আওয়ামী লীগ নেতা বড় মনিরের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা করা কিশোরীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি

টাঙ্গাইল শহর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি গোলাম কিবরিয়া ওরফে বড় মনিরের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা করা সেই কিশোরীর (১৭) ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ১৮ নভেম্বর (শনিবার) বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে টাঙ্গাইল পৌরসভার বোয়ালী এলাকার বাসা থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়।

মারা যাওয়া কিশোরী ওই এলাকার সাবেক এক পুলিশ কর্মকর্তার মেয়ে ছিলেন। গত ৫ এপ্রিল রাতে টাঙ্গাইল সদর থানায় গোলাম কিবরিয়ার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেন। মামলায় নিজেকে অন্তঃসত্ত্বা বলে উল্লেখ করা হয়। একইসঙ্গে মামলায় গোলাম কিবরিয়ার স্ত্রী নিগার আফতাবকেও আসামি করা হয়েছে। গোলাম কিবরিয়া বড় মনির টাঙ্গাইল-২ (গোপালপুর-ভুঞাপুর) আসনের সংসদ সদস্য তানভীর হাসান ওরফে ছোট মনিরের বড় ভাই এবং জেলা বাস কোচ মিনিবাস মালিক সমিতির মহাসচিব।

universel cardiac hospital

ওই কিশোরীর কীভাবে মৃত্যু হয়েছে জানতে চাইলে টাঙ্গাইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু ছালাম মিয়া বলেন, ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে থানায় আনা হচ্ছে। এ বিষয়ে পরে বিস্তারিত জানাবো।

টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মো. শরফুুদ্দীন বলেন, ঘটনাস্থলে পুলিশ রয়েছে। ক্রাইম সিন ইউনিট না আসা পর্যন্ত মৃত্যুর বিষয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না। আমরা ঘটনার তদন্ত করছি।

কিশোরীর বড় বোন বলেন, শুক্রবার রাত ১২টার দিকে তার সঙ্গে মোবাইলে আমার সর্বশেষ কথা হয়েছে। শনিবার দুপুর ১২টার দিকে বাসা থেকে আমার স্বামীকে ফোন করে জানানো হয়, আমার বোন দরজা লাগিয়ে দিয়েছে। তার ছেলে কান্না করছে। ধাক্কা দেওয়ার পরও দরজা খোলেনি। দরজা ভাঙার চেষ্টা করলেও তা সম্ভব হয়নি। খবর দিলে বিকালে তার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

মামলায় ওই কিশোরী অভিযোগ করেছেন, সম্পত্তি নিয়ে ভাইয়ের সঙ্গে বিরোধ হলে বিষয়টি গোলাম কিবরিয়াকে জানান। কিবরিয়া সমস্যা সমাধান করে দেওয়ার আশ্বাস দেন। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য গত ১৭ ডিসেম্বর তাকে শহরের আদালতপাড়ায় নিজের বাড়ির পাশের একটি ভবনে গোলাম কিবরিয়া ডেকে নেন। সেখানে তাকে ধর্ষণ করেন ও আপত্তিকর ছবি তুলে রাখেন। পরে আপত্তিকর ওই ছবি ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেখিয়ে একাধিকবার ধর্ষণ করা হয়। একপর্যায়ে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। বিষয়টি গোলাম কিবরিয়া জানার পর গর্ভের সন্তান নষ্ট করার জন্য চাপ দিতে থাকেন। তবে কিশোরী রাজি না হওয়ায় গত ২৯ মার্চ তাকে শহরের আদালতপাড়ায় গোলাম কিবরিয়ার শ্বশুড়বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে একটি কক্ষে আবারও ধর্ষণ করেন। এ ঘটনার পর গোলাম কিবরিয়ার স্ত্রী নিগার আফতাব ভুক্তভোগীকে মারধর করেন। ওই দিন রাত ৩টার তাকে বাড়িতে রেখে আসেন তারা।

এ ঘটনায় গত ৬ এপ্রিল আদালতে ২২ ধারায় জবানবন্দি দেন ভুক্তভোগী। পরে গোলাম কিবরিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। ১৮ এপ্রিল হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ থেকে চার সপ্তাহের আগাম জামিন নেন গোলাম কিবরিয়া। ৩০ এপ্রিল জামিন স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। শুনানি শেষে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম জামিন স্থগিত করে দুই সপ্তাহের মধ্যে নিম্ন আদালতে হাজির হওয়ার আদেশ দেন। ১৫ মে টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাহমুদুল মহসীনের আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করেন। পরে বিচারক জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। ওই সময় গোলাম কিবরিয়া নিম্ন আদালতে হাজির হলেও তার স্ত্রী নিগার আফতাব আদালতে হাজির হননি।

এ ঘটনায় মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়। তবে অন্তঃসত্ত্বার প্রমাণ পেলেও ধর্ষণের আলামত পায়নি মেডিক্যাল বোর্ড। গত জুন মাসে ছেলেসন্তানের জন্ম দেন কিশোরী। এরই মধ্যে হাইকোর্টে জামিনের জন্য যান কিবরিয়া। তখন আদালত সদ্যজাত শিশুর ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেন। গত ৯ অক্টোবর আপিল বিভাগে দাখিল করা ডিএনএ টেস্টের রিপোর্টে বলা হয়, ধর্ষণের শিকার নারীর গর্ভে জন্ম নেওয়া নবজাতকের বাবা গোলাম কিবরিয়া নন। এরপর সম্প্রতি জামিনে মুক্ত হন গোলাম কিবরিয়া।

শেয়ার করুন