ইরানের ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর ইসরায়েলকে সংযম দেখানোর আহ্বান জানিয়েছেন দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী এহুদ ওলমার্ট। তিনি যুক্তি দেখিয়েছেন, ইরানের প্রায় ৯৯ শতাংশ ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকানো ইসরায়েলের দক্ষতার নাটকীয় বিজয় হয়েছে, যা ইরানিদের জন্য বড় অপমান।
ইরানের আক্রমণ সম্পর্কে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম এনডিটিভির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে ওলমার্ট বলেন, ‘শনিবার আমরা ইরানকে পরাজিত করেছিলাম- তেহরানের ছোড়া ৩০০টি ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোনের মধ্যে সাতটি ছাড়া বাকি সব ধ্বংস করে আমরা ইরানকে অপমান করেছি। এতে ইসরায়েল রাষ্ট্র… ইসরায়েলি বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং দক্ষতার একটি নাটকীয় বিজয় হয়েছে। তাই তাদের (ইসরায়েল সরকারের) প্রয়োজন নেই (সাড়া দেওয়ার জন্য), আমরা জিতেছি… আমাদের এই দ্বন্দ্ব চালিয়ে যাওয়ার দরকার নেই।’
ইরান আরও হামলা করবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাকে বলতে হবে… ইরানিরা বেশ বিশ্বাসযোগ্য। তারা যখন ঘোষণা করেছিল যে তারা আক্রমণ করবে, তারা করেছিল। তাই এখন, যখন তারা ঘোষণা করেছে যে তারা হামলা শেষ করেছে… আমি তাদের গুরুত্ব সহকারে নিতে চাই।’
তবে ইসরায়েলের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী অবশ্য জোর দিয়ে বলেন, ‘তেলআবিব যেমনটা আপনি কল্পনা করতে পারেন (যেমন) তার চোখ ও কান খোলা রাখবে এবং যদি কেউ, যে কারণেই হোক, আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত নেয় সে ক্ষেত্রে সমস্ত সিস্টেম প্রস্তুত রাখবে। কিন্তু ইসরায়েল সরকারের প্রতি আমার পরামর্শ হলো যে আমাদের এখন প্রতিক্রিয়া দেখানোর প্রয়োজন নেই।’
প্রসঙ্গত, এহুদ ওলমার্ট একজন ইসরায়েলি রাজনীতিবিদ এবং আইনজীবী। তিনি ২০০৬ সালে ইসরায়েলের ১২তম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বগ্রহণ করেন এবং ২০০৯ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন। তার আগে ১৯৮৮ থেকে ১৯৯২ এবং ২০০৩ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত মন্ত্রিপরিষদ মন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও তিনি ৯০ দশকে জেরুজালেমের মেয়রের দায়িত্বও পালন করেন।
এদিকে ইরানও ইসরায়েলকে প্রতিশোধমূলক হামলার বিষয়ে দুবার ভাবার আহ্বান জানিয়েছে। জাতিসংঘে এর ইরানি মিশন এক্সে বলেছে ‘বিষয়টি শেষ বলে মনে করা যেতে পারে। তবে ইসরায়েলি সরকার যদি আরেকটি ভুল করে, ইরানের প্রতিক্রিয়া যথেষ্ট বেশি কঠোর হবে।
এছাড়াও ইরানের স্বার্থের ওপর যেকোনও ধরনের আগ্রাসন চালানো হলে তাৎক্ষণিকভাবে তার কঠোর জবাব দেওয়া হবে বলে হুঙ্কার দিয়েছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি।
মঙ্গলবার কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল-থানিকে ইব্রাহিম রাইসি বলেছেন, ‘আমরা স্পষ্টভাবে ঘোষণা দিচ্ছি যে, ইরানি স্বার্থের বিরুদ্ধে যে কোনও অপরাধীর ন্যূনতম পদক্ষেপ অবশ্যই কঠোর, বিস্তৃত এবং বেদনাদায়ক প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে মোকাবিলা করা হবে।’
জাতিসংঘও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এ অঞ্চলে উত্তেজনার বিরুদ্ধে সতর্ক করেছে। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস নিরাপত্তা পরিষদকে বলেছেন, ‘আরেকটি যুদ্ধের ভার বিশ্ব বহন করতে পারবে না।’
উল্লেখ্য, গত ১ এপ্রিল সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে অবস্থিত ইরানি কনস্যুলেটে ভয়াবহ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইসরাইল। এতে বিপ্লবী গার্ডের দুই কমান্ডারসহ ৭ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা নিহত হন। প্রতিক্রিয়ায় শনিবার গভীর রাতে ইসলামিক বিপ্লব গার্ড কর্পস এবং অন্যান্য সশস্ত্র বাহিনী ইসরায়েল-অধিকৃত অঞ্চলগুলোতে তিন শতাধিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন দিয়ে ইরান এই হামলা চালায়। যদিও বেশিরভাগ ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলি ভূখণ্ডে পৌঁছানোর আগেই ধ্বংস করা হয়েছে বলে দাবি করেছে ইসরায়েল।
সূত্র: এনডিটিভি