ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের অনিয়ম ও জালিয়াতির অভিযোগ খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কমিটির পক্ষ থেকে কোনো প্রার্থীর অভিযোগ থাকলে চারদিনের মধ্যে অভিযোগপত্র জমা দিতে বলা হয়। তবে শেষ সময় পর্যন্ত মাত্র একজন প্রার্থী অভিযোগ জমা দিয়েছেন।
শুক্রবার সন্ধ্যায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব ও জ্যেষ্ঠ সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক ড. মাকসুদুর রহমান।
অভিযোগপত্র জমা না দেয়ার বিষয়ে একাধিক প্রার্থী বলেন, নির্বাচনে কী হয়েছে, তা সবাই জানে। কিন্তু প্রশাসন যেহেতু কিছুই করতে পারেনি, সেহেতু তদন্ত কমিটি কিছুই করতে পারবে না। সুতরাং অভিযোগ জমা দেওয়া একটি বৃথা কাজ।
জানা গেছে, গত রোববার নির্বাচনের অনিয়ম খতিয়ে দেখতে কোনো ব্যক্তির যদি আরো কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকে, তবে তা লিখিতভাবে তথ্য-প্রমাণাদিসহ নিজের বিস্তারিত পরিচয় (মোবাইল নম্বরসহ) কমিটির সদস্য সচিব ও সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. মাকসুদুর রহমানের কাছে জমা দিতে বলা হয়। গত বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত অভিযোগ জমা দেওয়ার শেষ সময় ছিল।
এর আগে গত সপ্তাহে ২১ মার্চ বৃহস্পতিবার বিভিন্ন প্রার্থীদের দেওয়া অনিয়ম খতিয়ে দেখতে সাত সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কমিটিকে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়।
কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের সংখ্যাতিরিক্ত অধ্যাপক সাজেদা বানু ও সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক মো. মাকসুদুর রহমানকে সদস্য সচিব করে এই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এ ছাড়া কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- ইন্টারন্যাশনাল হলের প্রাধ্যক্ষ মো. মহিউদ্দিন, অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শফিক উজ জামান, সিন্ডিকেট সদস্য মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির এবং পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. শারমিন রুমি আলীম।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব মাকসুদুর রহমান বলেন, ‘আমরা গত রোববার থেকে বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত চারদিন অভিযোগ জমা দিতে প্রার্থীদের সময় দিয়েছি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত রাশেদ খান নামের একজন প্রার্থী অভিযোগ জমা দিয়েছেন। আমরা তাকে আগামী রোববার দুপুরে ডেকেছি। তার অভিযোগ কতটুকু সত্য তা যাচাই বাছাই করা হবে।’
রাশেদ খান কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’-এর অন্যতম যুগ্ম আহ্বায়ক। তিনি ডাকসুর জিএস পদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। শুধু রাশেদই অভিযোগপত্র জমা দিয়েছেন।
এ ব্যাপারে রাশেদ বলেন, ‘আমি নির্বাচনের দিন যা দেখেছি এবং বিভিন্ন সংবাদপত্রে যা এসেছে, শুধু সেই বিষয়েই অভিযোগ দিয়েছি। এর মধ্যে বিভিন্ন হলে কৃত্রিম লাইন, শহীদুল্লাহ হলে লুডু খেলা, শিক্ষকদের সহায়তা না করা, কোটা সংস্কার প্রার্থীদের বাধা দেওয়াসহ প্রার্থীদের ওপর হামলা, রোকেয়া ও কুয়েত মৈত্রী হলের জালিয়াতি ও অনিয়ম ইত্যাদি বিষয়ে ২০ পাতার সংযুক্তি জমা দিয়েছি।’
তবে অভিযোগ জমা না দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ডাকসু নির্বাচনের জিএস পদের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ঢাবি সাংবাদিক সমিতির সভাপতি আসিফুর রহমান বলেন, ‘এর মধ্যে অসংখ্য তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কিন্তু তার একটা প্রতিবেদনও প্রকাশ করা হয়নি। আমরা তদন্ত কমিটির ওপর আস্থা রাখতে পারছি না। এ জন্য জমা দেইনি।’
আসিফুর রহমান আরো বলেন, ‘ডাকসু নির্বাচনে কী হয়েছে, তা পুরো বাংলাদেশের লোক জানে। অনেক শিক্ষকও অনিয়মের বিষয়টি শিকার করেছেন। কিন্তু এই অনিয়ম ও জালিয়াতির বিরুদ্ধে যেহেতু প্রশাসন কিছুই করতে পারেনি, সেহেতু তদন্ত কমিটিও কিছুই করতে পারবে না।’