এশিয়া কাপ: হৃদয়ের লড়াইয়ের পরও শ্রীলঙ্কার কাছে হার বাংলাদেশের

ক্রীড়া ডেস্ক

তাওহিদ হৃদয় লড়লেন, কিন্তু দলকে হার থেকে বাঁচাতে পারলেন না। সুপার ফোরে টানা দুই হারে এশিয়া কাপ থেকে কার্যত বাংলাদেশের বিদায় নিশ্চিত হয়ে গেলো।

কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার কাছে শনিবার ২১ রানে হেরেছে সাকিব আল হাসানের দল। গ্রুপপর্বেও লঙ্কানদের কাছে হেরেছিল টাইগাররা।

লক্ষ্য খুব বড় ছিল না, ২৫৮ রানের। ওপেনিংয়ে নেমে আরও একবার ভালো সূচনা এনে দিয়েছিলেন মেহেদি হাসান মিরাজ। ফলে ১১তম ওভারে ওপেনিংয়ে পঞ্চাশ পার করে বাংলাদেশ। জুটি অবশেষে ভাঙে ৫৫ রানে। ২৯ বলে ৪ বাউন্ডারিতে ২৮ রান করে মিরাজ পুল করতে গিয়ে হন দাসুন শানাকার শিকার।

জুটি গড়লেও শুরু থেকেই স্বচ্ছন্দ্য ছিলেন না নাইম শেখ। ধীরগতিতে এগোচ্ছিলেন। তবে ধীরগতির এক ইনিংসও বড় করতে পারলেন না।

৪৫ স্ট্রাইকরেটে ৪৬ বলে ২১ রান করে শানাকার শিকার হয়ে ফেরেন নাইম। লঙ্কান অধিনায়কের শর্ট বলে ব্যাট চালিয়ে আকাশে তুলে দেন এই ওপেনার। উইকেটরক্ষক নেন সহজ ক্যাচ।

সাকিব আল হাসানও ভরসা দিতে পারেননি দলকে। আরও একবার ‘ছোট মালিঙ্গা’খ্যাত মাথিসা পাথিরানার শিকার হন টাইগার অধিনায়ক। পাথিরানার গতিতে বিভ্রান্ত হয়ে ঠিক গ্রুপপর্বের ম্যাচের মতোই তিনি ক্যাচ দেন উইকেটরক্ষককে।

যদিও পাথিরানার আবেদনে শুরুতে সাড়া দেননি আম্পায়ার। রিভিউ নিয়ে জেতে শ্রীলঙ্কা। রিপ্লেতে দেখা যায়, বল আলতো করে সাকিবের (৭ বলে ৩) ব্যাট ছুঁয়ে গেছে।

লিটন দাস সেট হয়ে হতাশ করেছেন আরও একবার। ২৪ বলে ১৫ রান করে ওয়াল্লেলগার বলে উইকেটরক্ষকের ক্যাচ হন ডানহাতি এই ব্যাটার। ৮৩ রান তুলতে ৪ ব্যাটার ফেরেন সাজঘরে।

দলের সেই বিপর্যয়ে হাল ধরেন মুশফিকুর রহিম আর তাওহিদ হৃদয়। জুটিতে তারা ১১২ বলে ৭২ রান যোগ করেন। ৪৮ বলে ২৯ করে মুশফিক শানাকার বলে ক্যাচ দিলে ভাঙে এই জুটি। তারপরও হৃদয় আশা বাঁচিয়ে রেখেছিলেন।

৪২ বলে যখন ৬২ দরকার ছিল বাংলাদেশের। হৃদয় তখনও আশা হয়ে আছেন। কিন্তু থিকসানাকে ছক্কা হাঁকানোর পরের বলেই তার প্যাডে বল লাগলে আঙুল তুলে দেন আম্পায়ার। আম্পায়ার্স কলে ফিরতে হয় হৃদয়কে। ৯৭ বলে ৮২ রানের ইনিংসে ৭টি চারের সঙ্গে একটি ছক্কা হাঁকান হৃদয়।

তিনি ফেরার পরই জয়ের আশা শেষ হয়ে যায় বাংলাদেশের। নাসুম আহমেদ ১৪ বলে ১৫ আর হাসান মাহমুদ ৭ বলে ১০ করে পরাজয়ের ব্যবধানই যা কমিয়েছেন। ৪৮.১ ওভারে ২৩৬ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। থিকসানা, শানাকা আর পাথিরানা নেন তিনটি করে উইকেট।

এর আগে সাদিরা সামারাবিক্রমার ঝোড়ো ৯৩ রানে ভর করে ৯ উইকেটে ২৫৭ রান তোলে শ্রীলঙ্কা।

প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে এর আগে টস জিতে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। শুরু থেকেই দুর্দান্ত বোলিং করছিলেন তাসকিন আহমেদ এবং শরিফুল ইসলাম।

তাসকিনের প্রথম তিন-চারটি বল তো চোখেই দেখছিলেন না লঙ্কান ওপেনাররা। এলবিডব্লিউ আউটও হয়েছিলেন পাথুম নিশাঙ্কা। যদিও ডিআরএস নিয়ে বেঁচে যান তিনি।

ওই সময় আউট না হয়ে বাংলাদেশের বোলারদের ওপর চড়ে বসার চেষ্টা করেন লঙ্কান দুই ওপেনার। যে কারণে দেখা গেলো, ৫.৩ ওভার পর্যন্ত ৩৪ রানের জুটি গড়ে ফেলেন তারা।

কিন্তু হাসান মাহমুদ এসেই ব্রেক থ্রুটা এনে দেন। নিজের করা দ্বিতীয় ওভারেই দিমুথ করুনারত্নেকে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিতে বাধ্য করেন তিনি।

বলে দুর্দান্ত সুইং ছিল। ক্রিকইনফো লিখেছে, এমন বল নিয়ে দুঃস্বপ্নও দেখে থাকেন ব্যাটাররা। পায়ের ওপর বলটি পিচ করে অফস্ট্যাম্প দিয়ে বের হয়ে যাচ্ছিলো। স্কয়ার লেগে খেলার চেষ্টা করেঝিলেন করুনারত্নে। কিন্তু বল ব্যাটের কিনারা চুমু দিয়ে গিয়ে জমা পড়ে উইকেটরক্ষক মুশফিকের গ্লাভসে। ১৭ বলে ১৮ রান করে বিদায় নেন করুনারত্নে।

৩৪ রানের মাথায় প্রথম ব্রেুক থ্রু উপহার দিয়েছিলেন হাসান মাহমুদ। এরপর উইকেটে বেশ ভালোভাবেই থিতু হয়ে যান পাথুম নিশাঙ্কা এবং কুশল মেন্ডিস। নিঃসন্দেহে বর্তমান সময়ে শ্রীলঙ্কার দুই সেরা ব্যাটার তারা।

এই জুটি নিজেদের সেভাবেই প্রমাণ করতে শুরু করে। যদিও বাংলাদেশের ফিল্ডারদের মিস ফিল্ডিং তাদের ভালো করার পেছনে অনেকটাই অবদান রাখছিলো।

শেষ পর্যন্ত পাথুম নিশাঙ্কা এবং কুশল মেন্ডিসের ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা জুটিকে ভাঙতে সক্ষম হন পেসার শরিফুল ইসলাম। ২৪তম ওভারের দ্বিতীয় বলে শরিফুলের বলে এলবিডব্লিউ আউট হন পাথুম নিশাঙ্কা। ৬০ বল খেলে ৫ বাউন্ডারির সাহায্যে ৪০ রান করেন তিনি।

এরপর হাফ সেঞ্চুরি করা কুশল মেন্ডিসকেও তুলে নেন শরিফুল। ৭৩ বলে ৬ চার আর ১ ছক্কায় ৫০ রান করার পর মেন্ডিসকে তাসকিন আহমেদের হাতে ক্যাচ দিতে বাধ্য করেন বাঁ-হাতি এই পেসার।

উইকেট শিকারে এরপর মেতেছেন তাসকিনও। চারিথ আসালাঙ্কা (১০) তাকে তুলে মারতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বল উঠে যায় আকাশে। মিডঅন থেকে দৌড়ে এসে ক্যাচ নেন সাকিব।

ধনঞ্জয়া ডি সিলভাকেও সেট হতে দেননি হাসান মাহমুদ। ১৬ বলে ৬ রান করে টাইগার পেসারের দ্বিতীয় শিকার হন লঙ্কান অলরাউন্ডার।১৬৪ রানে ৫ উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা।

সেখান থেকে ষষ্ঠ উইকেটে সাদিরা সামারাবিক্রমা আর দাসুন শানাকা ৫৭ বলে ৬০ রান যোগ করে দেন। ৪৭তম ওভারে শানাকাকে (৩২ বলে ২৪) বোল্ড করে এই জুটি ভাঙেন হাসান মাহমুদ।

তবে ইনিংসের শেষ বল পর্যন্ত খেলে যান সাদিরা সামারাবিক্রমা। ৭২ বলে ৯৩ রানের ঝোড়ো ইনিংস খেলেন তিনি, যে ইনিংসে ৮টি চারের সঙ্গে ২টি ছক্কাও হাঁকান।

তাসকিন আহমেদ ৬২ রানে আর হাসান মাহমুদ ৫৭ রানে নেন ৩টি করে উইকেট। ৪৮ রানে ২ উইকেট শিকার শরিফুল ইসলামের। সাকিব আর নাসুম উইকেট না পেলেও বেশ নিয়ন্ত্রিত বোলিং করেন। সাকিব ১০ ওভারে দেন ৪৪, নাসুম মোটে ৩১ রান।

শেয়ার করুন