নাটকীয় ধসে ভারতের কাছে সেমিফাইনালে বাংলাদেশের হার

ক্রীড়া ডেস্ক

২১১ রানে থামিয়েও ভারত ‘এ’ দলকে হারাতে পারেনি বাংলাদেশ ‘এ’ দল। শ্রীলঙ্কার প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে ইমার্জিং এশিয়া কাপের সেমিফাইনাল ম্যাচে ভারতীয় স্পিনের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি সাইফ হাসানের দল।

রান তাড়ায় দুর্দান্ত শুরুর পরও মাঝের ওভারে ৬৬ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে ১৬০ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ ‘এ’ দল। শেষ পর্যন্ত ৫১ রানের জয়ে ইমার্জিং এশিয়া কাপের ফাইনালে জায়গা করে নিল ভারত। আগামী রোববার পাকিস্তান ‘এ’ দলের বিপক্ষে শিরোপার লড়াইয়ে নামবে ভারত। আজ শুক্রবার দিনের আরেক সেমিফাইনালে শ্রীলঙ্কা ‘এ’ দলকে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছে পাকিস্তান।

জিততে হলে দরকার ছিল ২১২ রান। এমন ম্যাচে পাওয়ার-প্লেতেই যদি ৬০ রান চলে আসে, তাহলে আর কী চাই! আজ মোহাম্মদ নাঈম ও তানজিদ হাসানের পাওয়ার-প্লে ব্যাটিংটা ছিল এমনই। শুরুটা হয় নাঈমের বিস্ফোরক ব্যাটিং দিয়ে। ইনিংসের প্রথম ১০ বলেই ৫টি চার মারেন তিনি। পরে যোগ দেন আরেক ওপেনার তানজিদ। তিনিও পাওয়ার-প্লেতে ৫টি বাউন্ডারিতে নিজের স্ট্রাইক রেট বাড়িয়ে নেন। দুজনের ইনিংসের দারুণ সূচনায় রান তাড়ার কাজটা সহজ হওয়ার কথা ছিল।

কিন্তু তা হয়নি। বল যত পুরোনো হয়েছে, ব্যাটিং তত কঠিন হয়েছে। বিশেষ করে স্পিনের বিপক্ষে। অসম বাউন্স ছিলই, সঙ্গে শার্প টার্নও। আর রান তাড়ার চাপ তো ছিলই। ভারতীয়রা সে সুবিধাটা কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের রানের গতি কমিয়ে আনে। তাতে নিয়মিতই উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ ‘এ’ দল। নাঈম ৪০ বলে ৩৮ রান করে মানব সুতারের বল ড্রাইভ করতে গিয়ে স্টাম্পে টেনে আনেন। তানজিদ অবশ্য আউট হওয়ার আগে ফিফটি করেছেন।

নিশান্ত সিন্ধুর বলে লফটেড ড্রাইভ খেলতে গিয়ে মিড অফে ক্যাচ তোলেন তিনি ৫৬ বলে ৫১ রান করে। দলের রান তখন ১৭.৩ ওভারে ৯৪। সেখান থেকে ইনিংস পুনর্গঠনের কাজ হয়নি আর। উল্টো মুখ থুবড়ে পড়ে বাংলাদেশের ইনিংস, ৬৬ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে ৩৪.৩ ওভারে ১৬০ রানে অলআউট তারা।

দুই ওপেনারের বিদায়ের পর জাকির হাসান (৫) মানবের বাঁহাতি স্পিনে সুইপ করতে গিয়ে এলবিডব্লুর ফাঁদে পড়েন। অধিনায়ক সাইফ স্পিনের বিপক্ষে আক্রমণাত্মক হওয়ার চেষ্টা করলেও ৪টি বাউন্ডারিতে ২৪ বলে ২২ রান করে আউট হন অভিষেকের বাঁহাতি স্পিনে। সৌম্য সরকারের (৫) ইনিংসও থামে স্পিনে।

এবার যুবরাজসিন ডড়িয়ার অফ স্পিনে ফরোয়ার্ড ডিফেন্স করতে গিয়ে স্লিপে ক্যাচ তোলেন সৌম্য। লাফিয়ে সে ক্যাচ ধরেন নিকিন জোসে। এক ওভার পর দিনের তৃতীয় ক্যাচটি নেন নিকিন। সিন্ধুর বল আকবর আলীর (২) ব্যাট-প্যাড হয়ে যায় সিলি পয়েন্টেতে দাঁড়ানো নিকিনের হাতে। বাংলাদেশের ষষ্ঠ উইকেটের পতন ঘটে তাতে।

মেহেদী হাসান ও রাকিবুল হাসানও আসা-যাওয়ার মিছিলে যোগ দেন এরপর। অন্য প্রান্ত থেকে একের পর এক উইকেট পতন যিনি দেখছিলেন, সেই মাহমুদুল হাসানও পয়েন্টে ক্যাচ তুলে বিদায় নেন। তাঁর ব্যাট থেকে আসে ২০ রান। বাংলাদেশের রানটা তাতে দেড় শ ছাড়ায়। ভারতের হয়ে ৮ ওভারে মাত্র ২০ রান দিয়ে সর্বোচ্চ ৫ উইকেট নেন সিন্ধু।

স্পিন যে ম্যাচে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে, সেটি টের পাওয়া গিয়েছিল প্রথম ইনিংসেই। স্পিন দিয়ে ভারতীয়দেরও চাপে রেখেছিল বাংলাদেশ ‘এ’ দল। টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই মেহেদী ছিলেন নতুন বলে মিতব্যয়ী। আজও তিনি রান থামিয়ে রাখায় বাংলাদেশ দলের বোলিং ইনিংসের শুরুটা ভালো হয়। যা অন্য প্রান্তের বোলারদের আক্রমণাত্মক বোলিং করতে সাহায্য করেছে। আজ সে সুযোগ নিয়ে ওপেনার সাই সুদর্শনের উইকেট শিকার করেন পেসার তানজিম হাসান।

এরপর দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে অভিষেক শর্মার সঙ্গে নিকিনের জুটিতে ভারতের ইনিংস এগোতে থাকে। দুজনের ৪৬ রানের জুটিতে ছিল বিতর্কও। রাকিবুলের করা ইনিংসের ১৪তম ওভারে নিকিনের একটি স্টাম্পিং আউট দিলেও পরে সিদ্ধান্ত বদলে ফেলেন টেলিভিশন আম্পায়ার। নিকিনের ইনিংস অবশ্য দীর্ঘ হয়নি। ৯ রানে থাকা অবস্থায় সেই বিতর্ক তৈরি হওয়ার পর ১৭ রান করেই অধিনায়ক সাইফ হাসানের বলে জাকির হাসানের হাতে ক্যাচ দেন তিনি। ইনিংসের ১৯তম ওভারের ঘটনা এটি।

এরপরের ওভারেই রাকিবুলের বলে তানজিমের হাতে ক্যাচ দেন অভিষেক শর্মা (৩৪)। ভারতীয়দের আসা-যাওয়ার শুরুটা হয় তখন থেকেই। চারে নামা অধিনায়ক যশ ধুলের ৮৫ বলে ৬৬ রান ছিল ভারত ‘এ’ দলের ইনিংসের সর্বোচ্চ। ৬টি চারে সাজানো ধুলের ইনিংসের সৌজন্যে ভারতের রান দুই শ পার হয়। ভারতের জয়ের যথেষ্ট হয়ে দাঁড়ায় সেটিই।

শেয়ার করুন