কুয়েত ফিলিস্তিনের হোম ভেন্যু হলেও গ্যালারিতে সমর্থন দেখা গেল বাংলাদেশ দলেরই বেশি। ৬০ হাজার ধারণক্ষমতার স্টেডিয়ামে অধিকাংশ দর্শক আসলে প্রবাসী বাঙালি।
জামাল ভূঁইয়াদের গলা ফাটিয়ে সমর্থন করেছেন তারা। কিন্তু ম্যাচের ফলাফল তাদের হতাশ করলো। কারণ ফিলিস্তিনের কাছে বড় ব্যবধানে হেরেছে কাবরেরার শিষ্যরা।
কুয়েত সিটির জাবের আল আহমাদ আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে গতকাল ২০২৬ বিশ্বকাপ ও ২০২৭ এশিয়ান কাপের বাছাইয়ের দ্বিতীয় ধাপের প্রথম লেগের ম্যাচে ৫-০ গোলে জিতেছে ফিলিস্তিনিরা।
যুদ্ধ বিধ্বস্ত ফিলিস্তিনিদের নিজেদের মাঠে খেলার সুযোগ নেই। কারণ তাদের দেশে হামলা করেছে ইসরায়েল। আর তাতে দেশটির হাজারো মানুষ নিহত ও অসংখ্য মানুষ আহত হয়েছেন। হাসপাতাল, স্কুল সহ হাজার হাজার স্থাপনা ধ্বংস হয়েছে ইসরায়েলি বাহিনীর গোলার আঘাতে। এ অবস্থায় দলের কয়েকজন সেরা খেলোয়াড়কে ছাড়াই কুয়েতে খেলতে এসেছে তারা। কিন্তু মাঠের লড়াইয়ে সেসবের কোনো ছাপ পড়েনি। বরং দাপুটে জয় নিয়েই মাঠ ছেড়েছে তারা।
এদিকে এ ম্যাচে নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে দলে ফিরলেও বাংলাদেশের সেরা একাদশে জায়গা হারিয়েছেন আনিসুর রহমান জিকো। তার অনুপস্থিতিতে গোলবার সামলেছেন মিতুল মারমা। তবে সেরা একাদশে ফিরেছেন তপু বর্মণ। কিন্তু রক্ষণের ব্যর্থতা ও আক্রমণভাগের অকার্যকর প্রচেষ্টায় হারতে হলো বাংলাদেশকে।
ফিফা র্যাংকিংয়ে ৮৬ ধাপ এগিয়ে থাকা ফিলিস্তিনের বিপক্ষে ‘আই’ গ্রুপের ম্যাচের শুরুতে আশাজাগানিয়া নৈপুণ্য উপহার দিচ্ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু প্রথমার্ধের শেষ দিকে বাংলাদেশকে চাপে ফেলে দেয় ফিলিস্তিন। পর পর দুই গোল করে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেয় স্বাগতিকরা।
সপ্তম মিনিটে প্রতি আক্রমণে প্রথম সুযোগ পায় বাংলাদেশ। ডান প্রান্ত দিয়ে আক্রমণে ওঠেন রাকিব হোসেন, তা দেখে বক্সে জায়গা করে নিয়েছিলেন ফয়সাল ফাহিম; কিন্তু রাকিবের কাটব্যাক ফাহিমকে খুঁজে পায়নি। বল ক্লিয়ার করেন ফিলিস্তিনের এক ডিফেন্ডার।
নবম মিনিটে অল্পের জন্য গোলের দেখা পায়নি ফিলিস্তিন। সতীর্থের লং পাস পেয়ে বিশ্বনাথ ঘোষ লাফিয়ে উঠলেও মাথা ছোঁয়াতে পারেননি। বল পেয়ে যান ভেতরে ঢুকে পড়া ওদেই দাবাঘ। কিন্তু ক্রসবারের উপর দিয়ে উড়িয়ে মারেন এই ফিলিস্তিনি ফরোয়ার্ড। ১৯ মিনিটে আবারও প্রায় একইভাবে গোলের সুযোগ হারায় ফিলিস্তিন।
সতীর্থের লং বল প্রথম ছোঁয়ায় নিয়ন্ত্রণে নেন ইসলাম বার্তান। পোস্ট ছেড়ে এগিয়ে এসে ফিলিস্তিনের এই ফরোয়ার্ডের পথ আগলে দাঁড়ান মিতুল। গোলরক্ষকের মাথার উপর দিয়ে বার্তানের চিপ শট উপরের জালে গিয়ে পড়ে।
ফিলিস্তিনের আক্রমণ সামলে আক্রমণ শানিয়েছে বাংলাদেশও। ডান দিক থেকে রাকিব হোসেনের আক্রমণ আটকাতে ব্যস্ত ছিলেন ফিলিস্তিনের ডিফেন্ডাররা। তাতে সুযোগও আসে। সেট পিস থেকে ২৩ মিনিটে সুযোগ পায় বাংলাদেশ। কিন্তু ইসা ফয়সালের ক্রসে ফাহিমের হেডে গতি ছিল না।
চার মিনিট পর আসে আরও এক সুযোগ। বাঁ দিক থেকে একাধিক ডিফেন্ডারের প্রতিরোধ ভেঙে বক্সে বল বাড়ান রাকিব; ফাঁকায় থাকা সোহেল ক্রসবারের উপর দিয়ে উড়িয়ে মারেন। ৩১ মিনিটে দাবাঘের শট পা দিয়ে ঠেকিয়ে দেন মিতুল। কিন্তু ৪২তম মিনিটে আর আটকাতে পারেনি। ডান দিক থেকে আসা ক্রসে মাহমুদ আবুওয়ারদার শট ফিরিয়ে দেন মিতুল, ফিরতি বল পেয়ে স্লাইডিং শটে লক্ষ্যভেদ করেন ওদাও দাবাঘ।
বিরতিতে যাওয়ার আগে ব্যবধান দ্বিগুণ করে ফিলিস্তিন। যোগ করা সময়ে কর্নার থেকে উড়ে আসা বল জটলার মধ্য থেকে কাজে লাগান শেহাব কুম্বর। ফিলিস্তিনি এই ফরোয়ার্ড বল নামিয়ে ঠিকঠাক নিয়ন্ত্রণে না নিতে পারলেও কোনোমতে জালের ঠিকানা খুঁজে পান।
বিরতির পর মাত্র ৪ মিনিটে আর দুই গোল করে ফিলিস্তিন। আর তাতে ম্যাচ থেকেই ছিটকে যায় বাংলাদেশ। ৪৮তম মিনিটে নিজের দ্বিতীয় গোলের দেখা পান কুম্বর। এর ৩ মিনিট পর দারুণ ভলিতে আর একবার লক্ষ্যভেদ করেন দাবাঘ। এর কিছুক্ষণ পর হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনাও জাগিয়েছিলেন কুম্বর। কিন্তু তার ফ্রি-কিকে বল অল্পের জন্য গোলবারের উপর দিয়ে যায়।
বড় ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে গেছে বাংলাদেশ। কয়েকবার আক্রমণেও উঠেছে। কিন্তু ফিনিশিংয়ের দুর্বলতায় গোল করতে পারেনি। উল্টো ৭৬তম মিনিটে আরও এক গোল হজম করে বসে। বক্সে আসা বল ধরে রাখতে পারেননি মিতুল। এই সুযোগে বল পেয়ে নিজের হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেন দাবাঘ।
শেষদিকে ব্যবধান কমানোর সুযোগ কাজে লাগাতে না পারায় বড় হার হজম করতে হয় বাংলাদেশকে।
বাংলাদেশ এর আগে গ্রুপসঙ্গী অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৭-০ গোলে হারে। এরপর লেবাননের সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করে তারা। তিন ম্যাচ থেকে মাত্র ১ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপের শেষ স্থানে রয়েছে জামালবাহিনী। তবে ফিরতি লেগে ব্যবধান কমানোর সুযোগ থাকছে বাংলাদেশের সামনে, আগামী ২৬ মার্চ যে ম্যাচটি হবে বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনায়।
অন্যদিকে চলমান বাছাইয়ে প্রথম জয় পেল ফিলিস্তিন। লেবাননের বিপক্ষে গোলশূন্য ড্রয়ে শুরুর পর অস্ট্রেলিয়ার কাছে ১-০ ব্যবধানে হেরেছিল তারা। ৩ ম্যাচে তাদের সংগ্রহ ৪ পয়েন্ট। গ্রুপের পয়েন্ট টেবিলে তারা আছে দুইয়ে।