ভোট বিমুখতা আপনারাই তৈরি করেছেন, আমরা নই: রাজনীতিবিদদের সিইসি

নিজস্ব প্রতিবেদক

ফাইল ছবি

দেশের রাজনীতিবিদদের উদ্দেশ করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, ভোট বিমুখতা আপনারা তৈরি করেছেন, আমরা করিনি। আমি সামান্য একটা চাকরি করতাম, মাসে মাসে বেতন পেতাম। পলিটিক্স কি, রাজনীতি কি, এত বড় চিন্তা ও সামর্থ্য আমার মাথায় ছিল না। আমার জ্ঞন সীমিত।

আজ বৃহস্পতিবার বিএনপির ১৮ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করে। বৈঠকে তারা খোলামেলা আলাপ করেন। পাশাপাশি নির্বাচন কমিশন বরাবর ১২টি সুপারিশ তুলে ধরেন দলটির নেতারা।

universel cardiac hospital

একই সঙ্গে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর চিঠি দেয় তৃণমূল বিএনপি। দলটির চেয়ারপারসন সমশের মবিন চৌধুরী, মহাসচিব তৈমূর আলম খন্দকার ও তৃণমূল বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা নাজমুল হুদার মেয়ে এবং দলটির নির্বাহী চেয়ারপারসন অন্তরা সেলিমা হুদা সিইসি বরাবর চিঠি দেন।

তৃণমূল বিএনপির সুপারিশ নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে সিইসি বলেন, মানুষকে ভোটকেন্দ্রে নিতে আমাদের প্রচারণা থাকবে। কিন্ত রাজনীতি ও প্রার্থী যারা আছেন তাদের কাজ হবে ভোটারদের কাছে যাওয়া। প্রার্থী যতটা ভোটারের কাছে যেতে পারবেন আমরা পারবো না। ভোটারের কাছে আপনারা যে আবেদন করতে পারবেন এটা আমরা পারবো না।

তিনি বলেন, আমাদের তরফ থেকে যতটা সম্ভব করবো। নির্বাচন সুষ্ঠু হচ্ছে কি না এটা দেখবো। আপনারা দেখেন ভোটাররা আসছে কি না, কেউ বাধা দিচ্ছে না, আপনারাও বাধা দিচ্ছেন না, অন্যরাও বাধা দিচ্ছে না। কেউ বাধা দিতে পারবে না এই অপরাধ আমরা বন্ধ করিয়েছি। বিধান এনেছি যদি বাধা দেওয়া হয় তাহলে ক্রিমিনাল অফেন্স হবে। কাজেই আপনারা আসবেন। আমরা কিন্তু টিভির মাধ্যমে দেখতে চাইবো ওরা (ভোটার) ভেতরে ঢুকছে কি না, ঢোকার পর কিন্তু আমরা ওদের দেখতে পারবো না। কারণ সেই অধিকার আপনার আমার নেই। আমরা দেখবো ভোটার পিসফুলি ভোটকেন্দ্র থেকে বেরিয়ে আসছে কি না। তখন এক ঝাঁক সাংবাদিক তার ইন্টারভিউ নেবে। তারা ঝাঁপিয়ে পড়ে ভোটারকে বলবেন- ‘ভাই বা বোন আপনি কি ভোট দিতে পারছেন?’ এভাবে চলতে থাকলে ভোট ভালো হবে। মিডিয়া ব্যবহার করা গেলে ভোট স্বচ্ছ হবে।

সাবেক এই সচিব আরও বলেন, ভোটার যদি বলেন ভোট বলতে ভেতরে কিছু নেই, সব ডাকাত তাহলে এটাও প্রচার করেন। পুরো দেশব্যাপী প্রচার হয়ে যাক ভোটকেন্দ্রে ভোট হচ্ছে না কেবল ডাকাতি হচ্ছে। আবার যদি সুষ্ঠু ভোট হয় সেটাও যেন প্রচার হয়, আমরা ডিজ ইনফরমেশন চাই না। আমরা গণমাধ্যমের কাছে ডিজ ইনফরমেশন চাই না। আমরা চাই অবজেক্টিভ ইনফরমেশন। সবাই আমাদের সহযোগিতা করেন।

মিডিয়া প্রসঙ্গে সিইসি বলেন, অনেকে মিডিয়ার অ্যাকসেস প্রতিহত করার চেষ্টা করবে। আমরা বলেছি মিডিয়া ভেতরে যেতে পারবে তাদের অ্যাকসেস লাগবে না। কেন্দ্রে গিয়ে প্রিসাইডিং অফিসারকে শুধু বলবে আমি প্রথম আলো বা অন্য অফিস থেকে এসেছি। এটা বলেই কেন্দ্রে ঘুরে বেড়াবে, কেন্দ্রে ঢুকে ছবি নিতে পারবে। শুধু যেখানে কাস্টিং হচ্ছে সেখানে যেতে পারবে না। কেউ যদি দেখে কোথাও পটাপট সিল মারা হচ্ছে এটাও প্রকাশ করেন। ভোট অবশই নিরপেক্ষ হতে হবে। ভোটারকে বাধা দেওয়া যাবে না। ভোটারের ফ্রিডম অব চয়েস থাকবে।

নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন প্রসঙ্গে সিইসি বলেন, আপনারা (তৃণমূল বিএনপির নেতা) আর্মির কথা বলেছেন। এর আগে যে ডায়লগগুলো হয়েছে প্রতিটা দলই আর্মির কথা বলেছে। আমরা লক্ষ্য করেছি সেনাবাহিনীর উপস্থিতি একান্তই কাম্য। পেশিশক্তি বলে একটা শক্তি গ্রাউন্ড লেভেলে থাকে।

ভোটের মাঠে কালো টাকার ব্যবহার হয় জানিয়ে সিইসি বলেন, আমাদের প্রার্থীদের হাতে প্রচুর কালো টাকা আছে। তাদের এ পকেটে হাত দিলে টাকা, ওই পকেটে হাত দিলে কালো টাকা। পুরো পকেটভর্তি কালো টাকা। কাজেই কালো টাকা ব্যবহার করতে আমাদের পেশিশক্তি ব্যবহার করতে হচ্ছে। আমাদেরে কালো টাকা ব্যবহারের জায়গা নেই। কালো টাকা দিয়ে পেশিশক্তি সংগ্রহ করা হচ্ছে। পেশিশক্তিকে যদি নিয়ন্ত্রণ করা না যায়, তাহলে জনগণের যে ভোটাধিকার সেটা অবশ্যই ব্যাহত হতে পারে। কিন্তু আমরা বলবো পোলিং এজেন্টদের নিয়োগ দেবেন কঠিনভাবে ট্রেনিং দেবেন। এক বিন্দু পোলিং এজেন্ট যেন বুথে থেকে বের না হয়, সে কলা চিড়া ও একটা পানির বোতল নিয়ে কেন্দ্রে ঢুকবে। ক্ষুধা লাগলে সেখানেই থাকবে এক বিন্দুও সেন্টার ছাড়বে না।

শেয়ার করুন