যে গ্যাস বিক্রি করব না। অথচ খালেদা জিয়া লিখে দিয়েছিল যে, গ্যাস বিক্রি করবে। বিষয়টি তখন অনেক পত্রিকায়ও এসেছে।’

সরকারপ্রধান বলেন, বিএনপি কতো হাজার মেয়ের ওপর যে পাশবিক অত্যাচার। রাজশাহীর সেই ছয় বছরের রাজুফা। তার বাবা-মা নৌকায় ভোট দিলো কেন, সেজন্য তাকে গ্যাং র‌্যাপ করা। মহিমাকে র‌্যাপ করা, সে তো আত্মহত্যা করেছে। খুলনার রুমা থেকে শুরু করে হাজার হাজার ঘটনা। তারপরই সেই সঙ্গে শুরু করলো অপারেশন ক্লিন হার্ট। সেনাবাহিনী পাঠিয়ে পাঠিয়ে বিভিন্ন জায়গায় আক্রমণ এবং এক একজন নেতাকর্মী বা যাকে খুশি ধরে নিয়ে অমানবিক অত্যাচার।

একমাত্র আওয়ামী লীগই অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে পারে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, তা আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে পারি। মানুষের ভোটের অধিকার সংরক্ষণ করা, মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করা। সেটাই আমাদের লক্ষ্য। সেই কাজটাই আমরা করে যাচ্ছি। সেটাই করে যাব।

আওয়ামী লীগের আমলে হওয়া সব উপনির্বাচনই অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণ বারবার অনেক বাধা অতিক্রম করেও আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে। তার সুফল দেশের জনগণই পাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, ‘মাত্র সিটি করপোরেশন নির্বাচন হলো—বরিশাল, রাজশাহী, সিলেট, খুলনা ও গাজীপুর। এর মধ্যে গাজীপুরে আমরা হেরেছি। আর বাকি চারটাতে জিতেছি। এই নির্বাচন নিয়ে কেউ একটি প্রশ্ন তুলতে পেরেছে? আমরা সেখানে ভোট চুরি করি নাইতো। এত শান্তিপূর্ণ নির্বাচন বাংলাদেশে আগে কখনো হয়েছে? ঢাকায় সিটি নির্বাচন হয়েছিল ১৯৯৩ সালে। মোহাম্মদ হানিফ জিতেছিল। এরপর লালবাগে বিএনপি গুলি করে আওয়ামী লীগের ৬ নেতা–কর্মীকে হত্যা করেছিল। সেই কথা আমাদের ভুলে গেলে চলবে না। প্রত্যেকটা নির্বাচনেতো এ রকম সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করেছে।’

সরকারপ্রধান বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করে সামরিক শাসকরা। বিএনপি তাদের শাসনামলে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের রাজত্ব কায়েম করেছিল। বিএনপির মানুষ পুড়িয়ে মারার অপরাধ এখনো ভোলেনি। আর তাদের কাছে গণতন্ত্রের কথা শুনতে হবে?

তিনি বলেন, যারা খুনিদের দায়মুক্তি দেয়, আর কিছু দেশ তাদের পক্ষে কথা বলে কীভাবে?

যাদের নিজেদের দেশে মানুষ খুন হচ্ছে, মানবাধিকার নেই, তারা বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে কীভাবে প্রশ্ন তোলে-এমন প্রশ্ন তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিজেদের দেশের মানুষকে কীভাবে রক্ষা করবে সেই চিন্তা করা উচিত।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠান করেছি। অগ্নিসন্ত্রাস করেও গণতন্ত্র ধ্বংস করতে পারেনি। আওয়ামী লীগ আছে বলেই দেশে গণতন্ত্র আছে। মানুষ নৌকায় ভোট দিয়েছিল বলেই স্বাক্ষরতার হার বেড়েছে, দেশের সার্বিক উন্নতি হয়েছে।

শেয়ার করুন