আচরণবিধি মানাতে কঠোর হচ্ছে নির্বাচন কমিশন

নিজস্ব প্রতিবেদক

নির্বাচন কমিশন ভবন
ফাইল ছবি

আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনা অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় কঠোর হওয়া ছাড়া বিকল্প দেখছে না নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তাই সেই পথেই হাঁটছে ইসি। শুধু প্রার্থীদের শোকজ নোটিশ দিয়ে বা তলব করে দায়সারা বক্তব্যের পর দায়মুক্তি দেওয়া থেকে সরে আসার বিষয়েও ভাবছে কমিশন। নির্বাচনবিধি মানাতে প্রয়োজনে প্রার্থিতা বাতিলেরও সিদ্ধান্ত রয়েছে নির্বাচন নিয়ন্ত্রক এই সংস্থাটির।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের শুরু থেকেই আচারণবিধি মানাতে হিমশিম খাচ্ছে কমিশন। এখন পর্যন্ত দুই শতাধিক প্রার্থীকে আচারণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে শোকজ করলেও ইসির নির্দেশনা মানছেন না প্রার্থীরা।

ইসি সূত্র বলছে, নির্বাচনি সহিংসতা ও আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে কমিশন। গুরুতর অভিযোগ প্রমাণিত হলে বাতিল করা হবে প্রার্থীতা।

নির্বাচনে সারাদেশে প্রচার-প্রচারণায় প্রার্থীদের কর্মী সমর্থকদের ওপর হামলার খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে গতকাল শনিবার মাদারীপুর-৩ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী তাহমিনা বেগমের সমর্থক ৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ কর্মী এসকেন্দার খাঁকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী সভায় অংশগ্রহণ না করলে বিভিন্ন সরকারি ভাতাভোগীদের ভাতার কার্ড বাতিল করার হুমকি দিয়ে আলোচনায় আসেন জামালপুর সদর উপজেলার লক্ষ্মীরচর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হাতেম আলী। নারায়ণগঞ্জ সোনারগাঁয়ে জাপার প্রচারণায় হামলা। ঢাকা-২০ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মীদের বাড়ি গিয়ে পরিবারকে হুমকি দেওয়া ও পোস্টার ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগ উঠেছে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা বেনজির আহমদের ভাগ্নের বিরুদ্ধে।

এসব বিষয়ে গতকাল বরিশাল জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সভাকক্ষে প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, এবার নির্বাচন কমিশন থেকে প্রশাসনকে স্পষ্টভাবে বার্তা দিয়েছি এই বিষয়গুলোকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য। একই সঙ্গে প্রার্থীদের প্রতি আবদার হচ্ছে আপনারাই নির্বাচনের মাঠকে পারস্পরিক সমঝোতার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ রাখবেন।

ভোট কারচুপির বিষয় তিনি বলেন, অনেকেই বিশ্বাস করেন ভোট হলেও রিটার্নিং কর্মকর্তা একজনকে জয়ী ঘোষণা করে দেবেন। এগুলো বিশ্বাসযোগ্য নয়। এমনকি এটা কখনোই সম্ভব না। আর ঘোষণা তো দূরের কথা একটি ভোটও যদি কারচুপি হয় তাহলে তাৎক্ষণিক ওই কেন্দ্রের ভোট বন্ধ করা হবে।

আচরণবিধি প্রসঙ্গে সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসকের শহিদ এ. কে শামসুদ্দিন সম্মেলন কক্ষে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিরাজগঞ্জের ৬টি সংসদীয় আসনের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের ইসি রাশেদা সুলতানা বলেছেন, নির্বাচন করতে গিয়ে কেউ যদি আচরণবিধি ভঙ্গ করে এবং সেটা প্রমাণিত হয়, তাহলে সেক্ষেত্রে আমরা সর্বনিম্ন ২০ হাজার টাকা ও সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা জরিমানা করতে পারি। চাইলে প্রার্থিতাও বাতিল করতে পারি।

তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, আপনাদেরকেও বলছি, আপনারা স্বাধীনভাবে কাজ করবেন। আপনাদেরর যদি স্বাধীনভাবে কাজ করতে না দেওয়া হয়, বাধা দেওয়া হয়, ভয় দেখানো হয়, সেটাও আমরা শাস্তির আওতায় এনেছি।

নির্বাচনী সহিংসতা ও আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে জানিয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান বলেছেন, ইসি কঠোর সিদ্ধান্ত নেবে। কোনো রকম ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। ইসি নিরপেক্ষ অবস্থানে থাকবে। কোনো শঙ্কা, ভয়ভীতি বা আনুকূল্য নেই। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য যা যা করা দরকার, তার সবই তারা করে যাবেন।

শেয়ার করুন