আজ টেস্ট অভিষেকের গৌরবে সিলেট

ক্রীড়া ডেস্ক

সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের তিন পাশে চা বাগান, তার মাঝে উত্তরে টিলা, পশ্চিমে গ্রিন গ্যালারি আর দক্ষিণে ব্রিটিশ স্থাপত্যরীতির চা বাগান বাংলো ও স্থানীয় রীতির লাল রঙের ছাদের আদলে তৈরি গ্র্যান্ড স্ট্যান্ড- সব মিলিয়ে অনিন্দ্য সুন্দর এক স্থাপনা; যা সৌন্দর্যের মানদণ্ডে দেশের আর সব ভেন্যু থেকে এক নিমেষেই যোজন ব্যবধানে শীর্ষে রাখছে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের এ স্টেডিয়ামটিকে।

প্রকৃতির কোলে সৌন্দর্যের আধার হয়ে গড়ে ওঠা এই সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে আজ প্রথমবারের মতো গড়াতে যাচ্ছে ক্রিকেটের বনেদি আয়োজন- টেস্ট। দেশের অষ্টম আর বিশ্বের ১১৬তম এ টেস্ট ভেন্যুর অভিষেকটা হচ্ছে বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে ম্যাচ দিয়ে।

স্টেডিয়াম নিয়ে মাতামাতির ডামাডোলে নিচে পড়ে যাচ্ছে আসলে মাঠের লড়াই। সাধারণত যে কোনো ম্যাচের আগে আলোচনার মূলে থাকে ফলকেন্দ্রিক নানান অনুষঙ্গ- উইকেট, চ্যালেঞ্জ, একাদশ…।

কিন্তু আজ শনিবার সকাল সাড়ে ৯টায় শুরু ম্যাচটির আগে উপলক্ষ বা অভিষেকটাই হয়ে উঠেছে আলোচনার বড় বিষয়। সেসব একপাশে সরিয়ে রাখলে দুই ম্যাচের এই টেস্ট সিরিজ কিন্তু স্বাগতিকদের জন্য খুব নির্ভার থাকার সিরিজ নয়। বিশেষ করে সাদা পোশাকের সর্বশেষ মিশনে ওয়েস্ট ইন্ডিজে বিধ্বস্ত হওয়া আর এই সিরিজে সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবালের অনুপস্থিতির কারণে।

চিন্তার আরেকটি কারণ সিলেটের উইকেট। বাংলাদেশ দল গত মঙ্গলবার থেকে অনুশীলন করলেও উইকেটের আচরণ সম্পর্কে শতভাগ ধারণা করতে পারছে না। সিলেটের উইকেট মিরপুরের মতো স্পিনবান্ধব নয় বলে দেখা গেছে এতদিন। কিন্তু জাতীয় ক্রিকেট লীগের সর্বশেষ ম্যাচ আর অনুশীলনের সময় অসম বাউন্স আচমকাই যেন অননুমেয় বানিয়ে দিয়েছে এটিকে।

সাকিবের অনুপস্থিতিতে দ্বিতীয়বারের মতো সিরিজের অধিনায়কত্ব পাওয়া মাহমুদুল্লাহ রিয়াদও তেমনই বললেন গতকাল, আজ (শুক্রবার) সকালে উইকেট দেখেছি। আগামীকাল (আজ) সকালেও দেখব। কিছুটা শুকনো এ মুহূর্তে। মাঝে কিছু ঘাস আছে। তবে এ মুহূর্তে নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছি না।

উইকেট সম্পর্কে নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না বলে একাদশ বিষয়েও গতকাল পর্যন্ত স্থির সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানান রিয়াদ। তবে একটা বিষয় স্থির- ওয়ানডে সিরিজের মতো এখানে কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবেন না। টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচ বলে শক্তিশালী স্কোয়াডই নামাতে চায় বাংলাদেশ। যার অর্থ হচ্ছে, প্রথমবারের মতো জাতীয় দলে ডাক পাওয়া পেসার খালেদ আহমেদের ঘরের মাটিতে খেলা হচ্ছে না।

তবে সিলেটের দর্শকরা ‘সিলেটি’র আন্তর্জাতিক খেলা দেখা থেকে বঞ্চিতও হচ্ছে না। পেসার আবু জায়েদ রাহির একাদশে থাকার সম্ভাবনা প্রবল। বাংলাদেশ দল যদি দুই পেসার নিয়ে নামে, তাহলে মুস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে রাহি থাকবেন। আর স্পিনের দায়িত্বে থাকবেন মেহেদী হাসান মিরাজ, তাইজুল ইসলামরা।

এক্ষেত্রে আরিফুল হক তৃতীয় পেসার ও পঞ্চম বোলার হিসেবে টেস্ট ক্যাপ পেয়ে যেতে পারেন। আরিফুলের মতো টেস্ট অভিষেক হচ্ছে মোহাম্মদ মিঠুনেরও। রঙিন ক্রিকেটে ধারাবাহিকতার স্বীকৃতিস্বরূপ তামিম-সাকিববিহীন টপ বা মিডল অর্ডারে সুযোগ পেতে যাচ্ছেন ডানহাতি এ ব্যাটসম্যান। ওপেনিংয়ে ইমরুল কায়েসের সঙ্গে লিটন কুমার দাস ও ওয়ান ডাউনে মুমিনুল হক হয়ে মুশফিকুর রহিম, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদরা থাকবেন ব্যাটিং অর্ডারে।

পনেরো জনের স্কোয়াড থেকে একাদশের বাইরে থাকতে হবে খালেদের সঙ্গে নাজমুল হোসেন অপু ও শফিউল ইসলাম; সঙ্গে নাজমুল হোসেন শান্ত বা আরিফুলদের যে কোনো একজনকে।

শেষ পর্যন্ত একাদশ যা-ই হোক, মূল লক্ষ্য এক জায়গাতেই- জয়। সিলেটের মাটিতে বর্ণাঢ্য আয়োজনের অভিষেকে শেষ হাসি বাংলাদেশই হাসবে, এমন প্রত্যাশা স্বাগতিকদের স্বাভাবিকই। আর জিম্বাবুয়েকে সর্বশেষ চার টেস্টে হারানোর কথা মাথায় রাখলে জয় তো অতি আবশ্যকীয়ই। প্রকৃতির কোলে বনেদি ক্রিকেটের যাত্রাকাল রাঙাতে জয়ের চেয়ে মধুর আর কী হতে পারে?

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে