রাখাইনে নতুন করে সংঘাত, পালিয়ে আসা বিজিপির সংখ্যা বাড়ছে

মত ও পথ ডেস্ক

ফাইল ছবিটি সংগৃহীত

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে জান্তা বাহিনী ও বিদ্রোহী আরাকান আর্মির মধ্যে সংঘাতের জের ধরে গত তিন দিনে নতুন করে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর ৮০ জন সদস্য বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন।

বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম জানিয়েছেন, সর্বশেষ গত ১৬ এপ্রিল রাতে ৪৬ জন পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। এর আগের দিন আসেন আরও ১৮ জন।

এর আগে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে তিন শতাধিক বিজিপি সদস্য আশ্রয় নিয়েছিলেন বাংলাদেশে। একাধিক সীমান্ত চৌকি আরাকান আর্মির দখলে যাওয়ায় সে সময় তাদের পালাতে হয়েছিল।

গত ২ ফেব্রুয়ারি থেকে নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম সীমান্তের ওপারে আরাকান আর্মির সঙ্গে মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ বা বিজিপির সংঘর্ষ শুরু হয়। সে সময় জান্তা বাহিনীর দখলে থাকা সীমান্ত চৌকিগুলোর নিয়ন্ত্রণ নেয় বিদ্রোহীরা।

সীমান্ত চৌকিগুলোতে আরাকান আর্মির অভিযানের তীব্রতায় টিকতে না পেরে বাংলাদেশ পালিয়ে আসেন মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ বা বিজিপির সদস্যরা।

সংঘাতে মিয়ানমারের রাখাইনসহ অনেক এলাকায় জান্তা বাহিনীকে হটিয়ে বিদ্রোহী আরাকান আর্মি নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল। কিন্তু সম্প্রতি ওই এলাকায় নতুন করে সংঘাত ও সংঘর্ষ বেড়েছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

জান্তা সরকারের কাছ থেকে মংডু ও বুধিডং শহরে আধিপত্য কেড়ে নিতে গত দুই মাস ধরে লড়াই চালাচ্ছে আরাকান আর্মি।

ঘুমধুম থেকে কয়েকদিন ধরে দূরে সংঘর্ষের আওয়াজ পাচ্ছেন টেকনাফের স্থানীয় বাসিন্দারা। বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে খানিকটা দূরে অবস্থিত ওই শহরতলো থেকে গত মঙ্গলবারও গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে।

জান্তা বাহিনীর সঙ্গে আরাকান আর্মির যুদ্ধক্ষেত্র মূলত রাখাইন রাজ্যের বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকা। চীন ও রাখাইনের যে নয়টি শহর তারা দখলে নিয়েছে সেগুলোও সীমান্তের কাছাকাছি।

দূরত্বের হিসাব-নিকাশসহ বেশ কয়েকটি কারণে বিজিপি সদস্যরা বাংলাদেশে আসাটা অপেক্ষাকৃত নিরাপদ মনে করে বলে ধারণা করা হয়। হয়তো মিয়ানমারের অন্য শহরে ফেরত যাওয়ার রাস্তা তাদের নেই, গেলেও কোর্টমার্শালের (সামরিক আদালতে বিচার) ঝুঁকি থেকে যায়। আবার তাদের মধ্যে আরাকান আর্মির হাতে পড়ার ভয়ও রয়েছে। সে কারণে বাংলাদেশে পালিয়ে চলে আসতে পারলে সে শঙ্কাগুলো থেকে রেহাই মেলে।

বাণিজ্যিক কারণে বাংলাদেশের কাছেও গুরুত্ব আছে মংডুর। এই পথে বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের সীমান্ত বাণিজ্য হয়ে থাকে। আগে বিশেষ ট্রানজিট পাসের মাধ্যমে টেকনাফ ও মংডুর লোকজনকে সীমান্ত পেরিয়ে দুদেশে যাতায়াতের সুযোগ দেয়া হতো। ২০১৬ সালে মংডুর সীমান্ত চৌকিতে হামলার পর সে ট্রানজিট পাস বন্ধ করে দেওয়া হয়।

আরাকান আর্মি শহরটি দখল করতে পারলে বাংলাদেশের সঙ্গে ভূমি সীমান্ত এবং নাফ নদীতে জান্তা সরকারের আর কোনো অবস্থান থাকবে না। যেহেতু বুধিডং ও মংডুতে জান্তা বাহিনীর ঘাঁটি রয়েছে- ফলে ওই অঞ্চলের পতন হলে শত শত জান্তা সেনা ও বিজিপি সদস্য আবারো বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে পারেন।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

শেয়ার করুন