শেখ হাসিনার মতো বিপুল সংখ্যক মানুষকে পুনর্বাসনের উদাহরণ পৃথিবীতে আর নেই

মত ও পথ ডেস্ক

শুধু তো দেশে নয়, বহির্বিশ্বেও এখন ব্যাপক আলোচিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যে যার অবস্থান থেকে তাঁর কাজের মূল্যায়ন করছেন। শেখ হাসিনা যতোটা আজকের, তারও বেশি আগামীর। বর্তমানে অবস্থান করলেও, ভবিষ্যতের পানে চোখ তাঁর। তিনি সামনের দিনগুলোর কথা বিবেচনায় রেখে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করছেন। একে একে বাস্তবায়ন করছেন। এসবের সুফল বর্তমান সময়ের নাগরিকেরা পাবেন বটে। সবচেয়ে বেশি সুফল পাবে ভবিষ্যতের বাংলাদেশ। ফলে অনুমান করা যায়, তখনই প্রকৃত অর্থে আরো বেশি মূল্যায়িত হবেন শেখ হাসিনা।

একটু পেছন থেকে বললে, জাতির পিতা মুজিব-কন্যা শেখ হাসিনাকে শুরুটা করতে হয়েছিল সেই পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে। ১৯৭৫ সালে পথ হারানো বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শিক জায়গায় পুনর্প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন তিনি। এগিয়ে যাওয়ার স্বার্থেই পেছন থেকে শুরু করেছিলেন। ১৯৭১ সালে বাঙালির একটা দেশ হয়েছিল। অন্যায় অবিচার বৈষ্যমের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক আন্দোলন, সর্বোপরি সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল জাতিরাষ্ট্র বাংলাদেশ। জাতির পিতা আবেগভরা কণ্ঠে ঘোষণা দিয়েছিলেন, ‘আমার বাঙালি আজ মানুষ।’ কিন্তু হায়! মাত্র আড়াই বছরের মাথায় ভেঙে পড়ল সব। চোখের সামনে বেদখল হয়ে গেল সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু কিছু সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে দেশ স্বাধীন করেছিলেন।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট মহান নেতাকে হত্যার মধ্য দিয়ে সেইসব লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে ছুঁড়ে ফেলা হয়। সেই থেকে উল্টো পথে চলার শুরু। স্বাধীনতা বিরোধীরা এতো দ্রুত পুনর্বাসনের সুযোগ পেয়ে যাবে, কে ভেবেছিল? অথচ তা-ই হয়েছিল। যতো দিন গেছে, অপশক্তি আরও সংগঠিত হয়েছে।

এ অবস্থায় মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ পুনঃপ্রতিষ্ঠার দুঃসাহসী সংগ্রাম শুরু করেন শেখ হাসিনা। পিতা শেখ মুজিবের চাওয়াগুলোকে সামনে রেখে, লড়াই শুরু করেন তিনি। কতো না চড়াই-উৎরাই। সবই মোকাবিলা করে সামনে এগিয়ে গেছেন। তখন শুধু নিজ দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দেননি তিনি, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে জাগিয়ে তুলতে, সংগঠিত করতে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেন। ধর্মীয় উগ্রবাদী মৌলবাদীদের হুঙ্কারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কথা বলেছেন। রাষ্ট্রটি যে সবার, সে কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন।

১৯৯৬ সালে তাঁর নেতৃত্বে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। এর মধ্য দিয়ে মূলত ফিরে পাওয়া হয় বাংলাদেশকে। মাঝখানের সময়টা ছিল ভুলে ভরা। বিভ্রান্তিতে পরিপূর্ণ। শেখ হাসিনাকে তাই বহু প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়তে হয়। আইনের শাসনের কবর রচনা করেছিল যে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ, সেটি শেখ হাসিনাই বাতিল করেন। মানুষ হত্যা করলে তার বিচার হবে না, এমন অসভ্য আদিম চিন্তা থেকে তাঁর হাত ধরেই বের হয়ে আসে বাংলাদেশ। একেবারেই প্রচলিত আইনে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচার শুরু হয়। শেখ হাসিনা সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদে শেষ হয় বিচার কার্য।

রাষ্ট্রের আরও একটি বড় দায় ছিল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করা। মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী ভয়ংকর সব অপরাধের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিল এ দেশেরই কিছু লোক। তাদের বিচারের ক্ষেত্রেও বহু বাধা সৃষ্টি করা হয়েছিল। দেশে-বিদেশে শুরু হয়েছিল অপতৎপরতা। কিন্তু শেখ হাসিনাকে এক চুল টলানো যায়নি। একাত্তরের শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। অনেকের দণ্ড কার্যকর হয়েছে। এ বিচার আইনের শাসনের উজ্জ্বল সাক্ষ্য বহন করবে। একইসঙ্গে এক ধরনের দায় মুক্তি দেয় বর্তমান ও ভবিষ্যতের প্রজন্মকে। আরও অনেক অন্ধকার দুই হাতে ঠেলে সামনে এগিয়ে যান তিনি। তাঁর সঙ্গে এগিয়ে চলে বাংলাদেশ।

আজকের পৃথিবী ডিজিটাল। দ্রুত এগিয়ে যেতে হলে তথ্য প্রযুক্তির সহযোগিতা নিতে হবে। শেখ হাসিনা অনেক অনেক আগেই এ বাস্তবতা উপলব্ধি করেছিলেন। তাই ঘোষণা দিয়েছিলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার। সে অনুযায়ী, আজ ডিজিটাল বাংলাদেশের অর্জন যে কোনো বিবেচনায় ঈর্ষণীয়। তবে এখন সবচেয়ে বেশি আলোচনা হয়, শেখ হাসিনা সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড নিয়ে। একটার পর একটা মেগা প্রকল্প গ্রহণ করেছেন তিনি।

প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে তাঁর সাহস ছিল অকল্পনীয়। নিজেদের অর্থে পদ্মা সেতুর মতো বিশাল এক সেতু নির্মাণ করে পৃথিবীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। এই সেতুর সুফল পাচ্ছে দেশের মানুষ। আগামীতে পদ্মা সেতু নির্ভর যোগাযোগ আরও বড় ভালো ফল এনে দেবে, সে বিষয়টিও ইতোমধ্যে স্পষ্ট হয়েছে। পদ্মা সেতু দুই দশ বছরের জন্য নির্মাণ করা হয়নি। বহু বছর এটি ব্যবহার উপযোগী থাকবে। ততদিনে হয়তো শেখ হাসিনা থাকবেন না। কিন্তু পদ্মা সেতু থেকে যাবে তাঁর কীর্তি হয়ে।

রাজধানী শহরের উন্নয়ন আরও বেশি দৃষ্টি কাড়ছে। প্রথমবারের মতো শহর ঢাকা প্রবেশ করেছে মেট্রোরেল যুগে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর নিজস্ব চিন্তা ও দূরদর্শিতা দিয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছেন। আর মাত্র কয়েকদিন পর উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত চলাচল করবে স্বপ্নের মেট্রোরেল। আর তা হলে ঢাকার গণপরিবহন সংকট অনেকটাই দূর হয়ে যাবে। বিদায় নেবে যানজট। ভবিষ্যতের ঢাকা হবে সচল। গতিসম্পন্ন। মাস্টার প্ল্যানের অংশ হিসেবে নির্মাণ করা হয়েছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। এর একাংশ উদ্বোধন করা হয়েছে সম্প্রতি।

ঢাকার বাইরেও চলমান আছে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড। কিছুদিনের মধ্যে উদ্বোধন হবে কর্ণফুলী টানেল। এ ধরনের যাতায়াত ব্যবস্থাও দেশে প্রথম। কাছাকাছি সময়ে কক্সবাজারে পৌঁছে যাচ্ছে ট্রেন লাইন। সমুদ্র ছুঁয়ে নামতে শুরু করবে বিমান। আধুনিক বিমানবন্দর নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ হওয়ার পথে। ছোট-বড় আরও কত উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চলমান আছে এখনো! কিন্তু এসব বড় বড় কাজ করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটিবারের জন্য তৃণমূলের অসহায় হতদরিদ্র মানুষের কথা ভুলে যাননি। বরং গৃহহীনদের জন্য ঘরের ব্যবস্থা করে অনন্য এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ প্রকল্পটি এখন পর্যন্ত পাঁচ লাখ ৫৫ হাজার ৬১৭ পরিবারকে তাদের মালিকানায় দুই শতাংশ জমিসহ আধা-পাকা বাড়ি দিয়ে পুনর্বাসন করেছে। এসব বাড়িতে বিদ্যুৎ, পানি সরবরাহ এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে। এভাবে একেবারে রাস্তায় পড়ে থাকা ছিন্নমূল মানুষেরা, জীবনযুদ্ধে সব দিক থেকে পরাজিত মানুষেরা নতুন করে বাঁচার সুযোগ পেয়েছেন। এই মানুষেরাই একদিন শেখ হাসিনাকে মূল্যায়ন করবেন। এতো বিপুল সংখ্যক মানুষকে পুনর্বাসন করা, মানুষের মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করার উদাহরণ পৃথিবীতে আর আছে বলে জানা যায়নি।

এভাবে কল্যাণ রাষ্ট্রের ধারণা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নাগরিকের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। এ প্রসঙ্গে করোনাকালের উদাহরণটিও টানতে হবে। করোনায় বাংলাদেশে লাখ লাখ মানুষ মারা যাবে বলে প্রচার করা হয়েছিল। রাস্তায় লাশ পড়ে থাকবে, একথা বলা হয়েছিল। বাস্তবে এসব চ্যালেঞ্জ শেখ হাসিনা এমনভাবে মোকাবিলা করেছেন যে, সমালোচকদের মুখে ছাই পড়েছে। গোটা দুনিয়া এক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রশংসা করতে বাধ্য হয়েছে। অর্থনৈতিক মন্দার সময় চলছে এখন। এখনো তিনি রণে ভঙ্গ দেননি। বরং শক্তি সাহসের উৎস হয়ে সামনে আছেন।

এদিকে, রোগ-বালাই বা স্বাধীনতা বিরোধী উগ্র মৌলবাদী গোষ্ঠীর হাত থেকে দেশকে রক্ষা করে চলেছেন তিনি। একটু হাল ছাড়লে হয়তো আজ বাংলাদেশ জঙ্গিবাদের অভয়ারণ্যে পরিণত হতো। দৃঢ়তার সঙ্গে এ পরিস্থিতি মোকাবিলা করে আধুনিক প্রগতিবাদী আদর্শকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরেছেন তিনি। বলার অপেক্ষা রাখে না, এসব কাজ করতে গিয়ে অযুত বাধার মুখে পড়তে হয়েছে শেখ হাসিনাকে। তাঁর পায়ের তলায় সবসময়ই পাথর ছড়ানো ছিল। পাথর সরিয়ে হাঁটতে হয়েছে। দৃঢ় পায়ে হেঁটে চলেছেন এখনো। গন্তব্য? আগামীর বাংলাদেশ। সেই বাংলাদেশ নিশ্চয়ই বুকে করে রাখবে শেখ হাসিনাকে।

শেয়ার করুন