শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশকে (আইসিবি) ৮৫৬ কোটি টাকা দেয়ার সরকারি সিদ্ধান্তে আজ রোববার দেশের শেয়ারবাজারে উত্থান হয়েছে।
এদিন দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) মূল্যসূচকে সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে সব থেকে বড় উত্থান হয়েছে। সেই সঙ্গে খরা কাটিয়ে বেড়েছে লেনদেনের গতি।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার তিনটি শর্ত দিয়ে শেয়ারবাজারে ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় প্রণোদনা স্কিমের ৮৬৫ কোটি টাকা আইসিবির মাধ্যমে পুনর্ব্যবহারের জন্য সম্মতি দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ।
অর্থ বিভাগের ওই সম্মতিপত্রে বলা হয়েছে, বর্তমান পুঁজিবাজারে লেনদেনে নিম্নগতির ধারা প্রতিরোধে প্রণোদনা প্যাকেজের সুদ ও আসলসহ আদায়কৃত ৮৫৬ কোটি টাকা পুনর্ব্যবহারের সম্মতি দেয়া হলো। আইসিবির মাধ্যমে এ তহবিলের অর্থ বিতরণ করা হবে।
বিতরণকৃত ঋণের সুবিধাভোগী ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের তালিকা তৈরিসহ আরও বড় পরিসরে তারল্য জোগানের সম্ভাব্যতা নির্ধারণ ও তহবিলের দেখভাল করবে বিদ্যমান কমিটি। তহবিলটির মেয়াদ ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর থেকে বাড়িয়ে ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্ধারণ করা হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে গত ৩ মে এক প্রাক-বাজেট আলোচনায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানের মো. মোশারফ হোসেন ভুঁইয়া জানান, আগামী অর্থবছরের (২০১৯-২০) বাজেটে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের জন্য বিশেষ সুবিধা দেয়া হবে।
তার ওই ঘোষণায় বৃহস্পতিবারই মন্দা কাটিয়ে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় ফেরার ইঙ্গিত দেয় শেয়ারবাজার। পতনের ধারা কাটিয়ে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক প্রায় ১০০ পয়েন্ট বেড়ে যায়। আর শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের জন্য আইসিবিকে তহবিল প্রদানে অর্থ মন্ত্রণালয় সম্মতি দেয়ায় রোববার (৫ মে) শেয়ারবাজারে বড় ধরনের উত্থান হয়েছে।
রোববার দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের কার্যদিবসের তুলনায় ১০৮ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ৩৯৪ পয়েন্টে উঠে এসেছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ সূচক ১৫ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ২৪০ পয়েন্টে পৌঁছেছে। আর ডিএসই-৩০ সূচক ৩১ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৯০১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
মূল্যসূচকের এমন উত্থানে আজ ডিএসইতে সিংহভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেয়া ২৯২টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে। বিপরীতে কমেছে ৩৮টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৫টির দাম।
মূল্যসূচক ও সিংহভাগ প্রতিষ্ঠানের দর বাড়ার পাশাপাশি ডিএসইতে বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণ। দিনভর ডিএসইতে আজ লেনদেন হয়েছে ৫৩৫ কোটি ৯৫ লাখ টাকার শেয়ার।
আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ৪৭৫ কোটি ২৯ লাখ টাকার শেয়ার। সে হিসেবে লেনদেন বেড়েছে ৬০ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। আর দেড় মাস বা ৩০ কার্যদিবস পর ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ ৫ শ’ কোটি টাকার ঘর স্পর্শ করতে পারলো।
লেনদেনের এই উত্থানের দিনে বাজারটিতে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের শেয়ার। আজ কোম্পানিটির মোট ১৯ কোটি ৮৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
১৭ কোটি ৬৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনে দ্বিতীয় স্থানে ন্যাশনাল টিউবস এবং ১৩ কোটি ৭৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনে তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে ফরচুন সুজ।
এছাড়া লেনদেনের শীর্ষ ১০ কোম্পানির মধ্যে রয়েছে- মুন্নু সিরামকি, ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন, বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবলস, ন্যাশনাল পলিমার, জিনেক্স ইনসোসিস, অ্যাকটিভ ফাইন এবং এস্কয়ার নিট কম্পোজিট।
অন্যদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএসসিএক্স ২০৪ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৯৮৮ পয়েন্টে।
বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ২৮ কোটি ৩১ লাখ টাকার শেয়ার। লেনদেন অংশ নেয়া ২৫৯টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দাম বেড়েছে ২১৭টির, কমেছে ৩২টির আর অপরিবর্তিত রয়েছে ১০টির দাম।