হামাস ও ইসরায়েল সরকার চলমান যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়াতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এরই অংশ হিসেবে মেয়াদ আরও দুই দিন বাড়ানো হয়েছে। হামাস ও কাতার এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। সোমবার ছিল চার দিনের অস্ত্রবিরতির শেষ দিন। তবে এর মেয়াদ বাড়াতে আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ছে। প্রাথমিকভাবে যুধ্যমান দু’পক্ষের পাশাপাশি কাতার, মিসর ও যুক্তরাষ্ট্র এ ব্যাপারে একমত হয়েছে। খবর আলজাজিরা, বিবিসি ও সিএনএনের।
নিজেদের শর্ত পূরণ সাপেক্ষে হামাস ও ইসরায়েলও গাজায় ‘মানবিক’ বিরতির মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। যত দিন জিম্মি মুক্তি অব্যাহত থাকবে, ততদিন এর মেয়াদ বৃদ্ধি পাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
হামাস বলেছে, তারাও অস্থায়ী এই যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়াতে চায়, যদি ইসরায়েল আরও ফিলিস্তিনি কারাবন্দিদের মুক্তি দিতে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করে।
কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতায় হামাস-ইসরায়েল সংঘাত শুরুর ৪৮ দিন পর গত শুক্রবার থেকে অস্ত্রবিরতি শুরু হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী, যুদ্ধবিরতির এই চার দিনে হামাস ৫০ জন ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেবে; বিনিময়ে ইসরায়েল তাদের কারাগারে বন্দি ১৫০ জন ফিলিস্তিনিকে ছেড়ে দেবে এবং গাজায় ত্রাণবাহী ২০০ ট্রাকের পাশাপাশি ১ লাখ ৪০ হাজার লিটার জ্বালানি ও গ্যাসভর্তি অন্তত চারটি লরি প্রবেশের অনুমোদন দেবে।
তবে গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতির জন্য আন্তর্জাতিক চাপ বেড়েই চলেছে। ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে বর্তমান সংঘাত সমাধানের উপায় খুঁজে বের করার চেষ্টায় নতুন গতি আনার জন্যও এই চাপ তৈরি হচ্ছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতির প্রধান জোসেপ বোরেল ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে ‘দীর্ঘস্থায়ী’ যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন।
স্পেনের বার্সেলোনায় ভূমধ্যসাগরীয় (ইউএফএম) আঞ্চলিক ফোরামের সম্মেলনে তিনি বলেন, প্রাথমিক চার দিনের যুদ্ধবিরতি ছিল ‘রাজনৈতিক সমাধানের’ দিকে একটি ‘গুরুত্বপূর্ণ প্রথম পদক্ষেপ। কিন্তু আমাদের ভাবতে হবে, কীভাবে আমরা আজ থেকে রাজনৈতিক প্রক্রিয়া চালিয়ে যাব।
স্পেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসে ম্যানুয়েল আলবারেস বলেছেন, শিগগিরই একটি আন্তর্জাতিক শান্তি সম্মেলন হওয়া দরকার। ন্যাটো মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গও যুদ্ধ থামানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
ফিলিস্তিনি জাতীয় কর্তৃপক্ষের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রিয়াদ আল মালিকি বলেছেন, কাতার, মিসর, যুক্তরাষ্ট্র, ইইউ ও স্পেন গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল-হামাসের মধ্যে অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি বাড়ানোর জন্য কাজ করছে।
রয়টার্স জানায়, মিসর, কাতার ও যুক্তরাষ্ট্রের আলোচকরা যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে একমত হওয়ার কাছাকাছি পৌঁছেছেন। এখন আলোচনা চলছে কত দিন এবং কোন কোন বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হবে– তা নিয়ে। হামাস আরও চার দিন মেয়াদ বাড়াতে চাচ্ছে। অন্যদিকে ইসরায়েল চায়, দৈনিক ভিত্তিতে সময় বাড়াতে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, তিনি জিম্মি মুক্তির বিষয়ে রোববার বাইডেনের সঙ্গে কথা বলেছেন। প্রতিদিন অন্তত ১০ জন করে জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হলে তিনি অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাবকে স্বাগত জানাবেন।
তবে বাইডেনকে তিনি আরও বলেছেন, যুদ্ধবিরতির মেয়াদ শেষ হলে তারা পুনরায় পূর্ণমাত্রার যুদ্ধে ফিরে যাবেন এবং তাদের ‘লক্ষ্য’ অর্জন না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ অব্যাহত রাখবেন। আর তাদের লক্ষ্য হলো হামাসকে নির্মূল করা এবং অবশ্যই সব জিম্মির মুক্তি নিশ্চিত করা।
কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল আনসারি এ প্রসঙ্গে সিএনএনকে বলেন, ‘চার দিনের যুদ্ধবিরতির ফলে জিম্মিদের হস্তান্তর প্রক্রিয়ায় যে গতি এসেছে, সেটি অব্যাহত রাখতেই মেয়াদ আরও বাড়ানো জরুরি। আমরা আশা করছি, সবাই এ ব্যাপারটির গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারবেন।’