আশ্রয়শিবির পরিদর্শনে ইইউর প্রতিনিধিদল, রোহিঙ্গারা তুলে ধরলেন নিপীড়নের বর্ণনা

কক্সবাজার প্রতিনিধি

রোহিঙ্গা
রোহিঙ্গা। সংগৃহীত ছবি

কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবির পরিদর্শন করেছে বাংলাদেশ সফরে আসা ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদল। এ সময় কয়েকজন রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদলের কাছে রাখাইন রাজ্যে তাঁদের ওপর হওয়া নিপীড়ন–নির্যাতনের বর্ণনা তুলে ধরেন। একই সঙ্গে প্রত্যাবাসন নিয়ে বিভিন্ন দাবিদাওয়ার কথাও জানান তারা।

আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকা থেকে উড়োজাহাজে করে প্রতিনিধিদলের সদস্যরা কক্সবাজার বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান। সেখান থেকে সড়কপথে তাদের নেওয়া হয় উখিয়ার মধুরছড়া (ক্যাম্প-৪) আশ্রয়শিবিরে। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে প্রতিনিধিদলের সদস্যরা আশ্রয়শিবিরে পৌঁছলে তাদের ফুল দিয়ে বরণ করা হয়। প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ইইউর মানবাধিকারবিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি ইয়ামোন গিলমোর।

universel cardiac hospital

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয় ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রতিনিধিদলটি ক্যাম্প-৪ ও ক্যাম্প-১৮ আশ্রয়শিবিরে জাতিসংঘের উদ্বাস্তুবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর পরিচালিত রোহিঙ্গাদের নিবন্ধন কার্যক্রম, ইউনিসেফ পরিচালিত লার্নিং সেন্টার, রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা কার্যক্রম, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) পরিচালিত ই–ভাউচার সেন্টার পরিদর্শন করেন। বেলা ১টার দিকে ক্যাম্প-৪ আশ্রয়শিবিরে ইউএনএইচসিআরের কমিউনিটি সেন্টারে অন্তত ১৫ জন রোহিঙ্গা নারী-পুরুষের সঙ্গে মতবিনিময় করেন প্রতিনিধিদলের সদস্যরা।

বৈঠকে অংশ নেওয়া একজন রোহিঙ্গা নেতা বলেন, বৈঠকে রাখাইন রাজ্যে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পরের কয়েক মাসে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দমনপীড়ন, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, সম্পদ লুটের বিবরণ তুলে ধরা হয়। পাশাপাশি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়েও কথা ওঠে। রোহিঙ্গারা সেখানে বলেন, চীনের মধ্যস্থতায় কিছুদিন ধরে পাইলট প্রকল্পের আওতায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর চেষ্টা চলছে। কিন্তু রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার পরিবেশ এখনো তৈরি হয়নি। ফিরে যাওয়ার আগে রোহিঙ্গারা প্রথমে মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি চান। তারপর মর্যাদাপূর্ণ, টেকসই ও ইউএনএইচসিআরের মধ্যস্থতায় রোহিঙ্গারা ফিরতে আগ্রহী।

আশ্রয়শিবিরে রোহিঙ্গা নেতা কামাল আহমদ বলেন, সম্প্রতি আশ্রয়শিবিরে খুনখারাবি-অপহরণ, চাঁদাবাজি বেড়ে গেছে। সাধারণ রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের কয়েকটি সশস্ত্র গোষ্ঠীর কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। আশ্রয়শিবিরগুলোতে বিশেষ সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের কথাও জানানো হয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতাদের। তারা এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলার আশ্বাস দিয়েছেন।

বেলা দেড়টার দিকে ইইউর প্রতিনিধিদল আশ্রয়শিবিরের আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা-আইওএম পরিচালিত রোহিঙ্গাদের কালচারাল সেন্টার পরিদর্শন করেন।

প্রতিনিধিদলে রয়েছেন, ইউরোপিয়ান এক্সটার্নাল অ্যাকশন সার্ভিসের (ইইএএস) রাজনৈতিক উপদেষ্টা ভিক্টর ভেলেক, ঢাকায় ইইউর রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলিও ফার্স্ট সেক্রেটারি (রাজনৈতিক) সেবাস্টিয়ান রিগার-ব্রাউন ও বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মানবিক কর্মসূচির তত্ত্বাবধানকারী আনা অরল্যান্ডিনি।

শেয়ার করুন