বাণিজ্য, তাইওয়ান প্রশ্ন, ইউক্রেন যুদ্ধ, উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষাসহ একাধিক বিষয়কে কেন্দ্র করে সম্প্রতি চীন-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। এমনকি তাইওয়ান নিয়ে বেইজিংকে কার্যত পরোক্ষ সামরিক হুমকিও দিয়ে রেখেছে ওয়াশিংটন।
আর তাই উভয় দেশই অপরের সামরিক সক্ষমতার ওপর কড়া নজর রাখছে। এই পরিস্থিতিতে চীনের পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডার নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগনের দাবি, ২০৩৫ সালের মধ্যে চীনের পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডার তিন গুণ বাড়বে। মঙ্গলবার (২৯ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনের পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডার ২০৩৫ সালের মধ্যে তিন গুণ বাড়বে বলে মঙ্গলবার এক রিপোর্টে বলেছে পেন্টাগন। এসময় চীনের পারমাণবিক ওয়ারহেড তিন গুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়ে দেড় হাজারে পৌঁছাবে।
এএফপি বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বেইজিংকে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত করেছে ওয়াশিংটন। এছাড়া চীনের সামরিক বাহিনীর ওপর প্রস্তুত করা বার্ষিক প্রতিবেদনে দেশটি তার পারমাণবিক ও প্রচলিত সামরিক শক্তি উভয়ের উন্নতির ওপর জোর দিয়েছে বলেও দেখা গেছে।
মঙ্গলবার প্রকাশিত পেন্টাগনের ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ ধারণা করছে, (চীনের) অপারেশনাল পারমাণবিক ওয়ারহেডের মজুদ ৪০০ ছাড়িয়ে গেছে। চীন যদি তার পারমাণবিক সম্প্রসারণের গতি অব্যাহত রাখে তবে দেশটি সম্ভবত ২০৩৫ সালের মধ্যে প্রায় ১৫০০ ওয়ারহেড মজুত করবে।’
অবশ্য ২০৩৫ সালের মধ্যে চীনের পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডার ৩ গুণ বাড়লেও তা যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়ার অস্ত্রাগার থেকে অনেক পিছিয়েই থাকবে। কারণ বৈশ্বিক পরাশক্তি এই দেশ দু’টির প্রত্যেকের কয়েক হাজার করে পারমাণবিক ওয়ারহেড রয়েছে।
পেন্টাগনের ওই রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, চীন তার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের আধুনিকীকরণের জন্যও কাজ করছে যা পারমাণবিক অস্ত্র সরবরাহ করতে পারে। ২০২১ সালের মধ্যে এ ধরনের প্রায় ১৩৫টি পরীক্ষা চালিয়েছে দেশটি। যা কোনও সংঘাতে নিক্ষেপ করা ছাড়া বিশ্বের বাকি অংশের চেয়ে বেশি।
এছাড়া বেইজিংয়ের বিমান বাহিনীও দ্রত অগ্রগতি করছে বলে রিপোর্টে উল্লেখ করেছে পেন্টাগন। মার্কিন এই প্রতিরক্ষা দপ্তরের ভাষায়, ‘সক্ষমতার দিক দিয়ে চীন বেশ দ্রুততার সঙ্গে পশ্চিমা বিমান বাহিনীকে ধরে ফেলছে।’
প্রতিবেদন প্রকাশের আগে যুক্তরাষ্ট্রের একজন সিনিয়র প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা বলেন, চীনা বিমান বাহিনী ‘সকল ফ্রন্টে দ্রুত অগ্রগতি করার চেষ্টা করছে’। সামরিক সরঞ্জাম পরিচালনা এবং পাইলটসহ অন্যান্য কর্মী পরিচালনার ক্ষেত্রেও বেইজিং অগ্রগতি অর্জন করছে।
চীন যেভাবে ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নিজেদের সামরিক বাহিনীকে নিযুক্ত করছে তার লক্ষ্য নিয়ে পেন্টাগনের প্রতিবেদনটি বলেছে, এই অঞ্চলে বেইজিং ‘আরও শক্তিশালী এবং আক্রমণাত্মক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।’
এই অঞ্চলটিতে বিশেষত তাইওয়ানের আশপাশের এলাকাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তাইওয়ান প্রণালীর স্ব-শাসিত গণতান্ত্রিক এই দ্বীপকে বেইজিং নিজের প্রদেশ বলে দাবি করে থাকে।
এমনিতেই তাইওয়ান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে উত্তেজনা চলছে। তার ওপর গত আগস্টে মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির তাইওয়ানে সফর উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে দেয়। এর জেরে পেলোসির সফরের পরপরই তাইওয়ানের চারপাশে বিশাল সামরিক মহড়া শুরু করে চীন। সেসব মহড়া এখনও অব্যাহত রয়েছে। যদিও তা সীমিত পরিমাণে এবং মহড়ার মাত্রা কমিয়ে দিয়েছে চীনের সশস্ত্র বাহিনী।
সিনিয়র মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা বলেছেন, তাইওয়ানের চারপাশে চীনা সামরিক তৎপরতা হ্রাস পেলেও তা আগের চেয়ে বেশি।