ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির সদ্য ঘোষিত পাঁচ সদস্যের আংশিক আহ্বায়ক কমিটিকে বিতর্কিত ও অগ্রহণযোগ্য উল্লেখ করে সাতদিনের মধ্যে বিলুপ্ত ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। শুক্রবার বিকেল পাঁচটার দিকে শহরের নিউ মৌড়াইল এলাকায় সভা করে তারা এ আলটিমেটাম দেন। এর আগে বৃহস্পতিবার বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জেলা বিএনপির পাঁচ সদস্যের আংশিক আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়।
কমিটিতে জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি আবদুল মান্নানকে আহ্বায়ক এবং জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সিরাজুল ইসলামকে সদস্যসচিব করা হয়েছে। তারা দুজনই আগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ছিলেন। ঘোষিত কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও আগের কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য হাফিজুর রহমান মোল্লা, জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও আগের কমিটির সদস্য জহিরুল হক এবং সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নূরে আলম সিদ্দিকী।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের ১৩ নভেম্বর জিল্লুর রহমানকে আহ্বায়ক করে জেলা বিএনপির ৩১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় বিএনপি। কিন্তু আড়াই বছরে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে পারেনি আহ্বায়ক কমিটি। গত ২৯ মে ওই কমিটির আহ্বায়ক জিল্লুর রহমান (৭৫) মারা যান। এরপর থেকে আহ্বায়ক ছাড়াই চলছিল জেলা বিএনপি।
আগের আহ্বায়ক কমিটির গঠনের প্রায় তিন বছর পর দ্বিতীয় দফায় আবার আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন দিল কেন্দ্রীয় বিএনপি। যদিও বর্তমান আংশিক কমিটিতে আহ্বায়কের পদ পাওয়া আবদুল মান্নানকে নিয়ে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ কাজ করছে।
শুক্রবার বিকেল পাঁচটার দিকে শহরের নিউ মৌড়াইল এলাকায় সদ্য ঘোষিত কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণার দাবিতে সভা করেন জেলা বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। সদ্য ঘোষিত কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি হাফিজুর রহমান মোল্লার সভাপতিত্বে এবং সাবেক সাধারণ সম্পাদক জহিরুল হকের সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য দেন বিএনপির নেতা নিয়াজ আহমেদ, সদর উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলী আজম, জেলা যুবদলের সাবেক আহ্বায়ক মনির হোসেন, বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবদুর রহিম, জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি হাফিজ উদ্দিন, সহসভাপতি আজহার হোসাইন চৌধুরী প্রমুখ। এ ছাড়া সভায় জেলা বিএনপির আগের কমিটির সদস্য গোলাম সারওয়ার, এ বি মমিনুল হক, শফিকুল ইসলাম, আনিসুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
সভায় বক্তারা বলেন, বিএনপির গত ১৫ বছরের আন্দোলন-সংগ্রামে কখনো আবদুল মান্নানকে দেখেননি। তিনি আইনজীবী হলেও বিএনপির নেতাদের পক্ষে কোনোদিন আদালতে দাঁড়াননি। বিএনপির রাজনীতির জন্য তিনি কোনো দিন মাঠে নামেননি, জেলে যাননি। তার নেতৃত্বে তারা বিএনপি করবেন না। তারা বলেন, সদর উপজেলার আবদুর রহমান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ব্যক্তিগত সহকারী। তার বড় ভাই কবির আহমেদ ভূঁইয়া আখাউড়া উপজেলা ছাত্রলীগের সহসাংস্কৃতিক সম্পাদক ছিলেন। সেই কবির ছোট ভাইয়ের প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে বিতর্কিত কমিটি করেছেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে সঠিক তথ্য না দিয়ে ভুল বুঝিয়ে এ কমিটি দেওয়া হয়েছে।
হাফিজুর রহমান মোল্লার পক্ষে সভায় বক্তব্য পাঠ করেন শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, আহ্বায়ক কমিটির সাবেক সদস্য গোলাম সারওয়ারের বাসায় কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শুক্রবারের সভাতেও নেতাকর্মীরা সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। সেগুলো হলো আহ্বায়ক কমিটি বাতিলের দাবি কেন্দ্রীয় নেতাদের জানানো; নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠনের দাবি তোলা; অগ্রহণযোগ্য আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণার মূল হোতা ও পৃষ্ঠপোষক কবির আহমেদ ভূঁইয়াকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির রাজনীতিতে অবাঞ্ছিত ঘোষণা; বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে মতবিনিময় করা। আগামী সাত দিনের মধ্যে নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা না করলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানানো হয়।