সুন্দরভাবে বেড়ে উঠুক শিশুরা

লাকী ইনাম

লাকী ইনাম
লাকী ইনাম। ফাইল ছবি

শিশুরাই আমাদের ভবিষ্যৎ। কাজেই আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে শিশুরা যেন সুন্দর ও সমৃদ্ধভাবে বেড়ে উঠতে পারে, সে জন্য সব ধরনের সুযোগ নিশ্চিত করা। তারা যেন শুধু খাদ্য পেয়েই বড় না হয়। একই সঙ্গে তারা শিক্ষা ও সংস্কৃতিচর্চার সুযোগও যেন সমানভাবে পায়। সেই পরিবেশ ও উপকরণ তাদের জন্য সুলভ করে দেওয়া আমাদের কর্তব্য। আমাদের শিশুবান্ধব সংস্কৃতির পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।

এবারে শিশু দিবসের প্রতিবাদ্য বা স্লোগান হচ্ছে ‘আজকের শিশু আনবে আলো, রাখবে ভালো বিশ্বটাকে।’ কাজেই আমি চাই, তারা যে আলো আনবে ভবিষ্যতে, সে জন্য তাদের নিজেদের তো সুন্দর ও যোগ্য হয়ে বেড়ে উঠতে হবে। তাদের জগত্টাকে সুন্দর ও সমৃদ্ধ করে দিতে হবে। শিশু একাডেমি সারা বছর এ বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করে চলেছে। একটা দিবস এলে সুবিধা হয় যে আমরা নতুন করে সচকিত হই। নতুনভাবে কাজ করার প্রেরণা ও শক্তি সঞ্চয় করি। বাংলাদেশের সব শিশু তো বটেই, আমি চাই পৃথিবীর সব শিশু যেন শিক্ষা, সংস্কৃতি ও সুন্দর ব্যবস্থাপনার আর সমান অধিকার ও পরিবেশ পেয়ে বড় হয়ে ওঠে। পৃথিবীর সব শিশু যেন ভালো থাকে। ভালোভাবে বেড়ে ওঠে। সম্ভাব্য সব সুবিধা পেয়ে যেন বড় হতে পারে। শিশুরা যেন ভালো থাকে। তারা যেন পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে পারে।

এখানে একটি ব্যাপার আছে, যেটা আমাকে খুব ভাবায়; সব শিশুই কিন্তু সমান অধিকার পেয়ে বড় হয় না। অনেক শিশু শিক্ষার সুযোগ পায় না। সংস্কৃতির চর্চা ও পরিবেশ পায় না। দেশে অনেক সুবিধাবঞ্চিত শিশু আছে। মা-বাবা থাকা সত্ত্বেও অনেক শিশু ভালোভাবে বেড়ে উঠতে পারে না। অনেক পথশিশু আছে, তাদের জন্যও আমাদের ভাবতে হবে। তারা শিক্ষা ও সংস্কৃতি থেকে দূরে থাকে, ঠিকমতো খেতেও পায় না। তারা মানসিকভাবে বিকশিত হয় না। এরা কিন্তু তাদের নিজের জন্য যেমন, সমাজের জন্যও বোঝা হয়ে ওঠে। এটা দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। এর থেকে কিভাবে বেরিয়ে আসা যায়, শিশুদের নিয়ে সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে পারলে ভালো কিছু সম্ভব হবে।

শিশু একাডেমি নিয়মিত যে সেবাগুলো দেয়, এর পাশাপাশি পথশিশু এবং সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে কিভাবে কাজ করা যায়—এসব নিয়ে আমি গভীরভাবে ভাবছি। আশা করছি, এ বিষয়ে এবার কিছু করার অবকাশ পাব।

বাংলাদেশে অনেকে ব্যক্তিগত উদ্যোগে শিশুদের জন্য কাজ করে চলেছে। অনেক প্রতিষ্ঠান, সংগঠন, এনজিও এবং সরকার নানাভাবে শিশুদের নিয়ে কাজ করছে। শিশুদের জন্য কাজের আওতা আরো বাড়াতে হবে। শিশু একাডেমি শিশুদের সুন্দরভাবে বিকাশের জন্য নানা ধরনের পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে। কবিতা আবৃত্তি, নাচ, গান, ছড়া বলা, ছবি আঁকা, গল্প বলার প্রতিযোগিতা এবং শিশু-কিশোর উপযোগী বিভিন্ন উপকরণের মাধ্যমে তাদের বিকাশে সহায়তা করছে। দেশের সব জেলায় শিশু একাডেমি আছে এবং কাজ করে যাচ্ছে। নতুন আর কী কী যুক্ত করা যায় শিশুদের জন্য, সেই পরিকল্পনাও আছে আমাদের।

শিশুদের আমি কোনোভাবে ভাগ করতে চাই না। কিন্তু বাস্তবতা তো মেনে নিতে হবে। আমাদের অনেক অনগ্রসর ও বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী বা অটিস্টিক শিশু আছে। তারাও আমাদের ভালোবাসার ধন। তাদের শিক্ষা ও সংস্কৃতিচর্চার জন্যও কিছু কিছু সুবিধা আছে। এখন আমরা ভাবছি, স্পেশাল কোনো মাধ্যমে প্রশিক্ষিত শিক্ষক দিয়ে শিশুদের নতুন কিছু শেখানো যায় কি না। যে শিক্ষার মাধ্যমে সাধারণ শিশুর পাশাপাশি অটিস্টিক শিশুরাও সুন্দরভাবে বেড়ে উঠবে।

বাংলাদেশ শিশু একাডেমি শিশুদের নিয়ে নানাভাবে কাজ করে চলেছে। এবার বিশ্ব শিশু দিবস উপলক্ষে শিশু অধিকার সপ্তাহ হিসেবে পালন করা হবে। এ জন্য শিশুদের নিয়ে সাত দিন ধরে বিশেষ আয়োজনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমি সদ্য যোগদান করেছি শিশু একাডেমিতে। আমার নিজের অনেক স্বপ্ন এবং পরিকল্পনা আছে শিশুদের নিয়ে। অনেক দিন ধরেই আমি শিশুদের নিয়ে কাজ করি। শিশুবিষয়ক নানা ধরনের কাজে এবং পরিকল্পনায় যুক্ত থাকার চেষ্টা করি। ব্যক্তিগত উদ্যোগে তো কাজ করা যায়, কিন্তু সে ক্ষেত্রে নানা সীমাবদ্ধতা ও কাজ সম্পাদনে অবকাশের ঘাটতি থাকে। এবারে যেহেতু একটি বড় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হয়েছি, ভালো কিছু কাজ করতে পারব আশা করছি।

শিশু একাডেমি নিয়মিতভাবে শিশুদের নিয়ে কাজ করছে। এর সঙ্গে আমার নিজের যে পরিকল্পনা ও ভাবনা আছে সেসব বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করব। আশা করছি, নতুন ও ভালো কিছু করার সুযোগ পাব।

লেখক : চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ শিশু একাডেমি

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে