জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক দূত ইয়াং লি হুশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, আগামী মাসে বসতিহীন ঘূর্ণিঝড়প্রবণ দ্বীপ ভাসানচরে ২৩ হাজার শরণার্থীকে স্থানান্তরের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে গেলে রোহিঙ্গাদের জন্য নতুন সংকট তৈরি হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
দোহাভিত্তিক আলজাজিরা এমন তথ্য জানিয়েছে।
সম্প্রতি তিনি ওই চরটি পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। সোমবার জেনেভায় মানবাধিকার পরিষদে তিনি বলেন, বঙ্গোপসাগরের ওই দ্বীপটি বাসযোগ্য কিনা, তা নিয়ে আমার সন্দেহ রয়েছে।
শরণার্থীদের ইচ্ছার বাইরে গিয়ে ভাসানচরে তাদের স্থানান্তরের অশুভ-পরিকল্পনা নতুন সংকট তৈরি করবে বলে সতর্ক করে দেন জাতিসংঘের মিয়ানমারবিষয়ক এ বিশেষ দূত।
রোহিঙ্গা অধিকারকর্মীরা বলেন, শরণার্থীরা কার্যত ভাসানচরে আটক পড়ে যাবেন। কাদামাটি ও নিম্নভূমির এই চরটিতে বর্ষাকালে প্রায় ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে।
২০১৭ সালের শেষ দিক থেকে রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর জাতিগত নিধন অভিযান শুরু হলে সাড়ে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন।
প্রাণ নিয়ে পালিয়ে আসা এসব শরণার্থীর মুখ থেকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর হত্যা, ধর্ষণ, অঙ্গহানি, বসতবাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও নিপীড়নের বিবরণ পাওয়া যায়।
রোহিঙ্গা অধিকারকর্মী স্যান লিউইন বলেন, তিনি মনে করেন, রোহিঙ্গাদের সেখানে স্থানান্তরের মাত্র একটি উপায় আছে, সেটি হলো বলপ্রয়োগ।
তিনি বলেন, আশ্রয় শিবিরের সবাই ভাসানচরে যাওয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করবে, এটি নিশ্চিত। কেউ সেখানে স্থানান্তর হতে চাইবে না।
গত জানুয়ারিতে থাইল্যান্ড ও বাংলাদেশে সফর নিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার প্রেক্ষাপটে ইয়াং লি সোমবার এসব মন্তব্য করেন।
শান্তিতে নোবেলজয়ী অং সান সু চির সরকার তাকে মিয়ানমারে ঢোকার অনুমতি দেয়নি। এমনকি মিয়ানমারের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে তার লিখিত প্রশ্নেরও কোনো জবাব দেয়নি।
সম্প্রতি প্রকাশিত প্রতিবেদনে লি বলেন, ভাসানচরে পূর্ণাঙ্গ প্রযুক্তিগত ও মানবিক মূল্যায়ন করতে জাতিসংঘকে সুযোগ দিতে হবে।
তারা সেখানে যেতে ইচ্ছুক কিনা, সেই সিদ্ধান্ত নিতে সেখানকার পরিস্থিতি সরেজমিন দেখে আসার সুযোগ দিতে হবে রোহিঙ্গাদের।
বাংলাদেশ চরটিকে বাসযোগ্য করে গড়ে তুলতে চীন ও ব্রিটিশ প্রকৌশলীদের নিয়োগ দিয়েছে ।
এতে ব্রিটিশ এইচআর ওয়ালিংফোর্ড ফার্মকে নিয়োগ দেয়ায় ব্রিটেনভিত্তিক মানবাধিকার কর্মীরা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
গত ডিসেম্বরে অ্যাডভোকেসি গ্রুপ বার্মা ক্যাম্পেইন ইউকে ভাসানচর প্রকল্পে এই ব্রিটিশ ফার্মকে অন্তর্ভুক্ত করার প্রতিবাদ জানিয়ে এটিকে জঘন্য তালিকা হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। তারা বলছে, এইচআর ওয়ালিংফোর্ড মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রকল্পগুলোতে জড়িত।