বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, গণতন্ত্রের জন্য যে নেত্রী সারাজীবন সংগ্রাম করেছেন, সেই নেত্রীকে মিথ্যা মামলায় কারাবন্দি হয়ে আজ হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়তে হচ্ছে। তার চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা করা হচ্ছে না। চিকিৎসকরা বলেছেন, তাকে বাঁচাতে হলে লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট করা দরকার, সেটা বিদেশ ছাড়া সম্ভব নয়। বারবার বলা হয়েছে, পরিবার থেকে বলা হয়েছে, আমরা বলেছি, তিনি শুনতে রাজি নন।
আজ রোববার বগুড়া থেকে রাজশাহীর উদ্দেশ্যে তারুণ্যের রোডমার্চের উদ্বোধন ঘোষণা করে তিনি এসব কথা বলেন।
এসময় ‘সাঈদী সাহেবকে কীভাবে জেলে ঢুকিয়ে হাসপাতালে মেরে ফেলেছে; মেরে ফেলেছে না?’ এমন মন্তব্যের পর সমস্বরে নেতাকর্মীরা বলে উঠেন, হ্যাঁ।
মির্জা ফখরুল বলেন, উদ্দেশ্য ওইটাই। অবিলম্বে দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে তাকে বিদেশে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। তা না হলে সমস্ত দায়-দায়িত্ব আপনাকে বহন করতে হবে।
ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েলের পরিচালনায় এসময আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস দুলু, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন, সহসভাপতি নুরুল ইসলাম নয়ন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী, সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান, সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল হাসান, বগুড়া জেলা বিএনপি এবং সহযোগী সংগঠনের নেতারা।
বগুড়ায় পথসভা শেষে তারুণ্যের রোডমার্চ নওগাঁ হয়ে ১২৯ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা ময়দানে পৌঁছানোর কথা রয়েছে। এই রোডমার্চের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। রোডমার্চে নাটোর, জয়পুরহাট ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী মোটরসাইকেল, মাইক্রোবাস এবং পিকআপ নিয়ে অংশ নেন। প্রচণ্ড গরমের মধ্যে হাতে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উড়িয়ে স্লোগান সহকারে রোডমার্চকে চাঙ্গা করছে নেতাকর্মীরা।
মির্জা ফখরুল বলেন, ভোট চুরি করে জোর করে এই সরকার ক্ষমতায় আছে। ৪০ লাখ নেতাকর্মীর নামে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে। এবার যাতে বিরোধী দল নির্বাচনে আসতে না পারে এ জন্য মিথ্যা-গায়েবি মামলায় বিরোধী নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সাজা দেওয়া শুরু করেছে। তবে এবার তারা একতরফা নির্বাচন করতে পারবে না।
ভোটাধিকারের এক দফা দাবিতে গতকাল শনিবার জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল রংপুর বিভাগ থেকে রোডমার্চ শুরু করেছে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই তরুণরা আসল কাজটি শুরু করেছে। তারা বাংলাদেশকে জাগিয়ে তুলতে শুরু করেছে। আমাদের অধিকার আমাদের কেড়ে নিতে হবে, কেউ অধিকার ফিরিয়ে দেবে না। অধিকার ফিরে পেতে হলে এদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাদের এক দফা দাবি, শুধু ভোটাধিকার ফিরিয়ে দাও, আর শেখ হাসিনা তুমি পদত্যাগ কর। তুমিই সরকারে থাকবে, সেই নির্বাচন কোনো দিন সুষ্ঠু হবে না। সংসদ বিলুপ্ত কর আর নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা কর।
এ সময় নিজেই স্লোগান ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এক দফা এক দাবি’। তখন নেতাকর্মীরা বলেন, ‘শেখ হাসিনা তুই কবে যাবি’।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দফা এক দাবি এক’। নেতাকর্মীরা বলেন, ‘শেখ হাসিনার পদত্যাগ।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই লক্ষ্যেই আমরা এগিয়ে চলছি। আজ দেশের সব রাজনৈতিক দল এক হয়েছে। আসুন, এই সরকারকে সরিয়ে একটি জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করি। জেগে উঠুন, পরাজিত করুন এই দানব সরকারকে।
এসময় আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আমাদের নেতা তারেক রহমান বলেছেন ফয়সালা রাজপথে হবে। বক্তব্য দিয়ে সময় নষ্ট করা যাবে না। রাস্তায় থাকতে হবে, রাস্তায় থেকে এদের বিদায় করতে হবে।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, ওরা আবার ভোটচুরির পাঁয়তারা করছে। এই ভোটচোরদের মধ্যে আছে আওয়ামী লীগের দুর্বৃত্তরা, প্রশাসনের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা, আওয়ামী লীগের দলীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন, লুটেরা ব্যবসায়ীরা, বিচার বিভাগের একটি অংশ। এদের কাউকে ছাড় দেওয়া যাবে না। এদের ওপর চোখ রাখুন। এই ভোটচোরের তালিকা করুন, প্রত্যেক জেলায় জেলায় তালিকা করুন। এই ভোটচোররা শুধুমাত্র আমেরিকার ভিসা থেকে বাতিল হবে না, দেশের জনগণের ভিসা থেকেও বাতিল হয়ে যাবে।
আমির খসরু আরও বলেন, এই ভোটচোরদের তালিকা করেন, তাদের কারা কারা বিদেশে থাকে তাদের তালিকা করুন। সম্পত্তির তালিকা করুন, তাদের কার কাছে কয়টা অস্ত্র আছে, তার তালিকা করেন। আগামী দিনে জাতির সামনে তুলে ধরা হবে।
‘জীবনের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে’ বলে মন্তব্য করেন আমির খসরু।