দখলদার ইসরায়েল কর্তৃক অধিকৃত ফিলিস্তিনি অঞ্চল পশ্চিম তীরের জেনিনে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর গুলিতে একজন ফিলিস্তিনি-আমেরিকান সাংবাদিক নিহত হয়েছেন।
কাতার-ভিত্তিক টেলিভিশন নেটওয়ার্ক আল জাজিরা জানায়, ইসরায়েলি বাহিনী ‘ঠাণ্ডা মাথায়’ এবং ‘ইচ্ছেকৃতভাবে’ ৫১ বছর বয়সী শিরিন আবু আকলাকে গুলি করে। একই ঘটনায় তার প্রযোজকও গুলিবিদ্ধ হন।
তবে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী সাংবাদিকদের টার্গেট করে গুলি চালানোর কথা অস্বীকার করেছে।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী দাবি করেছেন, গোলাগুলি চলার সময় ‘সম্ভবত’ ফিলিস্তিনি বন্দুকধারীদের গুলি লেগেছিল এদের গায়ে।
এদিকে ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট বলেছেন, এই ঘটনার জন্য তিনি পুরোপুরি ইসরায়েলি সরকারকেই দায়ী করেন।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলেছে, বুধবার সকালে তাদের সৈন্যরা এবং নিরাপত্তা বাহিনী জেনিনের শরণার্থী শিবিরে হামলা চালিয়েছিল ‘সন্দেহভাজন সন্ত্রাসবাদীদের’ ধরতে। এই অভিযানের সময় ফিলিস্তিনি বন্দুকধারীরা সৈন্যদের দিকে গুলি চালায়ে এবং বোমা নিক্ষেপ করে। সৈন্যরা তখন বন্দুকধারীদের দিকে গুলি চালায় এবং হামলার কিছু লক্ষ্যবস্তু চিহ্নিত করা হয়।
ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, শিরিন আবু আকলা যখন এই অভিযানের খবর দিতে সেখানে অবস্থান করছিলেন, তখন তার মাথায় গুলি লেগেছিল। খুবই সংকটজনক অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে পরে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
একই ঘটনায় আরেকজন ফিলিস্তিনি সাংবাদিক, আল জাজিরার প্রযোজক আলি সামুদির পিঠে গুলি লাগে। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, তিনি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন, তার অবস্থা স্থিতিশীল।
আল জাজিরা জানায়, আলি সামুদি তাদের বলেছেন, আমরা ইসরায়েলি সামরিক অভিযানের ভিডিও চিত্র ধারণ করতে যাই, হঠাৎ তারা আমাদের সতর্ক না করেই বা সেই স্থান ত্যাগ করার নির্দেশ না দিয়েই গুলি চালায়। প্রথম গুলিটি আমার গায়ে লাগে। এরপরের গুলি আঘাত করে শিরিনকে। সেখানে কোন ফিলিস্তিনি সামরিক প্রতিরোধই চলছিল না।
এক বিবৃতিতে আল জাজিরা বলেছে, এটা একটা নগ্ন হত্যাকাণ্ড, আন্তর্জাতিক আইন এবং রীতি-নীতি ভঙ্গ করে ইসরায়েলি দখলদার বাহিনী ঠাণ্ডা মাথায় ফিলিস্তিনে আল জাজিরার সংবাদদাতা শিরিন আবু আকলাকে হত্যা করেছে। আজ সকালে তিনি যখন সাংবাদিক হিসেবে তার দায়িত্ব পালন করছিলেন, নিজের সাংবাদিক পরিচয়ের চিহ্ন হিসেবে প্রেস জ্যাকেট পরে ছিলেন, তখন তাকে টার্গেট করে গুলি করা হয়েছে।
আল জাজিরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে এভাবে ‘ইচ্ছেকৃতভাবে টার্গেট করে সাংবাদিক হত্যার’ দায়ে ইসরায়েলি সরকার এবং সামরিক বাহিনীকে জবাবদিহিতার মুখোমুখি করার জন্য।
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস এই ঘটনার নিন্দা করে অভিযোগ করেছেন, সত্যকে আড়াল করা এবং নীরবে অপরাধ চালিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে এভাবে সাংবাদিকদের টার্গেট করে হামলা দখলদারদের নীতিরই অংশ।
তবে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেট এর জবাবে বলেছেন, মিস্টার আব্বাস ‘ভিত্তিহীন’ অভিযোগ করছেন।
এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, আমরা যে তথ্য সংগ্রহ করেছি, তাতে এমনটাই মনে হচ্ছে যে সশস্ত্র ফিলিস্তিনিরা – যারা সেসময় এলোপাথাড়ি গুলি করছিল- তারাই এই সাংবাদিকের দুর্ভাগ্যজনক মৃত্যুর জন্য দায়ী।
বেনেট আরও বলেন, জেনিনের ফিলিস্তিনিদের এক ভিডিওতে গর্ব করে বলতে দেখা গেছে, আমরা এক সৈন্যকে গুলি করেছি, সে মাটিতে পড়ে আছে। যদিও আসলে কোন ইসরায়েলি সেনা আহত হয়নি। এ থেকে এরকম সম্ভাবনাই বেশি মনে হয় যে, ফিলিস্তিনি সন্ত্রাসবাদীরাই এই সাংবাদিককে গুলি করেছে।
বেনেট জানিয়েছেন, ইসরায়েল ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যাতে নিহত সাংবাদিকের পোস্টমর্টেম যেন যৌথভাবে করা হয়, যাতে আসল সত্য জানা যায়। তবে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ সেই অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছে।