“অর্থবছরের শুরু থেকেই পরিকল্পিতভাবে প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্য নিয়েই বাজেটে এ নতুন সংস্কারটি নিয়ে আসা হয়েছিল। কিন্তু সেটার কোনো ফলাফল দেখা যাচ্ছে না।”
আওয়ামী লীগ সরকার শুরু থেকেই উন্নয়নকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে চলতি অর্থবছর (২০১৮-১৯) থেকে উন্নয়ন প্রকল্পের গতি বাড়াতে নিয়ে আসা হয় নতুন একটি সংস্কার প্রস্তাব। অর্থাৎ প্রকল্পে অর্থছাড় সহজ করা হয়।
এক্ষেত্রে সরকারি তহবিলের অর্থ ৪ কিস্তিতে ছাড় করার নিয়ম ছিল। কিন্তু প্রথম ও দ্বিতীয় কিস্তি হিসেবে ছাড়ের কোনো বিষয় থাকবে না বলে জানিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী (বর্তমানে সাবেক) আবুল মাল আবদুল মুহিত।
জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করতে গিয়ে তিনি বলেন, অর্থছাড়ে আমূল সংস্কার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে সরকারি প্রতিষ্ঠানের বাস্তবায়িত প্রকল্পের সরকারি তহবিলের প্রথম ও দ্বিতীয় কিস্তির অর্থছাড়ের কোনো প্রয়োজন হবে না। ফলে এখন থেকে বাজেট অনুমোদনের পর প্রকল্প পরিচালকরা জুলাই মাসের ১ তারিখ থেকেই প্রকল্পের অর্থ ব্যবহার করতে পারবেন।
ওই সময় বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়েছিলেন সবাই। কিন্তু চলতি অর্থবছরের ১০ মাসেও তার কোনো প্রতিফলন দেখা যায়নি। ফলে এখনও বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) এবং সংশোধিত এডিপি বাস্তবায়নে বিরাজ করছে পুরনো চিত্র।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন জাতীয় নির্বাচন থাকায় প্রকল্প বাস্তবায়নের গতি কম ছিল। তাই এ সংস্কারের প্রতিফলন স্পষ্ট হয়নি। আগামী অর্থবছর থেকে পুরোপুরি প্রভাব লক্ষ্য করা যাবে।
এ প্রসঙ্গে ঢাকায় নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, অর্থবছরের শুরু থেকেই পরিকল্পিতভাবে প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্য নিয়েই বাজেটে এ নতুন সংস্কারটি নিয়ে আসা হয়েছিল। কিন্তু সেটার কোনো ফলাফল দেখা যাচ্ছে না।
তিনি বলেন, এক্ষেত্রে প্রকল্প বাছাই করা থেকে শুরু করে নকশায় ত্রুটি, কেনাকাটায় দেরি, অনিয়ম এবং সংশোধন প্রক্রিয়ায় বিলম্বসহ নানা কারণে প্রকল্প শুরু করতেই অনেক সময় লেগে যায়। এগুলো মৌলিক সমস্যার সমাধান না করে শুধু অর্থছাড় সহজ করলে তো ফল পাওয়া যাবে না। তবে দেখা যাক আগামী অর্থবছরে কোনো ফল দেয় কিনা।
তবে ভিন্ন মন্তব্য করেছেন পরিকল্পনা সচিব মো. নূরুল আমিন। গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, এ সংস্কার কাজ করছে ঠিকই। কিন্তু জাতীয় নির্বাচনের মতো একটি বড় ইভেন্ট থাকায় বেশ কিছুটা সময় প্রকল্প বাস্তবায়ন ধীরগতি গেছে। কেননা সে সময় সবাই নির্বাচনমুখী ছিল। তাই হয়তো এ সংস্কারের প্রভাব স্পষ্ট হচ্ছে না। তবে এডিপির বাস্তবায়ন তো গত অর্থবছরের তুলনায় বেড়েছে। আশা করছি আগামী অর্থবছর থেকে নতুন এ সংস্কারের ইতিবাচক প্রভাব স্পষ্ট হবে।
সূত্র জানায়, বাজেট বক্তৃতায় সাবেক অর্থমন্ত্রী আরও বলেছিলেন উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এডিপির আকার দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাছাড়া বর্তমান সময়ে এডিপির আওতায় বাস্তবায়ন করা হচ্ছে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বৃহৎ মেগা প্রকল্প। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন আর্থিক সংস্কারের প্রভাবে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর বাজেট বাস্তবায়ন সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। উন্নয়ন কর্মসূচির সঠিক ও সময়মতো বাস্তবায়নে আরও উৎকর্ষ সাধনে আমরা এখন এডিপির অর্থছাড় প্রক্রিয়ায় আমূল সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছি।
সূত্র মতে, চলতি অর্থবছরের দশ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও কাক্সিক্ষত বাস্তবায়ন হয়নি সংশোধিত এডিপি (আরএডিপি)। জুলাই থেকে এপ্রিল পর্যন্ত বাস্তবায়নের হার দাঁড়িয়েছে ৫৪ দশমিক ৯৪ শতাংশ। এ সময়ে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো প্রকল্পের বিপরীতে ব্যয় করেছে ৯৭ হাজার ৩০ কোটি টাকা।
যদিও সংশোধিত এডিপির আকার হচ্ছে ১ লাখ ৭৬ হাজার ৬২০ কোটি টাকা। এর আগে এডিপি বাস্তবায়নের আরও বেশ কিছু সমস্যা চিহ্নিত করে বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ তুলে ধরেছে।
- নাসিমকে পদত্যাগের পরামর্শ দিলেন আলাল
- আইন সংশোধনের উদ্যোগ : খেলাপির সম্পদ জব্দের ক্ষমতা পাচ্ছে ব্যাংক
- ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ছড়িয়ে পড়ছে বিক্ষোভ, সংঘর্ষে নিহত ৯
সম্প্রতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের এডিপি বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা করতে এসব চ্যালেঞ্জ তুলে ধরে সংস্থাটি।
বলা হয়েছে, প্রকল্প প্রণয়নের সময়ের চ্যালেঞ্জগুলো হচ্ছে- প্রকল্প গ্রহণে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা না করে এবং ভবিষ্যৎ প্রেক্ষাপট বিবেচনা না করে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) প্রণয়ন করা হয়।