দ্বিতীয় সুপার ওভারে আফগানিস্তানকে হারাল ভারত

৪২৪ রানের ম্যাচ টাই, এরপর সুপার ওভারেও দুই দলই তুলল ১৬ রান করে। বেঙ্গালুরুতে সিরিজের শেষ ম্যাচটি নাটকীয় থেকে হয়ে উঠল মহানাটকীয়। দুই দলকে আলাদা করতে প্রয়োজন পড়ল দ্বিতীয় সুপার ওভার। ভারত সেখানে তুলেছে ১১ রান, আফগানিস্তান আটকে যায় ১ রানেই। দ্বিতীয় সুপার ওভার জিতে ভারত ধবলধোলাই-ই করল আফগানিস্তানকে। এ নিয়ে নয়বার তিন বা এর বেশি ম্যাচের সিরিজে প্রতিপক্ষকে ধবলধোলাই করল ভারত, তারা ছাড়িয়ে গেল পাকিস্তানকে।

প্রথম সুপার ওভারে রহমানউল্লাহ গুরবাজের সঙ্গে গুলবদিনকে পাঠায় আফগানিস্তান। লং অনে ম্যাচে দারুণ ফিল্ডিং করা বিরাট কোহলির কাছ থেকে ডাবলস নিতে গিয়ে প্রথম বলেই রানআউট হয়ে যান নাইব। মুকেশ কুমার ফুল লেংথে করে যাচ্ছিলেন, তবে চতুর্থ বলে গুরবাজ চারের পর পঞ্চম বলে নবী মারেন ছক্কা। শেষ বলে গিয়ে তৈরি হয় বিতর্ক। উইকেটকিপার সঞ্জু স্যামসনের করা থ্রো নবীর পায়ে লেগে যায় লং অনে, এরপরও নবী ও গুরবাজ সেই ওভার থ্রো থেকে নেন আরও ২ রান। নবী অবশ্য রান নিতে গিয়ে গতিপথ বদলাননি, ফলে আইন অনুযায়ী রান নিতে বাধা ছিল না আফগানদের। ভারতের লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৭ রান।

universel cardiac hospital

প্রথম বলে রানআউট হতে পারতেন যশস্বী জয়সোয়ালও, তবে তিন স্টাম্প পেয়েও লক্ষ্যভেদ করতে পারেননি গুরবাজ। প্রথম ২ বলে ওমরজাই দেন মাত্র ২ রান, কিন্তু তৃতীয় বলে ছক্কা পান রোহিত। সেটি অবশ্য বাউন্ডারি পার হয় অল্পর জন্য। কিন্তু পরের ছক্কায় ফুটে ওঠে রোহিতের ক্লাস, লো ফুল টসে এক্সট্রা কাভারের ওপর দিয়ে তুলে মারেন তিনি। পরের বলে রোহিত নিতে পারেন সিঙ্গেল, ফলে শেষ বলে দরকার ছিল ২ রান। কিন্তু রিটায়ার্ড আউট হয়ে উঠে যান রোহিত, যেন রিংকু সিং এসে দৌড়াতে পারেন। কিন্তু শেষ বলে ১ রানের বেশি আসেনি।

দ্বিতীয় সুপার ওভারে রিংকুকে নিয়ে নামেন রোহিত, যদিও আইসিসির প্লেয়িং কন্ডিশন বলে আগের সুপার ওভারে কোনো ব্যাটসম্যান আউট হলে পরের সুপার ওভারে তিনি নামতে পারবেন না (বোলারও একাধিক ওভার করতে পারবেন না)। সেই রোহিত ফরিদ আহমেদের প্রথম ৩ বলে তোলেন ১১ রান। রিংকু চতুর্থ বলে হন কট বিহাইন্ড, পরের বলে রোহিত রানআউট হলে ভারতকে থামতে হয় ১১ রানেই। ভারত এ সুপার ওভার করতে পাঠায় রবি বিষ্ণয়কে, প্রথম বলেই ক্যাচ তোলেন নবী। তৃতীয় বলে ক্যাচ তোলেন গুরবাজও। ১২ রানের লক্ষ্য আফগানিস্তান আটকে যায় ১ রানেই!

এর আগে মূল ম্যাচে বড় রান তাড়ায় রহমানউল্লাহ গুরবাজ ও ইব্রাহিম জাদরানও সময় নেন, তবে শক্ত একটা ভিতই গড়েন ৯৩ রানের ওপেনিং জুটিতে। দুজনই পান ফিফটির দেখা। তবে ৫০ পেরোতে পারেননি কেউই। কুলদীপ যাদব ও ওয়াশিংটন সুন্দরের ঘূর্ণিতে ১১টি বৈধ বলের মধ্যে ৩ উইকেট হারিয়ে ছন্দপতন হয় আফগানদের।

সেখান থেকে গুলবদিন নাইবের সঙ্গে ২২ বলে ৫৬ রানের জুটিতে আফগানদের বড় আশা জোগান মোহাম্মদ নবী। ওয়াশিংটন সুন্দরের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে তুলে মারতে গিয়ে ১৬ বলে ৩৪ রান করে থামেন তিনি, তখনো অবশ্য ম্যাচ থেকে ছিটকে যায়নি আফগানিস্তান।

কোহলির ফেরার দিনে ভারতের নায়ক অক্ষর-দুবে-জয়সোয়াল
কোহলির ফেরার দিনে ভারতের নায়ক অক্ষর-দুবে-জয়সোয়াল
করিম জানাত ও নজিবউল্লাহ জাদরান দ্রুত ফিরলেও লড়াই চালিয়ে যান গুলবদিন নাইব। জয়ের জন্য শেষ ৫ বলে আফগানিস্তানের দরকার ছিল ১৪ রান। গুলদবদিন সেটিই নামিয়ে আনেন ১ বলে ৩ রানে। শেষ বলে ফুল লেংথ থেকে বড় শটের চেষ্টা করেননি গুলবদিন, এক্সট্রা কাভার থেকে ডাবলস নিয়ে নিশ্চিত করেন সুপার ওভার। ফলে দুই দল মিলে তোলে ৪২৪ রান, টাই হওয়া ম্যাচে যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।

এর আগে ভারতের ইনিংস ছিল রোহিত ও রিংকুময়। এক বছরেরও বেশি সময় পর এ সংস্করণে ফিরে আগের দুই ম্যাচ মিলিয়ে কোনো রানই করতে না পারা রোহিতের এ ম্যাচে প্রথম রানটি করতে লাগে ৭ বল। সেখান থেকেই রেকর্ড গড়া ৬৯ বলে ১২১ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন ভারত অধিনায়ক। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে তাঁর এটি পঞ্চম সেঞ্চুরি, এ সংস্করণে কোনো ব্যাটসম্যানের যা সর্বোচ্চ।

রোহিত সে ইনিংস খেলেছেন এমন ম্যাচে, যেখানে টসে জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে ফরিদ আহমেদের তোপে ৪.৩ ওভারে ২২ রানের মধ্যেই ৪ উইকেট হারিয়ে ধুঁকছিল ভারত। টি-টোয়েন্টিতে এত কম রানে এর আগে কখনোই ৪ উইকেট হারায়নি তারা। সেখান থেকে রিংকু সিংকে (৩৯ বলে ৬৯) নিয়ে ভারতকে টেনে তোলেন রোহিত, পঞ্চম উইকেটে দুজন যোগ করেন ৯৫ বলে ১৯০ রানের রেকর্ড জুটি।

চিন্নাস্বামীর ধীরগতির উইকেটে শুরুতে রোহিত স্বচ্ছন্দ ছিলেন না, দ্রুত উইকেট পড়ে যাওয়ার চাপও ছিল। রিংকুও সময় নিয়েছেন। প্রথম ৩৪ বলে রোহিতের রান ছিল মাত্র ২৮। ১২তম ওভারে শরাফউদ্দিনকে পরপর ২ বলে ছক্কা মেরে খোলস ছেড়ে বেরোনোর ইঙ্গিত দেন তিনি, অর্ধশতক পূর্ণ করেন ৪১ বলে। তবে পরের অর্ধশতক করতে তাঁর লাগে মাত্র ২৩ বল। মানে ৬৪ বলেই তিন অঙ্কে যান তিনি।

রোহিতের সঙ্গে রিংকুর ঝড়ে ভারত শেষ ৫ ওভারে তোলে ১০৩ রান। এর মধ্যে করিম জানাতের শেষ ওভারেই আসে ৩৬ রান। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে মাত্র তৃতীয়বার এক ওভারে এল ৩৬ রান। রিংকু অপরাজিত থাকেন ৩৯ বলে ৬৯ রানে। রোহিত ও রিংকু মিলে মারেন ১৪টি ছক্কা।

বেঙ্গালুরুর দীর্ঘ রাতে এত নাটক হয়েছে, শেষ পর্যন্ত বিস্মৃতই হয়ে গেছে হয়তো এর অনেক কিছুই!

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ভারত: ২০ ওভারে ২১২/৪ (রোহিত ১২১*, রিংকু ৬৯; ফরিদ ৩/২০, ওমরজাই ১/৩৩)

আফগানিস্তান: ২০ ওভারে ২১২/৬ (গুলবদিন ৫৫*, গুরবাজ ৫০, ইব্রাহিম ৫০; ওয়াশিংটন ৩/১৮)

ফল: ম্যাচ টাই, প্রথম সুপার ওভার টাই, দ্বিতীয় সুপার ওভারে ভারত জয়ী

শেয়ার করুন