দেশের ১৪ জেলায় ভয়াবহ বন্যার কারণে দুই হাজার ১৪৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। এর মধ্যে নিম্ন মাধ্যমিক, মাধ্যমিক স্কুল, কলেজ ও মাদরাসা পর্যায়ের ৯৩২টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে এক হাজার ২২৭টি।
গতকাল রোববার বিকাল পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে পাঠানো পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য জানা গেছে। তবে প্রতিদিনই এ সংখ্যা বাড়ছে।
বন্যায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষয়ক্ষতি নির্ণয়ে একাধিক দফতর কাজ করছে বলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর (ডিপিই) এবং মাধমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) থেকে জানানো হয়েছে।
ডিপিই থেকে জানানো হয়েছে, দেশের ১৪ জেলায় মোট এক হাজার ২২৭টি বিদ্যালয় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে- কুড়িগ্রামের ১২ উপজেলায় ৫৪০টি, সিরাজগঞ্জের চার উপজেলায় ৭৩টি, বগুড়ার তিন উপজেলায় ৮৩টি, লালমনিরহাটের আট উপজলোয় ৫৪টি, গাইবান্ধার নয় উপজেলায় ২৫৪টি, নীলফামারীর তিন উপজেলায় ১৯টি, রংপুরের দুই উপজেলায় নয়টি, রাঙ্গামাটির সাত উপজেলায় ৩১টি, কক্সবাজারের দুই উপজেলায় ১১৫টি, ফেনীর তিন উপজেলায় ১২টি, সুনামগঞ্জের এক উপজেলায় ছয়টি, বরগুনার এক উপজেলায় দুটি এবং কুমিল্লার এক উপজেলার দুটি বিদ্যালয় রয়েছে।
মাউশির হিসাব অনুযায়ী, গাইবান্ধায় ৬৫টি, লালমনিরহাটে ৮০টি, কুড়িগ্রামে ১২৭টি, রংপুরে পাঁচটি, সিরাজগঞ্জে ২৭টি, জামালপুরে ১৩২টি, নেত্রকোনায় ৫১টি, সুনামগঞ্জে ২২টি, নীলফামারীতে ৬৩টি, নওগাঁয় ৩৮টি, বগুড়ায় ৩৯টি, রাঙ্গামাটিতে ৬৭টি, কক্সবাজারে ৮১টি, ফেনীর ৪২টি এবং বরগুনার ২১টি মাধ্যমিক স্কুল, কলেজ ও মাদরাসা আংশিক ও পুরোপরি প্লাবিত হয়েছে।
বন্যার পানির কারণে এসব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বর্তমানে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে তৃতীয় সাময়িক পরীক্ষা চলছে। আর মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজগুলোর ক্লাস বন্ধ রয়েছে।
চলতি বন্যায় ঠিক কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা জানতে সংশ্লিষ্ট দফতরগুলো অবিরাম কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু বন্যার পানি না নামায় ক্ষতির হিসাবও সেভাবে নিরূপণ করা যাচ্ছে না।
ইতোমধ্যে ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয় থেকে শিক্ষা ও প্রাথমিক গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে বলা হয়েছে, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষয়ক্ষতির হিসাব পাঠাতে।
এছাড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগ জেলার সকল নির্বাহী প্রকৌশলীদের চিঠি দিয়ে বন্যায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষয়ক্ষতির হিসাব শিক্ষা প্রকৌশল দফতরে পাঠাতে বলা হয়েছে।
শিক্ষা ও প্রাথমিক গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, ক্ষতিগ্রস্ত ভবন মেরামতের পাশাপাশি অতিরিক্ত ক্লাস নিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে দেয়া হবে। কিন্তু অতিরিক্ত ক্লাস কখন নেয়া হবে সে বিষয়ে কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি।
তবে মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, স্থানীয় কর্মকর্তারা এ অতিরিক্ত ক্লাসের বিষয়ে নজরদারি করবেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ভৌত অবকাঠামো মেরামত করবে দুটি দফতর। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে ক্ষতিগ্রস্ত ভবন নির্মাণ করবে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর (ইইডি)। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর ক্ষতিগ্রস্ত ভবন মেরামত করবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর।
এ বিষয়ে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী দেওয়ান মো. হানজালা বলেন, বন্যায় কোন কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভৌত অবকাঠামো ক্ষতি হয়েছে, তার পরিসংখ্যান বের করতে দেশের সব নির্বাহী প্রকৌশলীদের চিঠি দেয়া হয়েছে।
- সন্দেহে গণপিটুনি নয়, ৯৯৯ নম্বরে জানানোর পরামর্শ
- শত কোটি টাকা খেলাপিদের ধরতে এবার ‘বিশেষ সেল’
- বন্যা মোকাবেলায় জাতীয় সংলাপ অপরিহার্য : ড. কামাল
তিনি আরও বলেন, মেরামত কাজের জন্য আমাদের কাছে পর্যাপ্ত তহবিল রয়েছে। পানি নেমে গেলেই সে অর্থ দিয়ে মেরামত কাজ শুরু হবে। পানি নামার এক সপ্তাহের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো পাঠদানের উপযোগী করা হবে। পাশাপাশি ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেশি হলে ক্রমাগতভাবে ভৌত অবকাঠামোর উন্নয়ন করা হবে।