স্নাতকোত্তর পর্যায়ে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে খেয়াল বিষয়ে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হওয়ার গৌরব অর্জন করেন বাংলাদেশের পরাগ চক্রবর্তী। ভারত সরকারের শিক্ষবৃত্তি নিয়ে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকও সম্পন্ন করেন তিনি।
স্নাতক পর্যায়ে খেয়াল এবং ধ্রুপদ বিষয়ে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হন হয়েছিলেন পরাগ। বিষয়ভিত্তিক শ্রেষ্ঠত্বের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে খেয়ালে সঙ্গীতাচার্য্য গিরিজা শঙ্কর চক্রবর্তী পুরষ্কার এবং ধ্রুপদে আচার্য্য উদয়ভূষণ ভট্টাচার্য্য মেমোরিয়াল পুরষ্কারে ভূষিত হন।
অল্প বয়সেই সঙ্গীতের সাথে পরিচয় পরাগের। মাত্র সাড়ে তিন বছর বয়সে মায়ের কাছে সঙ্গীতের হাতেখড়ি হয়। এরপর অনিতা মোদকের কাছে কিছুদিন তালিম নেন। প্রশিক্ষণ নেন নজরুল একাডেমীতে। সেখানে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে ৭ বছর মেয়াদী কোর্স সম্পন্ন করেন। নজরুল একাডেমীতে পরাগ খালিদ হোসেন, জাকির হোসেন, সোহরাব হোসেন, সালাহ্উদ্দীন আহ্মেদ, ফাতেমা-তুজ-জোহরার মতো দেশবরেণ্য শিল্পীদের সান্নিধ্য পেয়েছেন। পরবর্তীতে শ্রী সুনীল কুমার মন্ডলের কাছে প্রায় ৪ বছর ধ্রুপদীসঙ্গীতের তালিম নেন। একই সময় মইদুল ইসলামের কাছে ধ্রুপদীসঙ্গীতের সাথে সাথে নজরুল সঙ্গীতের তালিম নিয়েছেন। বেঙ্গল ফাউণ্ডেশন আয়োজিত “পরম্পরা” শীর্ষক শাস্ত্রীয় সঙ্গীত কর্মশালায় পর পর দু’বছর তালিম নিয়েছিলেন কিরানা ঘরাণার বর্তমান কর্ণধার উস্তাদ মাশকুর আলী খান সাহেবের কাছে। তারপর শ্রী অনুপ বড়ুয়ার কাছে তালিম নিতে শুরু করেন এবং ছায়ানট সঙ্গীত বিদ্যায়াতনে শাস্ত্রীয় সঙ্গীত বিভাগে ভর্তি হন। কিন্তু সেখানে কোর্স সম্পন্ন করতে পারেননি। ভারত সরকারের শিক্ষা বৃত্তি নিয়ে পড়তে চলে যান রবীন্দ্রভারতীতে।
২০১৩ সালে আই.সি.সি.আর স্কলারশিপ নিয়ে ভর্তি হন কোলকাতায় রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের কণ্ঠসঙ্গীত বিভাগে। বিষয় হিসেবে নির্বচন করেন- খেয়াল। সেই সাথে আইটিসি সঙ্গীত রিসার্চ একাডেমীতে উস্তাদ মাশকুর আলী খানের কাছে খেয়ালের তালিম নিতে শুরু করেন। আচার্য্য সিদ্ধেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের কণ্যা শ্রীমতি কৃষ্ণা মজুমদারের কাছে সেমি-ক্লাসিক্যাল বাংলা গান, শ্রীমতি সুপ্রিয়া দে দত্তের কাছে খেয়াল এবং রবীন্দ্রভারতীর শিক্ষক শ্রী সুজয় চন্দ্রের কাছে আধুনিক ও সেমি-ক্লাসিক্যাল গানের তালিম নেন পরাগ।
বাংলাদেশ টেলিভিশন আয়োজিত ‘নতুন কুঁড়ি-২০০২’ এ শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে প্রথম ও নজরুল সঙ্গীতে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন। এছাড়া বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক শিশু কিশোর মেলাসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে শাস্ত্রীয় সঙ্গীত , নজরুল সঙ্গীত, রবীন্দ্র সঙ্গীত, দেশাত্মবোধক গানে প্রথম স্থান অর্জন করেন। শুধু তাই নয়, তিনি ২০০০ সাল থেকে শিশুশিল্পী হিসেবে এবং ২০১২ সাল থেকে বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনে শাস্ত্রীয় সঙ্গীত ও নজরুল সঙ্গীতে তালিকাভূক্ত শিল্পী।
পরাগ স্বপ্ন দেখেন নিজের সৃজনশীলতাকে আরো শাণিত করে একজন যথার্থ শিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার। পাশাপাশি, শিক্ষকতার দিকটি তার ভীষণ প্রিয়। সঙ্গীত শিক্ষক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার ইচ্ছে তার। এতে করে তিনি মনে করেন সঙ্গীত সাধনা প্রজন্মের কাছে ছড়িয়ে দেয়া যাবে।