চার স্তরের নিরাপত্তায় শোলাকিয়া ঈদগাহে সকাল ১০টায় জামাত

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি

ঈদুল ফিতরের নামাজের জন্য প্রস্তুত কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠ। কিশোরগঞ্জ জেলা শহর থেকে প্রায় এক কিলোমিটার পূর্ব দিকে নরসুন্দা নদীর তীরে অবস্থিত এই ঈদগাহে এ বছর অনুষ্ঠিত হবে ঈদুল ফিতরের ১৯৭তম ঈদ জামাত। ঈদের জামাত শুরু হবে সকাল ১০টায়।

ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসন, ঈদগাহ পরিচালনা কমিটি ও কিশোরগঞ্জ পৌরসভা যৌথভাবে ঈদগাহের ছোট-বড় গর্ত ভরাট, বালু ফেলে সমান করে মাঠকে নামাজ আদায়ের উপযোগী করা এবং মাঠের চতুর্দিকে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ সম্পন্ন করেছে।

universel cardiac hospital

মুসল্লিদের জন্য পর্যাপ্ত অস্থায়ী ওজুখানা নির্মাণ ও পানীয় জলের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

সার্বিক নিরাপত্তা ও প্রস্তুতির বিষয়ে রোববার শোলাকিয়া ঈদগাহে কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ এবং র‌্যাব-১৪ ময়মনসিংহ ক্যাম্পের অধিনায়ক মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান পৃথক পৃথক প্রেস ব্রিফিং করেছেন।

তারা জানান, এ বছর নিরাপত্তা ব্যবস্থা অন্যান্য বারের তুলনায় দেড়গুণ বৃদ্ধি করা হয়েছে। চার স্তরের নিরাপত্তা বেষ্টনীতে ঢাকা থাকবে ঈদগাহ ও আশেপাশের পুরো এলাকা। প্রায় ১৩শ ইউনিফর্ম ও সিভিল পোশাক পরিহিত পুলিশ সদস্য ছাড়াও আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন, র‌্যাব ও বিজিবি নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবে। বিভিন্ন পয়েন্টে দায়িত্ব পালন করবে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণ ।

তারা আরও জানান, মাঠের পাঁচটি প্রবেশপথে থাকবে আর্চওয়ে। মাঠে ও মাঠের বাইরে পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। মাঠে নির্মাণ করা হয়েছে ছয়টি ওয়াচ টাওয়ার। মাঠে প্রবেশের আগেই বিভিন্ন চেকপোস্টে মুসল্লিদের মেটাল ডিটেক্টর দ্বারা তল্লাশি করা হবে। শক্তিশালী ড্রোন ক্যামেরার মাধ্যমে ঈদগাহ ও এর আশেপাশের এলাকা নিবিড় পর্যবেক্ষণের আওতায় আনা হবে। ঈদের দিন মাঠে আগত মুসল্লিদের প্রয়োজনে তাৎক্ষণিকভাবে স্বাস্থ্যসেবা দিতে সকাল থেকেই তিনটি মেডিকেল টিম দায়িত্ব পালন করবে।

প্রেস ব্রিফিংয়ে তারা জানান, বাংলাদেশ রেলওয়ে ঈদের দিন মুসল্লিদের আসা-যাওয়ার সুবিধার্থে ‘শোলাকিয়া স্পেশাল’ নামে দুটি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করেছে। ভৈরব থেকে সকাল ৬টায় কিশোরগঞ্জের উদ্দেশে একটি ট্রেন ছেড়ে আসবে এবং ময়মনসিংহ থেকে সকাল পৌনে ৬টায় অপর একটি ট্রেন কিশোরগঞ্জের উদ্দেশে ছেড়ে আসবে। নামাজ শেষে বেলা ১২টায় দুটি ট্রেনই ভৈরব ও ময়মনসিংহের উদ্দেশে ছেড়ে যাবে।

এদিকে মুসল্লিদের শুধু জায়নামাজ নিয়ে মাঠে প্রবেশের পরামর্শ দিয়েছে ঈদগাহ পরিচালনা কমিটি।

ঈদগাহ পরিচালনা কমিটি সূত্রে জানা গেছে, এবছরও শোলাকিয়া ঈদগাহের ইমাম মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ জামাতে ইমামতি, খুতবা ও দোয়া পাঠ করার কথা রয়েছে। বিকল্প ইমাম হিসেবে থাকবেন বড়বাজার জামে মসজিদের খতিব মাওলানা শোয়াইব বিন আব্দুর রউফ।

প্রসঙ্গত শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠ নিয়ে অনেক ইতিহাস রয়েছে। এরমধ্যে শোলাকিয়া সাহেব বাড়ির সন্তান লেখক ভক্টর সৈয়দ আলী আজহার রচিত ‘ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, শোলাকিয়া সাহেব বাড়ির পূর্ব পুরুষ শাহ সুফী মরহুম সৈয়দ আহম্মেদ ১৮২৭ খ্রিষ্টাব্দের শুরুতে শোলাকিয়া সাহেব বাড়িতে একটি মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন এবং সুদূর ইয়েমেন থেকে আগত শোলাকিয়া সাহেব বাড়ির পূর্ব পুরুম সুফি সৈয়দ আহমেদ তার নিজস্ব তালুকে ১৮২৮ সালে নরসুন্দা নদীর তীরে ঈদের জামাতের আয়োজন করেন। ওই জামাতে ইমামতি করেন সুফি সৈয়দ আহমেদ নিজেই। অনেকের মতে, মোনাজাতে তিনি মুসল্লিদের প্রাচুর্যতা প্রকাশে ‘সোয়া লাখ’ কথাটি ব্যবহার করেন। আরেক মতে, সেদিনের জামাতে ১ লাখ ২৫ হাজার (অর্থাৎ সোয়া লাখ) লোক জমায়েত হয়। ফলে এর নাম হয় ‘সোয়া লাখি’। পরবর্তীতে উচ্চারণের বিবর্তনে শোলাকিয়া নামটি চালু হয়ে যায়। আবার কেউ কেউ বলেন, মোগল আমলে এখানে অবস্থিত পরগনার রাজস্বের পরিমাণ ছিল সোয়া লাখ টাকা। উচ্চারণের বিবর্তনে সোয়া লাখ থেকে সোয়ালাখিয়া সেখান থেকে শোলাকিয়া হয়েছে। বর্তমানে জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে ঈদগাহ মাঠটি পরিচালিত হচ্ছে।

২০০৯ সাল থেকে শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠ কমিটির সভাপতি হিসেবে জেলা প্রশাসক ও সাধারণ সম্পাদক সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার দায়িত্ব পালন করছেন।

জেলা প্রশাসক ও শোলাকিয়া ঈদগাহ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, সব প্রস্তুতি প্রায় শেষের পথে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত মুসল্লিরা যেন নির্বিঘ্নে নামাজ আদায় করতে পারেন সেজন্য আমরা সব প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি। একটি সুন্দর ও সুশৃঙ্খল আয়োজনের মধ্য দিয়ে ১৯৭তম ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে।

জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ বলেন, সর্বোচ্চ নিরাপত্তা চাদরে ঢাকা থাকবে শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান। কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে। নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্য দিয়ে মুসল্লিদের প্রবেশ করতে হবে। নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে শুধু জায়নামাজ নিয়ে মুসল্লিরা প্রবেশ করতে পারবেন। মোবাইল বা ছোটখাটো ডিভাইস নিয়ে মাঠে প্রবেশ না করার জন্য আমরা প্রচার করছি। আশা করছি, সুন্দর পরিবেশে ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে।

কিশোরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মাহমুদ পারভেজ বলেন, মুসল্লিদের জন্য সুপেয় পানি, মেডিক্যাল টিম, দূরের মুসল্লিদের জন্য থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাসহ নানা আয়োজন সম্পন্ন করা হচ্ছে। পৌরসভার পক্ষ থেকে মাঠের ও আশপাশের সৌন্দর্যবর্ধন ছাড়াও রাস্তাঘাট মেরামত করা হচ্ছে। আমাদের পক্ষ থেকে আমরা সব ধরনের কাজ করে যাচ্ছি।

শেয়ার করুন