উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগসহ বিভিন্ন দাবিতে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর বাইরে তৃতীয় একটি পক্ষ ‘ফায়দা হাসিল করার অপচেষ্টায় লিপ্ত’ বলে সন্দেহ প্রকাশ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শিক্ষক সমিতি।
একইসঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সংকট নিরসন ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফেরাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
শাবিপ্রবি উপাচার্যের বাসার পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার প্রতি ইঙ্গিত করে ঢাবি শিক্ষক সমিতি বলছে, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন বর্তমান অবস্থায় রূপান্তরের বিষয়টি ‘অত্যন্ত অনভিপ্রেত এবং উদ্বেগের’। এর পেছনে তৃতীয় কোনো পক্ষের ফায়দা হাসিলের অপতৎপরতা রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখার দাবিও জানান তারা।
সোমবার (২৪ জানুয়ারি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. রহমতউল্লাহ ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূইয়া স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিবৃতিতে এ দাবি জানানো হয়।
বর্তমান সমস্যা আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের কথা উল্লেখ করে সংবাদ বিবৃতিতে বলা হয়, চলমান পরিস্থিতিতে গতকাল (রোববার) আন্দোলনকারীরা হঠাৎ করেই উপাচার্যের বাসার পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে, যা অমানবিক এবং শিক্ষাঙ্গনের আন্দোলনে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত মাত্রা যুক্ত করেছে। শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে কোনো সমস্যা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করাই বাঞ্ছনীয়।
এ আন্দোলনকে সরকারবিরোধী আন্দোলনে রূপান্তরের অপচেষ্টা চলছে বলেও বিবৃতিতে দাবি করা হয়।
এ প্রসঙ্গে বিবৃতিতে হয়, বিভিন্ন গণমাধ্যমে আন্দোলনের গতি-প্রকৃতি সম্পর্কে যে ধরনের তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপিত হয়েছে তা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, শিক্ষক-শিক্ষার্থীর বাইরে তৃতীয় একটি পক্ষ এই আন্দোলনে ফায়দা হাসিল করার অপচেষ্টায় লিপ্ত। একটি বিশেষ মহল এ আন্দোলনকে সরকারবিরোধী আন্দোলনে রূপান্তরের অপচেষ্টা করছে বলে প্রতীয়মান হয়।
এতে আরও বলা হয়, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আমরা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য ও সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ের গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানাই। একইসঙ্গে সরকারকে আহ্বান জানাবো আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে অবিলম্বে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার সুষ্ঠু ও স্বাভাবিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে। পাশাপাশি পুলিশি হামলায় কারও কোনো উসকানি রয়েছে কি না, তা তদন্তের দাবিও জানাচ্ছি।
গত ১৩ জানুয়ারি থেকে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রভোস্ট কমিটির পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। পরে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিও সামনে আসে আন্দোলনে।
পরে ১৬ জানুয়ারি বিকেলে তিন দফা দাবি আদায়ে উপাচার্যকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইআইসিটি ভবনে অবরুদ্ধ করেন শিক্ষার্থীরা। পরে পুলিশ উপাচার্যকে উদ্ধার করতে গেলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ওই সময় পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ারসেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এতে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন। পুলিশ ৩০০ জনকে অজ্ঞাত দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা করে।
১৯ জানুয়ারি বিকেলে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে তার বাসভবনের সামনে আমরণ অনশন শুরু করে ২৩ জন শিক্ষার্থী। পরে তাদের সঙ্গে আরও চার শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছেন। অনশনে অসুস্থ ১৫ শিক্ষার্থী বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
এরইমধ্যে গত শনিবার (২২ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় শাবিপ্রবি শিক্ষক প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিজ বাসভবনে বৈঠক করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। বৈঠক শেষে তিনি আবারও সংকট নিরসনে শিক্ষার্থীদের আলোচনায় বসার অনুরোধ জানান।
এরমধ্যে গতকাল রোববার রাতে উপাচার্যের বাসভবনের বিদ্যুৎ, গ্যাস ও ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।