একদফার অবস্থান থেকে বেরিয়ে সমঝোতা জরুরি

মোহাম্মদ সজিবুল হুদা

আওয়ামী লীগ-বিএনপি
ফাইল ছবি

রাজধানী ঢাকায় বুধবার (১২ জুলাই) শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে দেশের বৃহৎ দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমাবেশ। তবে সমাবেশ স্থল থেকে দল দুটি যে ঘোষণা দিয়েছে, সেই ঘোষণা থেকে কোনো পক্ষ-ই যদি সরে না আসে, তাহলে আগামী দিনগুলোতে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হওয়ার পাশাপাশি সহিংস রূপ ধারণ করতে পারে বলে মনে করছেন রাজনীতি বিশ্লেষক মহল।

সেদিন বিকেলে নয়াপল্টনের সমাবেশ থেকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরকারের পদত্যাগের ‘একদফা’ দাবিতে আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছেন। অন্যদিকে, বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ আয়োজিত শান্তি সমাবেশে দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের শেখ হাসিনার সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিয়েছেন। দ্বাদশ নির্বাচনকে ঘিরে দলের পক্ষ থেকে এটাই তাদের একদফা বলে জানিয়েছেন তারা। আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে একই ইস্যুতে দেশের বড় দুই দলের পরস্পর বিপরীত অবস্থান স্বাভাবিকভাবেই দেশে রাজনৈতিক পরিবেশ প্রবলভাবে উত্তপ্তের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

বায়তুল মোকাররমের সামনে ও নয়াপল্টনে যথাক্রমে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে পুরো এলাকা জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছিল। জনসমাবেশ ঘটিয়ে দুই দলই দেশবাসীর কাছে নিজেদের শক্তিমত্তা জানান দিতে চেয়েছে। ঢাকার সবচেয়ে ব্যস্ততম এলাকায় মাত্র দেড় কিলোমিটার দূরত্বে বৃহৎ দুই দলের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হলেও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি, এটি নিঃসন্দেহে স্বস্তিদায়ক। গণতন্ত্রের বিকাশের স্বার্থে এই ধারা অব্যাহত রাখা জরুরি। যদিও ধারণা করা যায়, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দুটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন প্রতিনিধিদল ঢাকায় অবস্থান করছে বলেই দুদলের এই শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান।

আমরা মনে করি, বাইরের কোনো রাষ্ট্র বা সংস্থার চাপের কারণে নয়, আমাদের আত্মমর্যাদা বাড়ানোর স্বার্থে স্ব-উদ্যোগেই সহনশীলতার রাজনীতির চর্চা করতে হবে। সমাবেশে আগামী সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বৃহৎ দল দুটি যে অবস্থান নিয়েছে, তা পরিস্থিতি সহিংস করে তোলার ঝুঁকি বাড়িয়েছে। অতীতেও বিভিন্ন কারণে এবং ক্ষমতার পালাবদলের প্রেক্ষাপটে দেশজুড়ে সহিংস রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। মাসের পর মাস হরতাল-অবরোধের নামে পেট্রোল বোমা মেরে বহু মানুষকে হত্যা করা হয়েছে।

ঐসময়ে সারাদেশে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে যে পরিমাণ ব্যক্তিগত ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস হয়েছিল, তার নেতিবাচক প্রভাব আমাদের অর্থনীতিতে ব্যাপকভাবে পড়েছিল। সুতরাং নতুন কোনো কর্মসূচি নেওয়ার পূর্বে প্রতিটি রাজনৈতিক দলেরই মনে রাখতে হবে, দেশের অর্থনীতি বর্তমানে নানা সংকটে রয়েছে। রাজনৈতিক সহিংসতা এ সংকটকে আরও ঘনীভূত করে তুলতে পারে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। তবে একথা সত্য যে, রাজনৈতিক সংকট দূর করার জন্য আগামী নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হওয়া প্রয়োজন। এক্ষেত্রে নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে যে বিতর্ক চলছে তার অবসান হওয়া প্রয়োজন। সুতরাং দেশ ও জনস্বার্থে সরকার ও বিরোধী দুপক্ষই একদফার অবস্থান থেকে বেরিয়ে এসে সংলাপের টেবিলে বসবে; এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

লেখকঃ জ্যেষ্ঠ সহ-সম্পাদক, মত ও পথ।

শেয়ার করুন