বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নকে (ইইউ) হস্তক্ষেপ না করতে হুঁশিয়ার করেছেন ১৪-দলীয় জোটের অন্যতম শীর্ষ নেতা ও ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। তিনি বলেছেন, ‘তারা (যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ) তাদের সীমা লঙ্ঘন করছে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে বারবার হস্তক্ষেপ করছে। হুঁশিয়ার করে বলতে চাই, আমেরিকা, তোমরা থামো। বাংলাদেশে হস্তক্ষেপ কোরো না। নির্বাচন তোমাদের দেশেও হয়েছে, তোমাদের নির্বাচন সামলাও। আমাদের নির্বাচন আমরা সামলাব।’
‘বিএনপির অগ্নিসন্ত্রাস ও নৈরাজ্য সৃষ্টির’ প্রতিবাদে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের সমাবেশে রাশেদ খান মেনন এসব কথা বলেন। আজ বুধবার বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে এই সমাবেশ হয়।
বিএনপি-জামায়াতকে ইঙ্গিত করে রাশেদ খান মেনন বলেন, তারা জনগণের ওপর নির্ভর করে নয়, বরং জনগণকে জিম্মি করে ক্ষমতায় যেতে চায়। সেখানে তারা নির্ভর করছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের ওপর।
এই সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ১৪-দলীয় জোটের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমু। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এটা তাদের সহ্য হচ্ছে না। তাই বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে তারা অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে চায়।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে আমির হোসেন বলেন, এ দেশে সাংবিধানিক ধারা অব্যাহত থাকবে। সংবিধানের বাইরে অসাংবিধানিক কোনো ধারা, অসাংবিধানিক কোনো পন্থার এই দেশে স্থান নেই। আগামী নির্বাচনে নৌকার জয় হবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বিএনপি-জামায়াত ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে দেশে অসাংবিধানিক ধারা তৈরি করতে চায় বলে মন্তব্য করেন সমাবেশে সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা কেবল দেশের জনগণের দ্বারা সমর্থিত নয়, বিদেশি শক্তি কর্তৃকও সমর্থিত। শুধু মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ একা বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করছে না, আরও অনেক শক্তি আছে।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সাধারণ সম্পাদক শিরিন আখতার বলেন, বাংলাদেশ তার সংবিধান অনুযায়ী চলবে। সংবিধানের ধারাবাহিকতায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নির্বাচনকালীন সরকার থাকবে। একই সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
১৪ দলের এই সমাবেশে শতাধিক নেতা-কর্মী নিয়ে যোগ দেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ। এ সময় তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত বাংলাদেশের সাংবিধানিক নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য পুনরায় আগুনসন্ত্রাসে মত্ত হয়েছে। যেকোনো মূল্যে এই অপশক্তির নীলনকশাকে প্রতিহত করব।
সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারীর ছেলে সৈয়দ তৈয়বুল বশর মাইজভান্ডারী, জাতীয় পার্টির (জেপি) সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল খায়ের সিদ্দিকী, গণতান্ত্রিক পার্টির সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন, গণ আজাদী লীগের সভাপতি এস কে সিকদার, মজদুর পার্টির সভাপতি জাকির হোসেন প্রমুখ। ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশাও উপস্থিত ছিলেন।
মার্কিন রাষ্ট্রদূতের আচরণ চরম ঔদ্ধত্যপূর্ণ
‘বাংলাদেশের রাজনীতি ও নির্বাচন নিয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের আচরণ সীমা অতিক্রম করেছে। সর্বশেষ গতকাল (মঙ্গলবার) প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে আলোচনায় বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা ও তাদের গৃহীত বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূত যেভাবে প্রশ্ন করেছেন, তা জবাবদিহি চাওয়ার শামিল এবং যেকোনো বিচারেই চরম ঔদ্ধত্যপূর্ণ।’
বুধবার বিকেলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে দলের এমন বক্তব্যের বিষয়টি গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরো সভার সদস্য কামরুল আহসান। আজ দলের সভাপতি রাশেদ খান মেননের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত পলিটব্যুরো সভায় ওয়ার্কার্স পার্টির নেতারা এ অভিমত প্রকাশ করেন।