দেশের মধ্যে ডলার সংকট বেশ পুরোনো। ম্যাজিক এ মুদ্রাটির বাজার পরিস্থিতিও টালমাটাল। মূলত রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকেই এর সংকটের মুখে পড়ে দেশ। বাজার পরিস্থিতি সামাল দিতে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে প্রতি মাসেই কমছে রিজার্ভ।
অন্যদিকে, ডলার সংকটের কারণে আমদানিতে লাগাম টানছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নেওয়া হচ্ছে নানা পদক্ষেপ। সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নেওয়া পদক্ষেপে সুফলও মিলছে। এখন আমদানি ব্যয় কমে আসার পাশাপাশি বাণিজ্য ঘাটতিও বেশ খানিকটা কমেছে। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) বাণিজ্য ঘাটতি কমেছে ৬০ শতাংশের বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যের হালনাগাদ তথ্যে এ চিত্র উঠে এসেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার (জুলাই-অক্টোবর) মাসে পণ্য বাণিজ্যে সার্বিক ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৮০ কোটি ৯০ লাখ ডলার, যা ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই সময়ের (প্রথম চার মাস) চেয়ে ৬০ দশমিক ৪২ শতাংশ কম। ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৯৬২ কোটি ৪০ লাখ ডলার।
চলতি অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে মোট দুই হাজার ২৬ কোটি ৯০ লাখ ডলারের বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি করেছেন বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা। যেটি ২০২২-২৩ অর্থ বছরের একই সময়ের চেয়ে ২০ দশমিক ৫৪ শতাংশ কম। গত অর্থবছরের চার মাসে ২৫ দশমিক ৫১ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছিল।
চলতি অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে ১ হাজার ৬৪৬ কোটি ডলার আয় করে দেশ। এটি গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৩ দশমিক ৬১ শতাংশ বেশি। গত বছরের চার মাসে পণ্য রপ্তানি থেকে ১ হাজার ৫৮৮ কোটি ডলার আয় করেছিল দেশ।
আলোচিত প্রথম চার মাসে পণ্য বাণিজ্যে সার্বিক ঘাটতির পরিমাণ কমে ৩ দশমিক ৮১ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। এটি ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষ হয়েছিল ১ হাজার ৭১৫ কোটি ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি নিয়ে। অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে এ ঘাটতি ৩ হাজার ৩২৫ বিলিয়ন ডলারে উঠেছিল ২০২১-২২ অর্থবছরে।
চলতি অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবরে বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে (ব্যালেন্স অব পেমেন্ট) উদ্বৃত্তের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৩ কোটি ৩০ লাখ ডলার। তিন মাস শেষে অর্থাৎ জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে উদ্বৃত্তের পরিমাণ ছিল ১১২ কোটি ডলার। ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে অর্থনীতির গুরুত্ববহ এ সূচকে ঘাটতি ছিল ৪৪৯ কোটি ডলারের।
আমদানি অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় ২০২১-২২ অর্থবছরে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ১৮ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলারের বিশাল ঘাটতি নিয়ে শেষ হয়েছিল। দেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই ব্যালেন্স অব পেমেন্টে এত ঘাটতি দেখা যায়নি। আমদানি কমায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে এ ঘাটতি ৩৩৩ কোটি ডলারে নেমে আসে। ২০২০-২১ অর্থবছরে ব্যালেন্স অব পেমেন্টে ঘাটতি ছিল ৪৫৭ বিলিয়ন ডলার।
আলোচিত (চলতি অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর) সময়ে সেবা খাতের বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৭০ কোটি ডলার। ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই সময়ে এ ঘাটতি ছিল ১৩৮ কোটি ডলার। বীমা, ভ্রমণ ইত্যাদি খাতের আয় এবং ব্যয়ের হিসাব করে সেবা খাতের বাণিজ্য ঘাটতি পরিমাপ করা হয়।
আলোচিত সময়ে সামগ্রিক লেনদেন ভারসাম্যে (ওভারঅল ব্যালেন্স) ঘাটতি বেড়েছে। অর্থবছরের প্রথম তিন (জুলাই-সেপ্টেম্বর) মাসে এ সূচকে ঘাটতি ছিল ২৮৫ কোটি ডলার। এক মাস পর জুলাই-অক্টোবর সময়ে তা বেড়ে ৩৮৪ কোটি ডলারে উঠেছে। গত অর্থবছরের প্রথম চার মাস সময়ে এ ঘাটতি ছিল ৪৭০ কোটি ডলার।
চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে আর্থিক হিসাবে (ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট) ঘাটতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৯৬ কোটি ডলার। যেটি গত অর্থবছরের একই সময়ে এ সূচকে ১২৭ কোটি ডলার উদ্বৃত্ত ছিল। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২১৪ কোটি ডলারের ঘাটতি নিয়ে অর্থবছর শেষ হয়, ২০২১-২২ অর্থবছরে এ সূচকে ১ হাজার ৫৪৬ কোটি ডলারের বড় উদ্বৃত্ত ছিল। বিশ্বব্যাংক, এডিবিসহ অন্য দাতা দেশ ও সংস্থার কাছ থেকে ঋণ-সহায়তা পাওয়ায় ২০২১-২২ অর্থবছরে আর্থিক হিসাবে বড় উদ্বৃত্ত ছিল।