তিন দশকের বেশি সময় আগে প্রায় ১৯ হাজার টাকা চুরির অভিযোগে নরসিংদী থানায় একটি মামলা হয়। ১৯৯২ সালের ৭ আগস্ট করা ওই মামলা থেকে গত বছর দুই আসামিকে খালাস দেন হাইকোর্ট। ১৩ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়টি গত মাসে সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।
এ মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ে আসামিদের কারাদণ্ড হয়। সেই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে ১৯৯৫ সালের ২৫ মার্চ বিফল হন তারা। এই দুই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আবদুর রাজ্জাকসহ দুই আসামি হাইকোর্টে আবেদন (ফৌজদারি রিভিশন) করেন।
এ আবেদনের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ গত বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি রায় দেন। রায়ে রাজ্জাকসহ দুই আসামিকে খালাস দেওয়া হয়।
মামলার নথিতে দেখা যায়, ১৯৯২ সালের ৩০ জুলাই সোনালী ব্যাংক থেকে ১৮ হাজার ৭৫০ টাকা তুলে ঘরের ট্রাংকে রাখেন জব্বার মিয়া। পাশের কক্ষে বসবাসকারী ইব্রাহিম সেই টাকা রাখতে দেখেন। এর কয়েক দিন পর ৫ আগস্ট রাত ১১টার দিকে শব্দে ঘুম ভেঙে দেখেন, ট্রাংকটি নেই। ঘরের বাইরে এসে দেখেন, ইব্রাহিম ও কবির ট্রাংক ফেলে দৌড়ে পালাচ্ছেন। ট্রাংকের আংটা ভাঙা এবং ভেতরে টাকা নেই। এ ঘটনায় ৭ আগস্ট নরসিংদী থানায় মামলা হয়। এ মামলায় ১৯৯৩ সালের ১৫ মে রায় দেন নরসিংদীর তৎকালীন প্রথম শ্রেণির হাকিম। রায়ে কবির, রাজ্জাক ও ইব্রাহিমকে ছয় মাসের কারাদণ্ড এবং কিরণ নেছাকে তিন মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। আলামত হিসেবে জব্দ করা ১৮ হাজার টাকা বাদীর অনুকূলে ফেরত দিতে বলা হয়।
বিচারিক আদালতের এ রায়ের বিরুদ্ধে আসামিরা ১৯৯৩ সালে ফৌজদারি আপিল করেন। বিচারিক আদালতের রায়ে হস্তক্ষেপ করার মতো কোনো বিষয় নেই উল্লেখ করে ১৯৯৫ সালের ২৫ মার্চ নরসিংদীর অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালত আপিল নামঞ্জুর করে রায় দেন। এই দুই রায়ের বৈধতা নিয়ে আবদুর রাজ্জাকসহ দুজন হাইকোর্টে রিভিশন আবেদন করেন। চূড়ান্ত শুনানি শেষে হাইকোর্ট গত বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি রায় দেন।
হাইকোর্টের রায়ে এ মামলায় বিচারিক আদালত ও আপিল আদালতের দেওয়া রায় ও আদেশ বাতিল করা হয়েছে। রায়ে বলা হয়েছে, এ মামলার আসামি-দরখাস্তকারীদ্বয়কে ওই অভিযোগের দায় থেকে অব্যাহতি ও বেকসুর খালাস প্রদান করা হলো।
পূর্ণাঙ্গ রায়ে হাইকোর্ট বলেছেন, প্রসিকিউশন পক্ষের এক নম্বর সাক্ষী হচ্ছেন এজাহারকারী (মামলার বাদী)। এই সাক্ষীর দাখিল করা এজাহারের সঙ্গে তার দেওয়া সাক্ষ্যে যথেষ্ট গরমিল পরিলক্ষিত হয়।
রায়ে আরও বলা হয়, সার্বিক পর্যালোচনায় প্রতীয়মান হয়, প্রসিকিউশন পক্ষ দরখাস্তকারীদ্বয়ের (আসামি রাজ্জাক ও অন্য) বিরুদ্ধে অভিযোগ (দণ্ডবিধির ৩৮০ ও ৪১১ ধারা) প্রমাণে সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়েছেন। এজাহারকারী (মামলার বাদী) দরখাস্তকারীদ্বয়কে হয়রানি করতে এই মিথ্যা মামলা করেছেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আশেক মোমিন, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল লাকী বেগম ও ফেরদৌসী আক্তার। অবশ্য আসামিপক্ষে কোনো আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন না।