পার্বত্য তিন পৌরসভায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার প্রকল্প

মত ও পথ ডেস্ক

পার্বত্য তিন পৌরসভার উন্নয়নে প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করেছে সরকার। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে রাঙামাটি পৌরসভা, বান্দরবান পৌরসভা ও লামা পৌরসভা এলাকায় বিশুদ্ধ পানি সরবরাহব্যবস্থা ও স্যানিটেশনসহ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পরিষেবা নিশ্চিত করে এখানকার মানুষের স্বাস্থ্য ও জীবনযাত্রার মান উন্নত করা হবে।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে নেওয়া প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

universel cardiac hospital

এদিকে স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, রাঙামাটি, বান্দরবান ও লামা পৌর এলাকার মানুষের স্বাস্থ্য ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করতে ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে সমন্বিত ও টেকসই পৌর পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন’ শীর্ষক প্রকল্পটি গ্রহণ করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। প্রকল্পটির প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ১৯৬ কোটি ২৮ লাখ ৯৯ হাজার টাকা। এর মধ্যে সরকার নিজস্ব অর্থায়ন করবে ১৮৩ কোটি ৬২ লাখ ৪৯ হাজার টাকা। এ ছাড়া বাকি ১ হাজার ১২ কোটি ৬৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা প্রকল্প ঋণ ও অনুদান বাবদ দেবে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক এডিবি।

সম্প্রতি (১৮ জুলাই) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে প্রকল্পটি অনুমোদন পেয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২৩ সালে শুরু হওয়া প্রকল্পটি ২০২৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর মেয়াদে বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানিয়েছে, প্রকল্পের আওতায় রাঙামাটি, বান্দরবান ও লামা (৬ এমএলডি) পৌরসভায় ভূ-উপরিস্থ পানি শোধনাগার নির্মাণ এবং বিদ্যমান পানি শোধনাগার পুনর্বাসন (পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ সহ) তিনটি, ১১টি জলাধার নির্মাণ (ছয়টি ওভার হেড, পাঁচটি ওভার গ্রাউন্ড) (গ) ২৩ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার সঞ্চালন পাইপলাইন স্থাপন, ৩৩৯ দশমিক ৩১ কিলোমিটার পানি বিতরণ পাইপলাইন ও ৭২ দশমিক ৩ কিলোমিটার রেটিকুলেশন পাইপলাইন স্থাপন, দুটি স্যানিটারি ল্যান্ডফিলসহ সমন্বিত বর্জ্য শোধনাগার নির্মাণ, টয়লেট নির্মাণ এবং কন্টেইনমেন্ট উন্নতকরণ ১ হাজার ৬৩৫টি, ১২৩টি জিপিএসসহ স্যানিটেশন এবং কঠিন বর্জ্য সংগ্রহের যানবাহন ও সরঞ্জামাদি সরবরাহ করা হবে।

এর বাইরেও এএমআই ওয়াটার মিটার এবং মিটারিং সিস্টেম সরবরাহ ৩২ হাজার ৩৫২টি ও চারটি যানবাহন কেনা হবে। প্রকল্পটি গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের আরএডিপিতে বৈদেশিক সাহায্যপ্রাপ্তির সুবিধার্থে অননুমোদিত নতুন প্রকল্প তালিকায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে বলে জানিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন।

কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে সমন্বিত ও টেকসই পৌর পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন’ শীর্ষক প্রকল্পটি সরকারের পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। সরকারের অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার অধ্যায়-৯-এর অনুচ্ছেদ ৯.৯.২-এ সবার জন্য নিরাপদ পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন নিশ্চিত করার বিষয়ে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া কঠিন ও পয়োবর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা এর পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন ফ্রেমওয়ার্ক (সংশোধিত এপ্রিল ২০২০) অনুযায়ী বাংলাদেশ ২০৩০ সালের মধ্যে ১০০ শতাংশ সেফলি ম্যানেজড পানি সরবরাহ ও হ্যান্ড আইজিনি সুবিধাদি প্রদান এবং ৮০ শতাংশ সেইফলি ম্যানেজজড সেনিটেশন ব্যবস্থা অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। প্রকল্পের কার্যাবলি উপর্যুক্ত উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সরাসরি অবদান রাখবে বিধায় প্রস্তাবিত প্রকল্পটি সরকারের অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ।

এদিকে একনেকের অনুমোদন প্রার্থনা করে পরিকল্পনা কমিশনের মতামতে বলা হয়েছে, প্রকল্পটির আওতায় নিরাপদ পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশনসহ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পরিষেবা নিশ্চিত করার মাধ্যমে রাঙামাটি, বান্দরবান ও লামা পৌর এলাকার মানুষের স্বাস্থ্য ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করা সম্ভব হবে। এ বিবেচনায় প্রকল্পটি অনুমোদনযোগ্য।

এমন পরিস্থিতিতে স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতায় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর কর্তৃক বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তাবিত প্রকল্পটি এক হাজার ১৯৬ কোটি ২৮ লাখ ৯৯ হাজার টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ২০২৩ সালের জুলাই থেকে ২০২৮ সালের ডিসেম্বর মেয়াদে বাস্তবায়নের নিমিত্ত একনেকের অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করা হলো।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী তাজুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, তিন পার্বত্য জেলার তিনটি পৌরসভা এলাকা দুর্গম হওয়ায় সেখানে বসবাসরত জনগোষ্ঠীর জন্য নিরাপদ পানি ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা একটি কঠিন কাজ ছিল। সরকার সেই সমস্যা নিরসনে প্রায় ১২০০ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করেছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে এই এলাকার মানুষের বিশুদ্ধ পানির বিষয়টি নিশ্চিত হবে।

একই সঙ্গে এই এলাকার স্যানিটেশনসহ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পরিষেবা নিশ্চিত করার মাধ্যমে তিন পৌর এলাকার মানুষের স্বাস্থ্য ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করা সম্ভব হবে বলে জানান মন্ত্রী।

শেয়ার করুন