ইউক্রেনজুড়ে বিভিন্ন শহরে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের ঘটনায় রাশিয়ার কর্মকর্তা ও রুশপন্থি পণ্ডিতদের পক্ষ থেকে উদযাপনমূলক মন্তব্য আসতে শুরু করেছে। অথচ এদের অনেকেই অল্প কয়েক দিন আগেও ইউক্রেনে রণক্ষেত্রে ব্যর্থতার জন্য রুশ সেনাবাহিনীর সমালোচনায় মুখ খুলেছিলেন। এবার তারা সন্তুষ্টি প্রকাশ করে এই ধারা অব্যাহত রাখার দাবি জানাচ্ছেন। মার্কিন বার্তা সংস্থা এপি’র এক প্রতিবেদনে এসব কথা জানা গেছে।
রুশ জাতীয়তাবাদী বিশ্লেষক ও রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের যুদ্ধের খবর সংগ্রহকারী সাংবাদিকরা উপযুক্ত হিসেবে উল্লেখ করে সোমবারের হামলার প্রশংসা করছেন। তারা এটিকে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত, ইউক্রেনের পাল্টা আক্রমণ ও রাশিয়া-ক্রিমিয়ার একমাত্র সংযোগসেতুতে হামলার মোক্ষম জবাব হিসেবে উল্লেখ করছেন।
এদের অনেকে দাবি করছেন, মস্কোর উচিত যুদ্ধ জিততে এখন সোমবারের হামলার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা। কয়েকজন বিশ্লেষক ইঙ্গিত দিয়েছেন, ইউক্রেন সংঘাত কীভাবে পরিচালিত হবে সেই বিষয়ে মিত্রদের দৃষ্টিভঙ্গিতে জিম্মি হয়ে পড়েছিলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
স্বতন্ত্র থিংক ট্যাংক আর.পলিটিক-এর প্রতিষ্ঠাতা তাতিয়ানা স্টানোভায়া সোমবার এক মন্তব্য প্রতিবেদনে লিখেছেন, পুতিনের উদ্যোগ দুর্বল হয়ে পড়ছে এবং তিনি তার পারিপার্শ্বিকতা ও যারা তার জন্য ভুয়া জয় হাজির করছিলেন তাদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছিলেন। পরাজয়ের ভয় খুব শক্তিশালী। যারা এই সামরিক অভিযানে জড়িত তারা পুতিনের সিদ্ধান্তহীনতা ও কোনও কিছু এখনও শুরু না করার যুক্তিতে নিমজ্জিত ছিলেন এবং ধৈর্যের কৌশল লেগেছে বলে ভাবনাটা সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কয়েক সপ্তাহ ধরে পুতিন সমর্থকরা যুদ্ধক্ষেত্রে কঠোর পদক্ষেপের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। ক্রিমিয়া-রাশিয়ার সংযোগ সেতুতে বিস্ফোরণের পর এই দাবি আরও জোরালো হয়ে ওঠে। সেতুটি ছিল ইউরোপের দীর্ঘতম সেতু এবং রুশ সামরিক বাহিনীর শক্তির একটি প্রতীক। ২০১৮ সালে পুতিন নিজে এই সেতুর উদ্বোধন করেছিলেন।
রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় অর্থায়নে পরিচালিত আরটি টেলিভিশনের প্রধান মার্গারিটা সিমোনিয়ান সোশাল মিডিয়ায় প্রশ্ন তুলেছেন, এরপর কী?
ক্রেমলিনপন্থী কমসোমোলস্কায় প্রাভদা পত্রিকার সাংবাদিক আলেক্সান্ডার কটস লিখেছেন, যেসব ক্ষেত্রে আক্রান্ত হলে আমরা পাল্টা জবাব দেই এই সেতু হলো তেমন একটি।
সিনিয়র রুশ আইনপ্রণেতা সের্গেই মিরোনভ শনিবার লিখেছেন, এখন সময় ভয়ডরহীন, এমনকি নৃশংস লড়াইয়ের। এর চেয়ে বড় নিষেধাজ্ঞা আর হতে পারে না। তারা আর কোনও কথা বলবে না। আমাদের নিজেদের কাজ করতে হবে। আমরা শুরু করেছি, আমাদেরকেই শেষ করতে হবে। পিছু হটার কোনও সুযোগ নেই। জবাব দেওয়ার সময়।
তাদের প্রতীক্ষিত জবাব আসে সোমবার সকালে। গত কয়েক মাসের এই প্রথম একযোগে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভসহ বেশ কয়েকটি শহরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় রাশিয়া।
সোমবার আক্রমণের পর আরটি’র সিমোনিয়ান টুইটারে লিখেছেন, এটি হলো জবাব। শুরু থেকে ক্রিমিয়া সেতু ছিল একটি রেড লাইন।
চেচনিয়ার শাসক রমজান কাদিরভ বলেছেন, ইউক্রেনে রুশ সামরিক অভিযানের বর্তমান গতিমুখ নিয়ে তিনি শতভাগ খুশী। অথচ কয়েক দিন আগেই তিনি ইউক্রেনে ছোট আকারের পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের আহ্বান জানিয়েছিলেন।
মস্কো মনোনীত ক্রিমিয়ার গভর্নর সের্গেই আকসিয়োনভ সোমবারের হামলাকে ‘সুসংবাদ’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
উচ্ছ্বসিত ক্রেমলিন সমর্থকরা পুতিন ও রুশ সেনাবাহিনীর কাছে দাবি জানাচ্ছেন, আক্রমণের এমন গতি ধরে রাখতে এবং ইউক্রেনীয় অবকাঠামো ধ্বংস করার জন্য।
আকসিয়োনভ বলেছেন, শত্রুদের অবকাঠামো ধ্বংস করার এমন পদক্ষেপ প্রতিদিন নেওয়া উচিত ছিল। তাহলে মে মাসেই অভিযান শেষ হত এবং কিয়েভের শাসকরা পরাজিত হত।
তিনি আরও লিখেছেন, আমি আশা করি অভিযানের এই গতি এখন অব্যাহত থাকবে, মন্থর হয়ে পড়বে না।
আরটি’র শীর্ষস্থানীয় উপস্থাপক আন্তন ক্রাসোভস্কি টেলিগ্রামে লিখেছেন, ইউক্রেনের বিদ্যুৎ লাইনের ধ্বংস যথেষ্ট নয়।
রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের আরেক সাংবাদিক আন্দ্রেই মেদভেদেভ লিখেছেন, সোমবারের হামলা যৌক্তিক পদক্ষেপ। সামরিক পরিস্থিতি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি দাবি করছে। যদি গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোতে হামলা নিয়মিত চালানো হয়, যদি রেলপথ, সেতু ও বিদ্যুৎকেন্দ্রে আক্রমণ আমাদের কৌশল হয় তাহলে পরিস্থিতি পাল্টাবে। কিন্তু সরকারি বক্তব্য অনুসারে, আপাতত ইউক্রেনকে মধ্যযুগে পাঠিয়ে দেওয়ার কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।