অসলোতে পশ্চিমা কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় তালেবান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

নরওয়ের অসলোতে পশ্চিমা কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করছেন আফগান তালেবানের সদস্যরা। আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর এই প্রথম ইউরোপে আলোচনা করছে তালেবান। আজ সোমবার বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়।

আলোচনা তিন দিন ধরে চলার কথা। আলোচনায় আফগানিস্তানের মানবাধিকার পরিস্থিতি ও মানবিক সংকটের বিষয়টি গুরুত্ব পাবে। জাতিসংঘ বলছে, ৯৫ শতাংশ আফগানের খাওয়ার জন্য যথেষ্ট পরিমাণ খাদ্য নেই। আলোচনাকে কেন্দ্র করে ইউরোপে একাধিক বিক্ষোভ হয়েছে। সমালোচকেরা বলছেন, আলোচনা করে তালেবানকে পুরস্কৃত করা উচিত নয়। গতকাল রোববার নরওয়েতে তালেবান সদস্যরা মানবাধিকারকর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তবে এই বৈঠকে কী আলোচনা হয়েছে, তার বিস্তারিত বিবরণ প্রকাশ করা হয়নি।

নারীবাদী কর্মী জামিলা আফগানি বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, আলোচনায় সদিচ্ছা দেখিয়েছেন আলোচকেরা। আজ পশ্চিমা কর্মকর্তাদের সঙ্গে তালেবান সদস্যদের আলোচনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন বলে মনে করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকগুলোয় থাকা আফগানিস্তানের কোটি কোটি ডলার অর্থে প্রবেশাধিকারের অনুরোধ জানাতে পারে তালেবান।

আফগানিস্তানে বেকারত্ব অনেক বেড়ে গেছে। বেড়েছে খাদ্যের দাম। দেশটির মুদ্রার মান হ্রাস পাচ্ছে। ব্যাংকগুলো নগদ উত্তোলনের সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে। জাতিসংঘ সতর্ক করে বলেছে, আফগানিস্তানের জনসংখ্যার ৫৫ শতাংশ ক্ষুধার হুমকির মুখে। তালেবান প্রতিনিধি শফিউল্লাহ আজম একটি আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থাকে বলেন, ‘আমরা তাদের (পশ্চিমা) আফগান সম্পদ অবমুক্ত করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছি। রাজনৈতিক কারণে সাধারণ আফগানদের শাস্তি না দিতে বলেছি।’

শফিউল্লাহ আজম বলেন, ‘অনাহারের কারণে, মারাত্মক শীতের কারণে, আমি মনে করি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য সময় এসেছে, আফগানদের সমর্থন করার। রাজনৈতিক বিরোধের কারণে তাদের শাস্তি না দেওয়ার।’ পশ্চিমা রাষ্ট্রদূতেরা আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক তালেবান সরকার ও মানবাধিকারের ওপর জোর দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

ক্ষমতা গ্রহণের পর তালেবান বেশির ভাগ নারী কর্মীকে বাড়িতে থাকতে বলছে। মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলো শুধু ছেলে শিক্ষার্থী ও পুরুষ শিক্ষকদের জন্য খোলা রয়েছে। এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য বেশ কয়েকজন নারীকে তালেবান লক্ষ্যবস্তু হতে হয়েছে। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ এখন নিখোঁজ বলে জানা গেছে। তবে তালেবান এসব ঘটনায় তাদের জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করছে।

তালেবান ক্ষমতায় আসার পর মানবাধিকারকর্মী ও সাংবাদিকদেরও নিশানা করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো দেশ তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি। নরওয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যানিকেন হুইটফেল্ড বলেছেন, এই বৈঠক তালেবানকে বৈধতা দেওয়া বা স্বীকৃতির প্রতিনিধিত্ব করে না। নরওয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘তবে আমাদের অবশ্যই দেশটির কার্যত কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে হবে।’

সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) আফগানিস্তানে মানবিক সহায়তা প্রদানের সুবিধার্থে দেশটির রাজধানী কাবুলে ‘ন্যূনতম উপস্থিতি’ পুনঃপ্রতিষ্ঠা শুরুর ঘোষণা দেয়। এই ঘোষণা প্রসঙ্গে ইইউর পররাষ্ট্রবিষয়ক মুখপাত্র পিটার স্ট্যানো এক বিবৃতিতে বলেন, ‘কাবুলে আমাদের ন্যূনতম উপস্থিতিকে কোনোভাবেই তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি হিসেবে দেখা উচিত নয়।’

গত ১৫ আগস্ট কাবুলের পতন হয়। কাবুল পতনের মধ্য দিয়ে আফগানিস্তানের ক্ষমতা দ্বিতীয়বারের মতো তালেবানের হাতে যায়। পরের মাসে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের ঘোষণা দেয় তালেবান। তালেবানের ক্ষমতা দখলের পর পশ্চিমা দেশগুলো আফগানিস্তানের জন্য আন্তর্জাতিক সাহায্য স্থগিত করে। দেশটির বিদেশে থাকা সম্পদে প্রবেশাধিকার বন্ধ করে দেয়। এ কারণে আফগানিস্তানের মানবিক পরিস্থিতি গুরুতর আকার ধারণ করে।

শেয়ার করুন