নির্ধারিত ব্যয়ের ৬ গুণ বেশি খরচ করেছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা: টিআইবি

নিজস্ব প্রতিবেদক

টিআইবি
টিআইবি। ফাইল ছবি

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে থেকে নির্বাচন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা প্রচারে ব্যয় করেছেন গড়ে ২ কোটি ৮৬ লাখ টাকার বেশি। প্রচারের জন্য নির্ধারিত সময়ে এই ব্যয়ের পরিমাণ প্রায় দেড় কোটি টাকা, যা নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নির্ধারিত সীমার ৬ গুণ বেশি।

আজ বুধবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে টিআইবির কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। সেখানে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রক্রিয়া ট্র্যাকিং’ শীর্ষক গবেষণার প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়।

টিআইবির গবেষণায় নির্বাচন-পূর্ববর্তী ও নির্বাচনকালীন ঘটনাপ্রবাহ, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচনের দিন পর্যন্ত মাঠপর্যায়ে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের আচরণসংক্রান্ত তথ্য এবং নির্বাচনের পরবর্তী এক মাস পর্যন্ত ঘটনাপ্রবাহ বিশ্লেষণ করা হয়েছে। গত বছরের জুন থেকে এই গবেষণা শুরু হয়েছে। ৩০০টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ৫০টি আসনে গবেষণা করা হয়।

প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন গবেষণা দলের সদস্য মাহফুজুল হক, নেওয়াজুল মওলা ও সাজেদুল ইসলাম। তাতে বলা হয়, গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত আসনগুলোতে তফসিল ঘোষণার আগে থেকে নির্বাচন পর্যন্ত নির্ধারিত ব্যয়সীমার বেশি ব্যয় করেছেন প্রায় ৬৬ শতাংশ প্রার্থী। সবচেয়ে বেশি ব্যয় করেছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনসংক্রান্ত আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী, একজন প্রার্থীর নির্বাচনী ব্যয় সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা।

টিআইবির প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, আওয়ামী লীগের বিজয়ী প্রার্থীরা নির্বাচন উপলক্ষে গড়ে ৩ কোটি সাড়ে ৯ লাখ টাকা ব্যয় করেছেন। এর মধ্যে একজন প্রার্থী সর্বোচ্চ ৩৮ কোটি ৭৭ লাখ টাকা ব্যয় করেছেন। তাদের ব্যয়ের পরিমাণ নির্বাচন কমিশনের নির্ধারিত ব্যয়সীমার গড়ে সাড়ে ১১ গুণ বেশি। তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, নির্বাচনী ব্যয়সীমা লঙ্ঘনের ধারা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীরা ব্যয়সীমার ৩ গুণ বেশি খরচ করেছিলেন।

নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে বলে টিআইবির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, আইনের ধারা স্পষ্টকরণের যুক্তিতে স্বপ্রণোদিত হয়ে কমিশন আরপিও সংশোধনের প্রস্তাব করে এবং কমিশনের ক্ষমতা খর্ব হলেও কমিশন সরকারের সিদ্ধান্তের পক্ষে অবস্থান নেয়। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে নতুন ও পুরোনো রাজনৈতিক মামলায় গ্রেপ্তারসহ রিমান্ড, জামিন নামঞ্জুর ইত্যাদি ক্ষেত্রে নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে।

এ ছাড়া রাজনৈতিক দল ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে সংলাপে প্রাপ্ত রাজনৈতিক ও সংবিধানবিষয়ক সুপারিশগুলো সংশোধনের জন্য নির্বাচন কমিশনের প্রস্তাবে যুক্ত করা হয়নি বলে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। বলা হয়েছে, সংবিধানের ১২৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠানে কমিশনকে সব নির্বাহী কর্তৃপক্ষের সহায়তা প্রদানের নির্দেশনা থাকলেও প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক সংস্কারে কমিশন সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রস্তাব বা সুপারিশ করেনি। নির্দিষ্ট অ্যাজেন্ডা ছাড়াই রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপের আয়োজন করা হয়েছিল।

শেয়ার করুন