নগদ মিথ্যা কথা বলা ছাড়া আওয়ামী লীগের কোন অর্জন বা অগ্রগতি নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী মিথ্যা বলতে বলতে সত্য বলাই ভুলে গেছেন। আওয়ামী লীগের একমাত্র সাধনা ক্ষমতা অর্জন। ক্ষমতা লাভের আগে অথবা পরে কোনো সময়ই তারা ন্যায়নীতির নির্দেশ গ্রাহ্য করে না। গণতান্ত্রিক অধিকার হরণের বিরুদ্ধে হাস্যকরভাবে অসত্য কথা বলে প্রধানমন্ত্রী জনগণকে বোকা ও অবুঝ ভেবে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করলেও জনগণ এটাকে কোনো ভাবেই বিশ্বাস করবে না।
শনিবার বিকালে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, ‘সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য মরিয়া। সেজন্য আওয়ামী লীগ ‘পোড়া মাটি নীতি’ অবলম্বন করেছেন। সরকার বিগত ১৫ বছর প্রকৃত রাজনীতি না করে সন্ত্রাসীদের লালন পালন করেছেন। সন্ত্রাসকে নানামূখী ও বৈচিত্রময় করেছেন। শুধু দলীয় ক্যাডাররাই নয়, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে সন্ত্রাসী আক্রমণের উপযোগী করে গড়ে তুলেছেন।’
‘ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল প্রায় প্রতিদিনই বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মী ও ভিন্ন মতের মানুষ প্রাণহানীসহ পঙ্গুত্ব বরণ করেছে। তাদের সহিংস আক্রমণে কেউ বা হাত-পা হারাচ্ছেন, কেউ বা চোখ হারাচ্ছেন।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘গণতন্ত্র মানে শেখ হাসিনা মনে করেন, ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য সন্ত্রাসী ও পুলিশদের দ্বারা জনগণকে লাঠিপেটা করা। অবৈধ প্রধানমন্ত্রী মনে করেন, নিজ দলীয় দাগী সন্ত্রাসী যারা বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়ে রক্তাক্ত করে তাদের কবিরা গুনাহও মাফ হয়ে যায়। বাংলাদেশের নিজস্ব ভূমিতে ক্ষমতাসীনরা সর্বশক্তি নিয়োগ করে গণতন্ত্রের শিকড় উপড়ে ফেলেছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো কন্ঠরুদ্ধ করার নানা কালো আইন, গুম, অপহরণ, বিচার বহির্ভূত হত্যার অমানবিক নিষ্ঠুরতা সীমাহীন আবর্তের মধ্যে দেশকে ঠেলে দেয়া হয়েছে।’
রিজভী বলেন, ‘শিশু ও কিশোর-কিশোরী অসংখ্য ছাত্রছাত্রী তরুণ তরুণী ও লেখক সাংবাদিক শুধু ভিন্ন মত প্রকাশের জন্য মাসের পর মাস, বছরের পর বছর দানবীয় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কারাগারে বন্দী রয়েছেন। কিশোরী খাদিজা প্রায় বছর খানেক ধরে কারাগারে ভীষণ অসুস্থ অবস্থায় মানবেতর জীবন যাপন করছেন। অথচ সে জামিন ও চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বাংলাদেশকে এখন এমন একটি রাষ্ট্রে পরিণত করা হয়েছে যেখানে শেখ হাসিনার হুকুম ছাড়া জামিনও মেলে না। এখানে হাইকোর্টের জামিনও সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ স্থগিত রাখে। এটি বিশে^ নজীরবিহীন। যত উচ্চ আদালতে আবেদন করা যায় ততই ভুক্তভোগী মানুষ নিস্কৃতি পায়, শুধুমাত্র বাংলাদেশই ব্যতিক্রম।’
রিজভী আরও বলেন, ‘আওয়ামী সরকার আর কোনো অবলম্বন খুঁজে পাচ্ছে না। ওবায়দুল কাদের সাহেবরা তাই মিথ্যার সংস্কৃতি নির্মাণ করে তাদের নেতাকর্মীকে সাহস যোগানোর ব্যর্থ চেষ্টা করছেন। সারাদেশের মানুষ শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে সারাজাতি ঐক্যবদ্ধ। রাষ্ট্রের দমনযন্ত্রের প্রয়োগ আর কোন কাজে লাগবে না। এবার জনগণ স্বৈরাচারী দানবকে বোতলবন্দী করবেই। আমরা সরকারের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, হত্যা, হিংসা-হানাহানির পথ থেকে সরে আসুন। যারা বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে নারকীয় আক্রমণ চালাচ্ছেন তাদের স্থির চিত্র, ভিডিও চিত্র মানুষের হাতে হাতে। কোন অপরাধীই বিনা বিচারে পার পেয়ে যায় না। বাংলাদেশে সরকারী মদদপুষ্ট ঘৃন্য দুস্কৃতিকারিদের বিচার হবেই।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির চেয়ারপারসনের আব্দুস সালাম, আবুল খায়ের ভূইয়া, যুগ্ম-মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফৎ আলী সপু, ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুল মজিদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।