বিভিন্ন রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ বা বিক্ষোভ, কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি পুরোনো ছবি-ভিডিও বা খবরের স্ক্রিনশট শেয়ারের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। গত ২৮ ও ২৯ জুলাই সরকারি ও বিরোধী দলগুলোর পাল্টাপাল্টি সমাবেশের ঘটনায়ও এমনটিই দেখা গেছে। সামাজিক মাধ্যমে পুরোনো খবরের স্ক্রিনশট অথবা পুরোনো ছবি ও ভিডিওকে সাম্প্রতিক বলে প্রচার করেছেন অনেকে। ডিসমিসল্যাবের যাচাইয়ে এমন অন্তত আটটি নজির পাওয়া গেছে, যা একাধিক দায়িত্বশীল ব্যক্তিও শেয়ার করেছেন।
সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একটি পোস্টে বিএনপি নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের রক্তাক্ত ছবি শেয়ার করে দাবি করা হয়েছে যে, সেটি সাম্প্রতিক সময়ের বা ২৯ জুলাইয়ের। কিন্তু গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের এই রক্তাক্ত ছবিটি আসলে তোলা হয়েছিল ২০১৮ সালে, কেরানীগঞ্জে বিএনপির গণসমাবেশ চলাকালে।
‘বিএনপি নিউজ’সহ আরও কিছু ফেসবুক পোস্টে জেরার মুখে বাসে আগুন লাগানোর কথা স্বীকার করে এক কিশোর নিজেকে ছাত্রলীগের সদস্য দাবি করছে— এমন একটি ভিডিও সম্প্রতি ছড়াতে দেখা গেছে। তবে ভিডিওটি অন্তত চার বছর আগের। সামাজিক মাধ্যমে ভিডিওটি পাওয়া যায় ২০১৯ সালের ১৯-২০ মার্চ থেকে। মূলত সে বছরের ১৯ মার্চ আবরার আহমেদ চৌধুরী নামের এক বিশ্ববিদ্যালয়শিক্ষার্থীর সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ার জেরে যে আন্দোলন হয়েছিল, ভিডিওটি ছিল সেই সময়ে ধারণ করা।
এর বাইরে ‘বাসে আগুনের চেষ্টা, ছাত্রলীগের ৩ নেতাকর্মী আটক’ শিরোনামে প্রথম আলো পত্রিকায় ২০১৪ সালে প্রকাশিত একটি সংবাদকে বিএনপির সাম্প্রতিক কর্মসূচির খবর বলে প্রচার করা হচ্ছে। মূলত ২০১৪ সালে মাগুরায় একটি বাসে আগুন দিতে গিয়ে গ্রেপ্তার হন তারা। প্রথম আলো এক বিবৃতিতে এটিকে ‘মিথ্যা প্রচারণা’ বলে নিশ্চিত করেছে।
এর আগে ২৮ জুলাই বিএনপির মহাসমাবেশ চলাকালে ঢাকার নয়াপল্টনে এক পুলিশ কর্মকর্তা একজন সাংবাদিককে ছবি তুলতে বাধা দিচ্ছেন, এমন একটি ছবিও বেশ কয়েকটি (১, ২, ৩) পোস্টে ছড়াতে দেখা গেছে। তবে যাচাইয়ে দেখা যায়, ছবিটি তোলা হয়েছিল ২০১৮ সালে পল্টনে বিএনপি অফিসের সামনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির বিক্ষোভ চলাকালে। সেখানে বাংলা টিভির প্রতিবেদক আরমান কায়সার ও ক্যামেরাম্যান মানিককে ছবি তুলতে বাধা দিয়েছিলেন ঢাকা মহানগর পুলিশের মতিঝিল বিভাগের তৎকালীন ডেপুটি কমিশনার আনওয়ার হোসেন।
সাম্প্রতিক সময়ে ভারতেও একই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। ভারতের মণিপুরে চলমান জাতিগত সংঘাতেও পুরোনো ভিডিও ও ছবি ছড়াতে দেখা গেছে, যেগুলো ইতিমধ্যে ভারতের মূলধারার গণমাধ্যম ও তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান দ্বারা চিহ্নিত হয়েছে। যেমন একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, কুকিদের শারীরিকভাবে আঘাত করছেন একজন পুলিশ সদস্য। কিন্তু তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান বুম দেখেছে, ভিডিওটি গত বছর ধারণ করা হয়েছিল। সেখানে দেখা যায়, মণিপুরের বিধানসভা নির্বাচনের সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী একটি রাজনৈতিক দলের কর্মীকে প্রহার করছে।
ভারতের সামাজিক মাধ্যমে চার্চে আগুন জ্বলছে, এমন ভিডিও প্রচার করে বলা হয়েছিল ক্ষমতাসীন বিজেপি এই কাজের সঙ্গে জড়িত। কিন্তু সেখানকার ফ্যাক্টচেকাররা নিশ্চিত করেছে, ভিডিওটি আসলে ফ্রান্সের। একইভাবে মণিপুরের কুকিদের বিরুদ্ধে মেইতেই জনগোষ্ঠী মিছিল করছে—এমন একটি ছবি যাচাই করে দেখা যায়, সেটি ছিল মূলত একটি মাদকবিরোধী মিছিল।