প্রসঙ্গ রাজাকারের তালিকা

সম্পাদকীয়

রাজাকার
রাজাকার। ফাইল ছবি

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ১৬ই ডিসেম্বর ২০১৯ বিজয় দিবসের রাজাকার-আলবদরদের তালিকা প্রকাশ করেছে। প্রকাশিত পত্রিকা সূত্রে জানা যাচ্ছে যে, তালিকায় অনেক মুক্তিযোদ্ধার নামও রাজাকার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এই ধরনের অপরাধমূলক বিভ্রান্তির কারণ সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করতে ব্যর্থ হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রণয়নের ক্ষেত্রেও নানা অভিযোগ রয়েছে। আগেও ছিল বর্তমানেও রয়েছে এই অভিযোগ। কেন এমনটা হবে?

স্বাধীনতা বিরোধীদের তালিকা প্রণয়ন, মুক্তিযোদ্ধা তালিকা প্রণয়নের চেয়ে কোন অংশেই কম জটিল ও গুরুত্বপূর্ণ নয়। তালিকা প্রণয়নের যথেষ্ট সতর্কতা প্রয়োজন ছিল এবং আছে, সে যে তালিকাই হোক না কেন।যুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাগণ অনেক ক্ষেত্রেই রাজাকার এবং শান্তি কমিটির লোকদের সহায়তা নিয়েছিলেন, তাঁদেরকে কোন পর্যায়ে বিবেচনা করা হবে? স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকা নিয়ে কাজ হয়ে থাকলে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় করলোটা কি? এর জবাব কে দিবে?

মুক্তিযুদ্ধের সময় অনেক রথী-মহারথী দখলদার পাকিস্তানিদের সমর্থন করে বিবৃতি দিয়েছিলেন (তাঁদেরকে বিবৃতিদানে বাধ্য করা হয়েছিল)। তাঁদেরকে কোন পর্যায়ে ফেলবেন। যে রাজাকার কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধাদেরকে আশ্রয় দিয়েছিলেন, যুদ্ধে সহায়তা করেছিলেন, মুক্তিযোদ্ধাদেরকে পাকিস্তানি দখলদারদের আক্রমণ থেকে বাঁচিয়েছিলেন, শুধু কি থানার তালিকা দেখে তাঁকে স্বাধীনতা বিরোধী হিসেবে চিহ্নিত করা সঠিক কাজ হবে?

অতএব শুধু বিবৃতি দিয়ে দুঃখ প্রকাশ নয়, আবেদন আহ্বান করে দায় এড়ানো নয়, প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের এবং মুক্তিযুদ্ধের গবেষকদের সমন্বয়ে কমিশন গঠন করে রাজাকার তথা স্বাধীনতা বিরোধীদের তালিকা প্রণয়নে কাজ করা আবশ্যক। আমলাতান্ত্রিকতার আশ্রয় নিয়ে যা করা হয়েছে, তা শুধু বিতর্কই নয়, ক্ষোভ এবং ধিক্কারেরও ব্যবস্থা করেছে। আমরা তাই দায়িত্বশীলদের হাতে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কর্তৃত্ব দেখতে চাই। একবার বিদেশী বন্ধুদের ক্র্যাস্টের সোনা নিয়ে কেলেঙ্কারী আর এবার রাজাকার তালিকা নিয়ে কেলেঙ্কারী, আমরা আর কতটা সইব।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে