ঢাকা-১৭ আসনের উপ-নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলমের ওপর হামলার ঘটনায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ঘটনাটির গুরুত্ব অনুধাবন করে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠনের পথে এগোচ্ছে কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন কমিশন।
ইসি সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠনের প্রস্তাবটি নির্বাচন কমিশনের অনুমোদন পেলে সরকারের কাছে প্রস্তাবনা আকারে পাঠানো হবে। একজন বিচারকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের এ কমিটি হতে পারে।
এ বিষয়ে ইসির অতিরিক্ত সচিব জানান, স্বতন্ত্র প্রার্থীর ওপর হামলার ঘটনা তদন্তে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি সংক্রান্ত ফাইল কমিশনের অনুমোদনের অপেক্ষায়। বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটির গঠন করবে সরকার। এজন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে কমিশনের প্রস্তাবনা পাঠানো হবে। এরপর সরকারই এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে পাঠানো চিঠিতে ইসি জানায়, গত ১৭ জুলাই একাদশ জাতীয় সংসদের ঢাকা-১৭ আসনের উপ-নির্বাচনের ভোটগ্রহণের দিন বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রের বাইরে সংসদ সদস্য পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলমের ওপর কতিপয় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি হামলা চালায়। এ ঘটনার কারণ নির্বাচনী দায়িত্বপ্রাপ্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা ও দায়-দায়িত্ব নির্ধারণসহ বর্ণিত ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্তপূর্বক যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার লক্ষ্যে এবং বর্ণিত বিষয়ে করণীয় সংক্রান্ত সুপারিশ প্রদান করার নিমিত্তে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারকের সমন্বয়ে এক সদস্যবিশিষ্ট বা একজন সিনিয়র জেলা জজের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করা সমীচীন ও প্রয়োজন। এ মর্মে নির্বাচন কমিশন সদয় অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
এ অবস্থায়, The Commissions of Inquiry Act, 1956 এর অধীনে এ বিষয়ে একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বিনীতভাবে অনুরোধ করা হয়েছে চিঠিতে।
গত ১৭ জুলাই ঢাকা-১৭ আসনের উপ-নির্বাচনের ভোটের দিন বিকেলে বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে পরিদর্শনে গিয়ে হামলার শিকার হন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিরো আলম। এ হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে জড়িতদের জবাবদিহির আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছে ঢাকায় ১২টি দেশের মিশন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
হামলার দুদিন পর গতকাল বুধবার এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা ১৭ জুলাই ঢাকা-১৭ আসনের প্রার্থী আশরাফুল আলমের (হিরো আলম নামে পরিচিত) ওপর হামলার নিন্দা জানাই। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সহিংসতার কোনো স্থান নেই। আমরা ওই ঘটনার পূর্ণ তদন্ত ও দোষীদের জবাবদিহির আওতায় আনার আহ্বান জানাই। আসন্ন নির্বাচনগুলো যেন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয়, সেটি নিশ্চিত করতে হবে সবাইকে।
বিবৃতিদাতা জোট ও দেশগুলো হলো- যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, কানাডা, ডেনমার্ক, ইতালি, নেদারল্যান্ড, নরওয়ে, স্পেন, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড এবং ঢাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
এদিকে একই দিন বুধবার আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের বৈঠকে আলোচনায় উঠে আসে হিরো আলমের ওপর হামলার বিষয়টি। হামলাকারীদের শাস্তির নিশ্চয়তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিয়েছেন বলে জোট নেতারা জানান। ওইদিন গণভবনে শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ১৪ দলের বৈঠকে অংশ নেওয়া একাধিক নেতা বলেছেন, হিরো আলমকে মারধরের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন শেখ হাসিনা। হিরো আলমের ওপর হামলার পেছনে কাদের ‘ইন্ধন’ ছিল, হামলার উদ্দেশ্য কী, সেসব তথ্যের সন্ধান করছে সরকার।
এদিকে হামলার ঘটনায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, যারা হামলা করেছেন, ভিডিও ফুটেজ দেখে তাদের সবাইকে গ্রেফতার করা হবে। এ ঘটনায় ৯ জনকে গ্রেফতারের কথা জানিয়েছে পুলিশ।
অন্যদিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালও হামলায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পুলিশ কমিশনারকে নির্দেশ দিয়েছেন।