জুয়া, টেন্ডারবাজির পর প্রশাসনেও এসে পড়েছে সরকারের শুদ্ধি অভিযানের ঢেউ। দুর্নীতিগ্রস্ত ও নানা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়া শুরু হয়েছে।
বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে চাকরিতে প্রবেশ, অর্থের বিনিময়ে পদ-পদবি বাগিয়ে নেয়া, নারী কেলেঙ্কারিসহ বিভিন্ন বিষয় উঠে আসছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অনুসন্ধানে।
এভাবেই রাখঢাক না করে ভিন্ন কৌশলে শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
প্রশাসনে শুদ্ধি অভিযান শুরু হচ্ছে কিনা- জানতে চাইলে গত সেপ্টেম্বর মাসে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন জানিয়েছিলেন, অবশ্যই, আমরা খুব শক্তভাবে এটা করব। আমরা তরুণদের ওপর যথেষ্ট নজর রাখছি। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এগুলোর সঙ্গে যারা জড়িত… তাহলে তো বিষয়গুলো এসেই যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, প্রশাসনের অনেকে মনে করতে পারেন, যা করছেন কেউ হয়তো দেখছে না। এটা মনে করার কোনো কারণ নেই।
অতি দলবাজ কর্মকর্তা যারা নিজেদের সরকারদলীয় লোক হিসেবে পরিচয় দেয় তাদের অনেকের অতীত খুবই প্রশ্নবিদ্ধ বলে তদন্তে উঠে এসেছে।
প্রশাসনে ২৪ ব্যাচের ২০০৫ সালে নিয়োগপ্রাপ্ত দুজন কর্মকর্তা রয়েছেন, যারা নিজেদের বড় নেতা দাবি করে বিভিন্ন সময় ভালো পদ বাগিয়ে নিয়েছেন। তাদের অতীত ঘেঁটে জানা যায়, দুজনই একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৯৫-১৯৯৯ সেশনের ছাত্র ছিলেন। সিভিল সার্ভিসের ইতিহাসে এ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েশন করে ক্যাডার সার্ভিসে চান্স পাওয়ার নজির ওই দুজনই বলে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
তারা দুজনই আবার একই সেশনের। তারা যোগ্যতায় নয় মূলত তৎকালীন একটি বিশেষ ভবনের আশীর্বাদে চাকরিতে প্রবেশ করেছেন বলে তদন্তে উঠে এসেছে। তারা ভোল পাল্টে ঢাকার এক সাবেক জেলা প্রশাসকের ছত্রচ্ছায়ায় দুর্দান্ত প্রতাপে ঢাকায় দীর্ঘসময় এসিল্যান্ডের দায়িত্ব পালন করেন।
একই গুরুর আশীর্বাদ নিয়ে তারা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এপিডি উইং ও ঢাকার সার্কেল অফিসার হিসেবে পদায়ন পান। তারাই ভাগ্যবিধাতা ছিলেন তাদের ব্যাচমেটদের।
এর মধ্যে একজন ঢাকার এডিসি হওয়ার জন্য ২২তম ব্যাচের একজন সৎ কর্মকর্তাকে হটিয়ে টাকার বিনিময় একদিনের মধ্যে পোস্টিং অর্ডার করে পরদিনই নজিরবিহীনভাবে দায়িত্ব বুঝে নেন। তার বিরুদ্ধে ডিপার্টমেন্টাল মামলাও হয় বলে তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। ওই দুজনের একজন বর্তমানে একটি জেলার এডিসি এবং অপরজন একটি সংস্থায় পরিচালক হিসেবে কর্মরত।
সাবেক একজন প্রতিমন্ত্রীর এপিএস ছিলেন এমন একজন কর্মকর্তার বিষয়ে উঠে এসেছে নানা অনিয়মের তথ্য। তিনি প্রশাসনের ২২তম ব্যাচের একজন কর্মকর্তা। তিনিও নিজেকে সাবেক বড় নেতা বলে পরিচয় দেন। তিনি ঢাকার স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক (ডিডিএলজি) থাকার সময় নারী সহকর্মীরা তার বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগ আনেন। এছাড়া তার অন্যান্য কর্মক্ষেত্রে একই অভিযোগ ছিল বলে তদন্তে জানা গেছে।
- নীতিমালা সংশোধনের পর চলতি বছরেই আরেক দফা এমপিওভুক্তি
- মন্ত্রী-ব্যবসায়ী রুদ্ধদ্বার বৈঠক : পেঁয়াজের দাম কমবে ১০ দিন পর
এছাড়া নিয়োগ প্রক্রিয়ার ব্যত্যয় ঘটিয়ে প্রশাসনে ২৮ ও ২৯ ব্যাচের কিছু কর্মকর্তা নিয়োগ পেয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠেছে। এ বিষয়ে উচ্চ আদালতে বিচার চলমান। এ কর্মকর্তারা বিভিন্ন স্থানে ভালো জায়গায় পদায়ন পেয়েছেন। তাদের সততাও প্রশ্নবিদ্ধ। এছাড়া তদন্তে একজন সচিবের দুর্নীতির সুস্পষ্ট প্রমাণ মিলেছে। তার সততা প্রশ্নবিদ্ধ হলেও তিনি দফায় দফায় চুক্তি পেয়েছেন।
এছাড়া প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে যারা নিজেদের দলীয় পরিচয় দিয়ে পদ-পদবি বাগিয়ে নিচ্ছেন কিংবা নানা অভিযোগ উঠছে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলমান বলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।