বন্যায় দেশের ১৯ জেলায় প্রায় ১ হাজার ৩শ’টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের ভেতরে পানি ঢুকে যাওয়ায় অবকাঠামো, আসবাবপত্র, বই-খাতাসহ ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে গেছে।
সূত্র মতে, এ হিসেব প্রতিনিয়ত বাড়ছে। তালিকা পাওয়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রায় ২৬ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর (ডিপিই) সূত্রে জানা গেছে।
ডিপিইতে ৩১ জুলাই পর্যন্ত সারাদেশ থেকে পাঠানো তালিকা থেকে দেখা গেছে, গত একমাসের বন্যায় সারাদেশে প্রায় ১৩শ’ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ হয়ে গেছে। বিদ্যালয়ের ভেতরে পানি ঢুকে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বন্যায় উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলার বিদ্যালয়গুলোতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে।
ডিপিইর হিসেবে দেখা গেছে, কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলায ৮৫টি, কুড়িগ্রাম সদরে ৫৭টি, চিলমারী ৩১টি, নাগেশ্বরী ২১টি, ফুলবাড়ী ২৮টি, ভূরুঙ্গামারী ৩২টি, রৌমারী ২৫টি, চর রাজিবপুর ৫৫টি, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ ৬৩টি, সাদুল্লাপুর ২৯টি, লালমনিরহাটে আদিতমারী ২১, সদর ৩২, হাতীবান্ধা ৩৩টি।
নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ ১২টি, ডিমলা ২৫টি, ডোমার ১৭টি, বগুড়ার ধুনট উপজেলায় ২৭টি, সারিয়াকান্দি ৭৮টি, সিরাজগঞ্জ কাজিপুর ২৯টি, বেলকুটি ৯টি, শাহজাদপুর ৫২টি, সদরে ২৪টি, নওগাঁ আত্রাই উপজেলায় ৩২টি, সদরে ৫টি, মান্দা ২৫টি, পাবনা ফরিদপুর ৩৮টি।
ভাঙ্গুড়া ২১টি, বেড়া ২৭টি, মাদারীপুর শিবচর ২৬টি, সদর ১২টি, পাংশা ৫টি, গোয়ালন্দ ৭টি, ফরিদপুর চরভদ্রাসন উপজেলায় ৫টি, কক্সবাজার চকরিয়া ১২৫, পেকুয়ায় ৩১টি, রাঙ্গামাটি সদরে ৭টি, কাউখালী ৯টি, বরকল ৮টি, জুরাছড়ি ৬টি, লংগদু ২টি, বাঘাইছড়ি ১৫টি।
বিলাইছড়ি ৯টি, ফেনী ছাগলনাইয়া ২১টি, পরশুরাম ২টি, ফুলগাজী ২১টি, কুমিল্লা আদর্শ সদর ২টি, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলায় ৮টি, সুনামগঞ্জ ১৮টি ও বরগুনার আমতলী উপজেলায় ৫টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা বলেন, সারাদেশে বন্যা পরিস্থিতিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্তের পরিসংখ্যান প্রতিদিন ‘আপডেট’ হচ্ছে। বন্যার কারণে গত ৩০ দিন ধরে সারাদেশে বিভিন্ন জেলায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কোথাও বন্যার পানিতে ডুবে যাচ্ছে, কোথাও বিদ্যালয়ের মেঝেতে জলাবদ্ধ, আবার কোথাও ক্লাসরুম বা খেলার মাঠসহ অর্ধেক ভবন ডুবে গেছে।
ডিপিই সূত্রে জানা যায়, দেশের ১৯টি জেলায় মোট ১ হাজার ৩০০টি বিদ্যালয়ে বন্যার পানির ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে তৃতীয় সাময়িক পরীক্ষা আয়োজন করার কথা থাকলেও এসব প্রতিষ্ঠানে তা সম্ভব হচ্ছে না।
বন্যায় ঠিক কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা জানার জন্য বেশ কিছু দফতর অবিরাম কাজ করছে। ডিপিইতে এ সংক্রান্ত একটি সেল তৈরি করা হয়েছে। তবে বন্যার পানি এখনো না নামায় ঠিক মতো ক্ষতির হিসাবও নিরূপণ করা যাচ্ছে না। তবে বসে নেই কর্মকর্তারা।
ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয় থেকে শিক্ষা এবং প্রাথমিক গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক চিঠিতে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষয়ক্ষতির হিসাব পাঠাতে বলা হয়েছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্ষয়ক্ষতি নির্ণয় করছে।
শিক্ষা এবং প্রাথমিক গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, ক্ষতিগ্রস্ত ভবন মেরামতের পাশাপাশি অতিরিক্ত ক্লাস নিয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদান ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু এ অতিরিক্ত ক্লাস কখন নেওয়া হবে সে বিষয়ে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। বলা হয়েছে, স্থানীয় কর্মকর্তারা এ অতিরিক্ত ক্লাসের বিষয়টি নজরদারি করবেন।
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বিষয়ে ডিপিই’র পরিকল্পনা ও উন্নয়ন শাখার উপপরিচালক নুরুল আমিন গণমাধ্যমকে বলেন, বন্যায় সাধারণত চর এলাকা ও উত্তরবঙ্গের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ কারণে এসব এলাকায় ক্ষতির পরিমাণও বেশি। এ জন্য এসব এলাকায় স্থায়ী ভবন নির্মাণের চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। চর এলাকায় স্থায়ী ভবন নির্মাণের পরিবর্তে সহজেই স্থানাস্তর যোগ্য ভবন তৈরি করা হবে।
- নতুন পারমাণবিক চুক্তিতে চীনকে রাখতে আগ্রহী ট্রাম্প
- ‘মহামারী আকার ধারণ করা ডেঙ্গু মোকাবেলায় সরকার ব্যর্থ’
তিনি আরও বলেন, প্রতিদিন মাঠ পর্যায় থেকে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তালিকা পাঠানো হচ্ছে। এখন পর্যন্ত সারাদেশে ১৩শ’ প্রতিষ্ঠান ক্ষয়ক্ষতির হিসাব পাওয়া গেছে। এসব প্রতিষ্ঠান মেরামতের জন্য প্রায় ২৬ কোটি টাকা ব্যয় হবে। তবে রাজস্ব ও উন্নয়ন খাতে পর্যাপ্ত অর্থ রয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির চূড়ান্ত হিসাব পাওয়ার পর সেসব বিদ্যালয় মেরামতের কাজ শুরু করা হবে। গত বছরও এ বাবদ প্রায় ২০ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে।