ইসরায়েলের হামলার মধ্যেই গাজায় পবিত্র রমজানের প্রস্তুতি

মত ও পথ ডেস্ক

গাজায় ইসরায়েলি হামলা। ফাইল ছবি

মধ্যপ্রাচ্যে শুরু হতে যাচ্ছে রমজান মাস। ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে মাসটি পালন করবেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মুসলিমরা। তবে এবারের রমজানে ফিলিস্তিনের গাজার চিত্রটা ভিন্ন হতে যাচ্ছে। এমন এক পরিস্থিতিতে উপত্যকাটির বাসিন্দারা রমজানের প্রস্তুতি নিচ্ছেন, যখন সেখানে নির্বিচার হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। খবর রয়টার্স ও আল জাজিরার।

গাজায় পাঁচ মাসের বেশি সময় ধরে চলছে ইসরায়েলের হামলা। উপত্যকাটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় রোববার জানিয়েছে, গত ৭ অক্টোবর সংঘাত শুরুর পর থেকে ইসরায়েলের হামলায় সেখানে অন্তত ৩১ হাজার ৪৫ জন নিহত হয়েছেন। অনেকেই ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছেন। আহত হয়েছেন ৭২ হাজার ৬৫৪ জন। এর মধ্যে আগের ২৪ ঘণ্টায় নিহত হয়েছেন ৮৫ জন।

universel cardiac hospital

এই ৮৫ জনের মধ্যে অন্তত ১৩ জন নুসেইরাত শরণার্থীশিবিরের। তাদের মধ্যে জেইনা ও ওমর নামের দুই শিশু রয়েছে। নিহত এই শিশুদের দাদা বলছিলেন, গাজায় কোনো নিরাপদ স্থান নেই। ইসরায়েল মিথ্যা বলছে। তারা বলেছে, গাজার দক্ষিণাঞ্চল নিরাপদ। সেখানে ফিলিস্তিনিদের আশ্রয় নিতে বাধ্য করা হয়েছে। এরপর সেখানে বেসামরিক লোকজনের ওপর হামলা চালানো হচ্ছে।

শুধু রক্তক্ষয়ই নয়, রমজানের আগমুহূর্তে ক্ষুধাও বিপর্যস্ত করেছে গাজাবাসীকে। গাজা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ৭ অক্টোবর থেকে উপত্যকাটিতে অনাহারে অন্তত ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ বলছে, উত্তর গাজার অবস্থা মর্মান্তিক। বারবার আহ্বান জানানোর পরও সেখানে সড়কপথে ত্রাণ সরবরাহ করা হচ্ছে না। আর রমজান যখন এগিয়ে আসছে, তখন প্রাণহানিও বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কাছে সহায়তার আহ্বান জানিয়েছে গাজা পৌর কর্তৃপক্ষ।

এদিকে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, চলমান সংঘাতের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত গাজায় ইসরায়েলের হামলায় এক হাজারের বেশি মসজিদ ধ্বংস হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে দক্ষিণে রাফা এলাকার আল–হুদা মসজিদ। গত মাসে সেটি ধ্বংস করে ইসরায়েলি বাহিনী। একসময় সেখানে দেড় হাজার মানুষ নামাজ আদায় করতে পারতেন। বর্তমানে ধ্বংস হওয়া মসজিদটির ক্ষুদ্র একটি স্থানে নামাজ পড়ছেন মুসল্লিরা। রমজানেও এ দুর্দশার মধ্যে নামাজ চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন।

রমজানের আগে গাজাবাসীর সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে একটি বার্তা দিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। তিনি বলেছেন, ‘রমজান শান্তি, সহনশীলতা ও উদারতার মূল্যবোধকে তুলে ধরে। গাজায় যারা ভয়াবহ দুর্দশার মধ্যে রয়েছেন, তাদের সবার প্রতি সংহতি ও সমর্থন জানাচ্ছি আমি। এ কঠিন সময়ে রমজান আমাদের আশার আলো দেখাবে।’

এদিকে রমজান ঘিরে অধিকৃত পশ্চিত তীরের জেরুজালেম শহরে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। শহরের ওল্ড সিটিতে হাজার হাজার ইসরায়েলি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সেখানে পবিত্র আল–আকসা মসজিদে রমজান মাসে প্রার্থনায় অংশ নেবেন মুসলিমরা।

এবারের রমজানে আল–আকসায় মুসলমানদের প্রার্থনার সুযোগ দেওয়া হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছিল। গত মাসে ইসরায়েলের নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রী ইতামার বেন গভির বলেছিলেন, তিনি মসজিদটিতে মুসলমানদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা চান। তবে পরে দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জানান, আগের বছরের মতোই এবারও একই সংখ্যক মুসলিম আল–আকসায় নামাজ আদায়ের সুযোগ পাবেন।

শেয়ার করুন