‘সরকারি কর্মকর্তার দায়িত্ব রাষ্ট্রীয় কার্য পালন, অন্যের পা চাটা নয়’

হাইকোর্ট
হাইকোর্ট। ফাইল ছবি

সরকারি কর্মকর্তার দায়িত্ব রাষ্ট্রীয় কার্য পালন করা, অন্যের পা চাটা নয় বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। নাটোরের গুরুদাসপুরে মিছিলে অংশ নিয়ে ‘জয় বাংলা’ স্লোগানের কারণে সেখানকার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষককে বরখাস্তের ঘটনায় এমন মন্তব্য করেছেন আদালত।

আদালতের আদেশে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার হাজিরের পর বুধবার (১৮ অক্টোবর) হাইকোর্টের বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ শওকত আলী চৌধুরীর বেঞ্চ এমন মন্তব্য করেন।

universel cardiac hospital

আদালতে আজ আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন রিটকারী আইনজীবী বশির আহমেদ। জেলা শিক্ষা অফিসারের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট গাজী মোস্তাক আহমেদ। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ সাইফুজ্জামান ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সেলিম আজাদ।

হাইকোর্টের তলবে বুধবার আদালতে হাজির হন নাটোরের জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ গোলাম নবী। আদালতকে জানান, স্থানীয় এমপির নির্দেশে দরি কাছি কাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মাসুদুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত করেছেন তিনি। পরে আদালত ক্ষুব্ধ হয়ে এমন মন্তব্য করেন।

আদালত বলেন, ভুল করলে শুধু এমপি‌ নয়, মন্ত্রী কিংবা বিচারপতিদেরও সমালোচনা করা যাবে। এতে কারো মানহানি হলে তিনি আদালতের দ্বারস্ত হবেন। শুনানি শেষ করার পরে শিক্ষকের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে ১১ নভেম্বরের মধ্যে আদালতে লিখিতভাবে জানাতে প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

এর আগে গত ২২ আগস্ট ‌‘জয় বাংলা স্লোগান দেওয়ায় স্কুল শিক্ষক বরখাস্ত’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হলে তা আদালতের নজরে এনে রিট আবেদন করা হয়। ওই রিটের শুনানি হয় আজ।

রিটকারী আইনজীবী ড. বশির আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, নাটোরে গুরুদাসপুরের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মাসুদুর রহমান কেন মিছিলে জয় বাংলা শ্লোগান দিয়েছেন, এটাকে কেন্দ্র করে সাসপেন্ড করেছে। ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওই শিক্ষা অফিসারকে তলব করেছিলেন। আজ অফিসারকে উপস্থিত হওয়ার জন্য ডেকেছিলেন, তিনি আজ উপস্থিত হয়েছিলেন এবং সেই আদেশ প্রত্যাহার করতে বলা হয়েছে।

তিনি জানান, এখানে আদালত ভিডিও চিত্র দেখেছেন। এমপি সাহেবের নির্দেশে সাসপেন্ড করেছে, এটা ঠিক হয়নি। কোনো মন্তব্য ছিল না, শৃঙ্খলাবিরোধী কথা ছিল না। এমপি সাহেবের নির্দেশক্রমে উনি শিক্ষককে বরখাস্ত করেছেন। উনি সেটা করতে পারেন না। এমনকি মাসুদুর রহমানের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ গঠন করা হয়নি, তদন্ত করা হয়নি।

কারো পা চাটা সরকারি অফিসারের কাজ নয়, তাদের কাজ রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করা। আদালত সরকারি কর্মকর্তাদের দায়িত্ব ও পা চাটা নিয়ে কী বলেছেন, জানতে চাইলে ড. বশির আহমেদ বলেন, পা চাটার বিষয়ে আদালত বলেছেন, সরকারি কর্মকর্তার কাজ রাষ্ট্রের কার্য সম্পাদন করা। এমপি বা অন্যদের নির্দেশনা পালন করা সরকারি কর্মকর্তার দায়িত্ব নয়। কেউই আইনের ঊর্ধ্বে না। যদি কোনো সংসদ সদস্য (এমপি) ভুল করে, তার সমালোচনা করা যাবে। এটার জন্যে যদি সংসদ সদস্য সংক্ষুব্ধ হন, উনি মানহানি মামলা করতে পারবেন।

শেয়ার করুন