নতুন বইয়ের উৎসবে মাতোয়ারা শিশুরা

মত ও পথ ডেস্ক

সংগৃহীত ছবি

নতুন বছর, নতুন সকাল, নতুন বই- এমন সব নতুনের আহ্বানে রৌদ্র করোজ্জ্বল শীতের সকালের আড়মোড়া ভেঙে বই উৎসবে মেতে উঠেছে খুদে শিক্ষার্থী-শিশুরা।

সোমবার (১ জানুয়ারি) রাজধানীর মিরপুরের ন্যাশনাল (সকাল-বিকাল) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ এখন শিশুদের পদচারণায় মুখর। নতুন বই পেয়ে তাদের আনন্দ-উচ্ছ্বাসে যেন নতুন প্রাণ পেয়েছে স্কুলের মাঠ।

universel cardiac hospital

কেন্দ্রীয় কর্মসূচি রাজধানীর মিরপুরের এই ন্যাশনাল (সকাল-বিকাল) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বিপুল উচ্ছ্বাস-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে বই বিতরণ উৎসব চলছে। প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক স্তরের শিশু শিক্ষার্থীরা আনন্দঘন পরিবেশে নতুন বছরের পাঠ্যপুস্তক পেয়ে উল্লাসে মাতোয়ারা হয়ে ওঠে। শিশুদের সঙ্গে এসেছেন তাদের শিক্ষক এবং অভিভাবকেরাও।

উৎসবে অংশ নিয়ে ন্যাশনাল স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী আমেনা আক্তার মরিয়ম নতুন বই পেয়েছে। অভিব্যক্তি জানতে চাইলে মরিয়ম জানায়, নতুন বই পেয়ে অনেক ভালো লাগছে।

চতুর্থ শ্রেণির আরেক শিক্ষার্থী তোহা জানায়, অনেক ভালো লাগছে। আরও ভালো লাগছে আমাদের স্কুলে অনুষ্ঠানে।

কেন্দ্রীয় এই উৎসবে মিরপুরের বেশ কয়েকটি স্কুলের শিক্ষার্থীরা অংশ নিয়েছে। তাদের একজন মনিপুর স্কুলের প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী জুনায়েদ জানায়, বই নিতে এসে ভালো লাগছে।

বই উৎসবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন প্রধান অতিথি ও মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ বিশেষ অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। সভাপতিত্ব করেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত।

এদিকে, মাধ্যমিকের কোনো কেন্দ্রীয় আয়োজন না থাকলেও সারাদেশে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বই উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। স্ব স্ব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উৎসবমুখর পরিবেশে বই বিতরণ চলছে। বিকেল পর্যন্ত বই বিতরণের কার্যক্রম চলবে। সব শিক্ষার্থী বই হাতে ফিরবে বলে জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) জানিয়েছে, প্রাক-প্রাথমিক থেকে সপ্তম শ্রেণির শতভাগ বই উপজেলায় পৌঁছে দিয়েছেন তারা। উপজেলা শিক্ষা অফিস সমন্বয় করে বইগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চাহিদা মোতাবেক বিলি করছে। তবে অষ্টম-নবমের ২০-২৫ শতাংশ বই এখনো ছাপা হয়নি। সেগুলো চলতি মাসেই ছাপা শেষে শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে দেওয়া হবে।

এনসিটিবির তথ্যমতে, ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থী সংখ্যা ধরা হয়েছে তিন কোটি ৮১ লাখ ২৭ হাজার ৬৩০ জন। তাদের জন্য বই ছাপা হয়েছে মোট ৩০ কোটি ৭০ লাখ ৮৩ হাজার ৫১৭টি। প্রথম, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য ছাপানো হয়েছে ৫ কোটি ৩৮ লাখ ৩ হাজার ৪২৩ কপি বই।

দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির বই সংখ্যা ৩ কোটি ৩৬ লাখ ১ হাজার ২৭৪টি। প্রাক-প্রাথমিকের জন্য ৬১ লাখ ৯৩ হাজার ৮৭৮ কপি বই ছাপা হয়েছে। ষষ্ঠ শ্রেণিতে ছয় কোটি ৪৫ লাখ ৪৮ হাজার ৩০৮ কপি, সপ্তম শ্রেণির চার কোটি ৪৫ লাখ ৫৭ হাজার কপি, অষ্টম শ্রেণির জন্য পাঁচ কোটি ৩৪ লাখ ৮৪ হাজার ২৭১ কপি এবং নবম শ্রেণির জন্য পাঁচ কোটি ছয় লাখ ৮৪ হাজার ৫৭৩ কপি বই ছাপা হচ্ছে।

অন্যদিকে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর (পাঁচটি ভাষায় রচিত) শিশুদের জন্য এবার মোট দুই লাখ পাঁচ হাজার ৩১ কপি বই ছাপা হয়েছে। অন্য বইয়ের মধ্যে পাঁচ হাজার ৭৫২ কপি ‘ব্রেইল’ বই আছে। তাছাড়া শিক্ষকদের ৪০ লাখ ৯৬ হাজার ৬২৮টি ‘শিক্ষক সহায়িকা’ দেওয়া হচ্ছে।

এদিকে, ৯টি শ্রেণির মধ্যে এবার ৭টি শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রমে লেখা বই দেওয়া হচ্ছে। সেগুলো হলো- প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম, নবম। এসব বইয়ের পাণ্ডুলিপি নতুন করে লেখা। শুধু চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা আগের শিক্ষাক্রমের বই পাবে।

শেয়ার করুন