নিরাপত্তা হেফাজত নিয়ে বিচারিক নীতিমালা কেন প্রণয়ন করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে লিরা বড়ুয়া নামের এক ভিকটিমকে আইন-বহির্ভূতভাবে নিরাপত্তা হেফাজতে পাঠানো ম্যাজিস্ট্রেটের (ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত) আদেশ কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না রুলে তাও জানতে চেয়েছেন আদালত।
আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদসহ সংশ্লিষ্ট ছয়জনকে এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
লিরা বড়ুয়ার বাবার দায়ের করা এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে আজ মঙ্গলবার হাইকোর্টের বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
আদালতে মঙ্গলবার রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া।
এর আগে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি নিরাপত্তা হেফাজতে থাকা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী লিরা বড়ুয়াকে ধর্মান্তরিত করার ব্যাখ্যা চেয়ে একটি আইনি নোটিশ পাঠান লিরার বাবা দেবব্রত বড়ুয়া।
ওই নোটিশে বলা হয়, ‘২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর লিরা বড়ুয়া নিজ বাসা থেকে বেরিয়ে যান। এরপর ৩ নভেম্বর লিরা তার নিজের নিরাপত্তা হেফাজত চেয়ে রমনা থানায় আবেদন জানান।
পরদিন (৪ নভেম্বর) থানা থেকে তাকে নিরাপত্তা হেফাজত দেয়ার কথা বলা হলেও এদিন লিরা কোথায় ছিল তার কোন জবাব পাওয়া যায়নি। এরপর পুলিশ লিরাকে ৫ নভেম্বর আদালতে উপস্থাপন করে তার নিরাপত্তা হেফাজতের আবেদন জানায়। সে আবেদনের ভিত্তিতে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদে লিরাকে নিরাপত্তা হেফাজত দিতে নির্দেশ দেন আদালত।
আদালতের নির্দেশ অনুসারে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ লিরাকে নিরাপত্তা হেফাজতের জন্য রাখে। কিন্তু এর দুই মাস পর এ বিষয়ে আদালতে শুনানির দিন নির্ধারণ থাকলেও লিরার অসুস্থতার কারণে তাকে আর আদালতে হাজির করা হয়নি।
আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া জানিয়েছিলেন, চলতি বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি মামলার দিন নির্ধারিত ছিল। সেদিন আইনজীবী হিসেবে আমি এবং মেয়েটির বাবা আদালতে হাজির হয়ে জানতে পারি ২০ ফেব্রুয়ারির আগেই গত ১১ ফেব্রুয়ারি একটি এবং এরপরে আরও একটি আবেদন দিয়ে লিরা নিজের জিম্মায় যেতে আদালতে আরজি জানিয়েছে।
কিন্তু ওইসব আবেদনে ‘লিরা বড়ুয়া’র স্থানে ‘লিরা ইয়াসমিন’ নাম লেখা দেখতে পাই। এ বিষয়ে আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট তার নাম কিংবা ধর্ম পরিবর্তনের কোনো এফিডেভিটের বিষয়ে প্রশ্ন না করেই মেয়েটিকে তার নিজের জিম্মায় যাওয়ার আদেশ দিয়ে ছেড়ে দেন। এরপর বিভিন্নভাবে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করা হলেও তারা এ বিষয়ে আমাদের কোনো সহযোগিতা করেনি। এতে লিরার বাবা-মা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন।
তিনি জানান, নিরাপত্তা হেফাজত হলো এক প্রকারের কারাগার। অথচ সেই নিরাপত্তা হেফাজতে থাকাকালেই লিরা বড়ুয়া কীভাবে লিরা ইয়াসমিন হলো- আইনি নোটিশে তা জানতে চাওয়া হয়।
একইসঙ্গে আদালত কিংবা অন্য কোথাও লিরার ধর্মান্তরিত হওয়ার তথ্য-প্রমাণ এবং লিরার অবস্থান সম্পর্কে তার বাবা-মাকে অবহিত করতে নোটিশে অনুরোধ জানানো হয়। অন্যথায় প্রতিকার চেয়ে মামলা করা হবে বলেও নোটিশে উল্লেখ করা হয়।
এরপর গত ৫ নভেম্বর ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক লিরা বড়ুয়াকে মহিলা পরিষদের নিরাপত্তা হেফাজতে দেয়ার আদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে তার বাবা রিট দায়ের করেন। গত ৫ মে দায়ের হওয়া ওই রিটের শুনানি নিয়ে আজ আদালত এই রুল জারি করলেন।