হবিগঞ্জে এ বছর বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হওয়ায় ধানও ঠিকঠাক তুলতে পারছেন কৃষকরা। এতে আনন্দে উদ্বেলিত হাওরাঞ্চলের চাষিরা।
এদিকে চলতি মৌসুমে আবাদ ছাড়িয়ে গেছে লক্ষ্যমাত্রা। আবাদ বেশি হওয়ায় এবং বাম্পার ফলনের কারণে উৎপাদনও লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার আশা কৃষি বিভাগের।
সরেজমিনে জেলার কয়েকটি হাওর ঘুরে দেখা যায়, চৈত্রের শেষ দিকে এবং বৈশাখের শুরুতেই অধিক বৃষ্টিপাত শুরু হয়। কালবৈশাখী ঝড়ের সঙ্গে হয় শিলাবৃষ্টিও। অতিবৃষ্টির কারণে অনেক সময় হাওরে আগাম বন্যাও দেখা দেয়। এতে পাকা, আধাপাকা ধান তলিয়ে যায় বানের পানিতে। মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্তও হয়। হাহাকার দেখা দেয় কৃষক পরিবারগুলোর মধ্যে। কিন্তু এবার চিত্র সম্পূর্ণ বিপরীত। হবিগঞ্জে নেই ঝড়বৃষ্টি, নেই বন্যার আশঙ্কাও। হাওরেও বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষকরা ঠিকঠাক মতো ধান তুলতে পারছেন।
জেলায় এবার আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ১ লাখ ২২ হাজার ৮২৫ হেক্টর জমি। কিন্তু আবাদ হয় ১ লাখ ২৩ হাজার ৭৩৭ হেক্টর জমিতে। ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ লাখ ২০ হাজার ৬৫০ মেট্রিক টন। এছাড়া শ্রমিক সংকট মোকাবিলায় জেলায় এ বছর ৪৭৯টি হারেভেস্টার মেশিন হাওরে ধান কাটছে। ফসল ভালো হওয়া এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় খুশি কৃষকরাও।
অপরদিকে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনে বৃষ্টিপাতে কৃষকের আশার ফসল পানিয়ে তলিয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করতে বেশ কিছু নতুন জাতের ধান উদ্ভাবন করেছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি)। নতুন এ ধান বিঘাপ্রতি ২০ থেকে ২২ মণ ফলন হয়। ফলন যেমন ভালো তেমনি প্রাকৃতিক দুর্যোগও এটিকে তেমন নষ্ট করতে পারে না। প্রথমবারের মতো ব্রি নতুন জাতের এ ধান ফলিয়ে আশা জেগেছে কৃষকদের মধ্যে। কৃষক ঝুঁকিমুক্ত থাকলে দেশের খাদ্য নিরাপত্তাও নিশ্চিত হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
কৃষক মাহবুবুর রহমান জানান, এ বছর বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। খুব ভালো ফসল হয়েছে। আবহাওয়াও অনুকূলে আছে। তাই ধান ঠিকঠাক মতো তোলা যাচ্ছে। শুকানোও যাচ্ছে। এ বছর ধান তুলতে পেরে আমরা আনন্দিত। আশা করি দামও ভালো পাবো।
আব্দুল জব্বার বলেন, সামান্য বৃষ্টি হলেই আমাদের হাওরের ধান পানিতে তলিয়ে যায়। এ বছর আমরা সরকার থেকে দেওয়া নতুন ব্রি জাতের ধান চাষ করেছি। এগুলো একটু আগেই পাকে। তাই আমরা আগে কেটে নিতে পেরেছি। ফলন ভালো পেয়ে আমরা আনন্দিত।
জাফর ইকবাল চৌধুরী বলেন, কিছু উন্নত জাতের ধান সরকার এবার কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করেছে। যেগুলো চাষ করে যেমন ভালো ফলন পাওয়া যায়, তেমনি আগাম কাটাও যায়। ফলে এগুলো বন্যায় ক্ষতি করতে পারে না। তাছাড়া এ বছর সার্বিকভাবেই হাওরাঞ্চলে ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। এতে আশা করি দেশের খাদ্য চাহিদা পূরণে ভূমিকা রাখবে।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট হবিগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আবু সাইদ বলেন, নতুন ব্রি জাতের ধানগুলো যেহেতু স্বল্প জীবনকালীন জাতের ধান, তাই আগাম কাটতে পারেন কৃষকরা। এতে তারা বেশ লাভবান হন। ফলনও ভালো হয়, আবার আগাম কাটার কারণে দামও বেশি পান। দেশের খাদ্য ঘাটতি পূরণে নতুন নতুন জাতের ধান চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে। পাশাপাশি আমাদেরকেও তাদের সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করতে হবে।