ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির জবানবন্দির ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়ানোর মামলায় গ্রেফতার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। এছাড়া আদালত আগামী ৩০ জুন এ মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানির দিন ঠিক করেছে।
সোমবার দুপুরে এই পুলিশ কর্মকর্তার জামিন আবেদন নাকচ করে বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মাদ আস সামছ জগলুল হোসেন এই আদেশ দেন।
এর আগে, দুপুরে ওসি মোয়াজ্জেমের আইনজীবী ফরুক আহমেদ সাইবার ট্রাইব্যুনালে জামিনের আবেদন করেন। জামিন আবেদনের ওপর দুপুর আড়াইটার দিকে শুনানি শুরু হয়। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী নজরুল ইসলাম শামীম জামিনের বিরোধিতা করেন।
পরোয়ানা জারির ২০ দিনের মাথায় রোববার বিকেলে হাইকোর্ট এলাকা আটক হওয়ার পর ওসি মোয়াজ্জেম শাহবাগ থানা পুলিশের হেফাজতে ছিলেন।
সোমবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তাকে রোববার রাতে ঢাকায় আসা সোনাগাজী থানা পুলিশের একটি দলের কাছে হস্তান্তর করে শাহবাগ থানা পুলিশ।
এদিন দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ওসি মোয়াজ্জেমকে শাহবাগ থানা আদালতে নেওয়া হয়। এরপর তাকে মহানগর মুখ্য হাকিম (সিএমএম) আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়। পরে বেলা ২টার সময় ওসি মোয়াজ্জেমকে এজলাসে নেওয়া হয়। এরপর ওসি মোয়াজ্জেমের উপস্থিতিতে সাইবার ট্রাইব্যুনালে শুনানি শুরু হয়।
নুসরাত হত্যার ঘটনায় ব্যাপক সমালোচিত মোয়াজ্জেমকে গত ১০ এপ্রিল সোনাগাজী থানা থেকে প্রত্যাহার করা হয়। পরে ৮ মে তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে রংপুর রেঞ্জে সংযুক্ত করা হয়।
এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করেন রংপুরের মানুষ। বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের মধ্য দিয়ে মোয়াজ্জেমকে রংপুর রেঞ্জ থেকে প্রত্যাহারের দাবি জানায় স্থানীয় নানা সংগঠন।
এরপর জরুরি তলব পেয়ে মোয়াজ্জেম রংপুর থেকে ঢাকায় যান। রংপুর রেঞ্জের একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা সূত্রে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। তবে সেবার ঢাকায় যাওয়ার পর মোয়াজ্জেম আর রংপুরে ফিরে যাননি।
এর আগে মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাতের জবানবন্দির ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়ানোর ঘটনায় মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় পরোয়ানা জারির পর তিনি হাইকোর্টে আগাম জামিনের আবেদন করেন।
মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাটি জারি করেন ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল। আগামী ১৭ জুন পরোয়ানা তামিল-সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য তদন্তকারী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২৭ মার্চ সোনাগাজী থানায় আসা নুসরাতের বক্তব্য নিজ মোবাইল ফোনে ধারণ করেন ওসি।
পিবিআইর তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ২৭ মার্চ সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন নিজের মুঠোফোনে নুসরাতের বক্তব্য ধারণ করেন। এতে নির্যাতনের শিকার মেয়েটির ব্যক্তিগত পরিচিতি প্রকাশ পেয়েছে। এর ফলে মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৬ ধারার অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে।
এতে বলা হয়, মোয়াজ্জেম ওই ভিডিও ৮ এপ্রিল শেয়ারইট অ্যাপের মাধ্যমে ‘সজল’ নামের একটি ডিভাইসে পাঠান। এতে তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৯ ধারার অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে।
পিবিআইর প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ায় সামাজিক অস্থিরতার সৃষ্টি ও আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটার উপক্রম হয়। এর মাধ্যমে মোয়াজ্জেম ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৩১ ধারায় অপরাধ করেছেন।