করোনা ভাইরাস সংকটের মধ্যে নানা রকম উদ্ভট তত্ত্ব বা দাবি অনলাইনে নিয়মিত ছড়াচ্ছে। এর মধ্যে কিছু এসেছে বড় বড় রাজনৈতিক নেতার মুখ থেকে।
হাসপাতালের ফেসমাস্ক চুরি থেকে শুরু করে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের চিকিৎসা এবং জীবাণুযুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে এই ভাইরাস ব্যবহারের কথা– সব রকম দাবিই শোনা গেছে রাজনীতিবিদদের মুখে। খবর বিবিসির।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও কম যাননি এ ক্ষেত্রে। শুরুতে করোনা ভাইরাসকে তেমন পাত্তা দিতে চাননি তিনি, তবে পরে বলেন– এটি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়েছে চীন। এ ভাইরাস এখন মহামারীতে পরিণত হয়েছে।
যখন ফেসমাস্কের চাহিদা বেড়ে গেল, তখন ট্রাম্প দাবি করেছিলেন– নিউইয়র্কের হাসপাতাল থেকে বিপুলসংখ্যক সার্জিক্যাল মাস্ক চুরি হয়ে যাচ্ছে।
তিনি প্রশ্ন করেন, এত মাস্ক কোথায় যাচ্ছে? এগুলো কী পেছনের দরজা দিয়ে অদৃশ্য হযে যাচ্ছে? কিন্তু এ কম বিপুলসংখ্যক মাস্ক চুরির কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
বেশ কয়েকজন চীনা কর্মকর্তা বারবার বলার চেষ্টা করেছেন, করোনা ভাইরাস সংক্রমণের সূচনা চীনে হয়নি। চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লিজান বারবার এ কথা বলেছেন।
চীনের রাষ্ট্রীয় মিডিয়াও বারবার এসব মিথ্যা দাবি তুলে ধরার চেষ্টা করে বলেছে, কোভিড-১৯ হয়তো সৃষ্টি করেছে মার্কিন সামরিক বাহিনী।
আরেকটি দাবি ছিল, চীনের অনেক আগেই ইতালিতে এ ভাইরাসের সংক্রমণ হয়েছিল। কিন্তু এ রকম দাবির সত্যতার পক্ষে কোনো প্রমাণই পাওয়া যায়নি।
বৈজ্ঞানিকরা একমত যে, ২০১৯ সালের শেষ দিকে চীনের উহানে প্রথম অন্য প্রাণী থেকে করোনা ভাইরাস মানবদেহে সংক্রমিত হয়েছিল।
ইতালির জাতীয়তাবাদী নেতা মাত্তিও সালভিনি তার সমর্থকদের উদ্দেশে বলেছেন, চীনই একটি ল্যাবরেটরিতে করোনা ভাইরাস সৃষ্টি করেছে।
যদিও বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত, কোভিড-১৯ মানুষের তৈরি কোনো ভাইরাস নয়।
ভুয়া তথ্য প্রচারের জন্য ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জায়ার বোলসোনারোর অনেক উক্তি সেন্সর করেছে ফেসবুক, ইনস্টাগ্র্রাম, টুইটার এবং ইউটিউবের মতো সোশ্যাল মিডিয়াগুলো।
এসব পোস্টের একটিতে তিনি দাবি করেছিলেন ম্যালেরিয়ার ওষুধ হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন সম্পূর্ণরূপে করোনা ভাইরাস সারাতে পারে।
আসলে এ নিয়ে পরীক্ষা হয়েছে, ওষুধটি পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগও হচ্ছে কিন্তু সার্বিকভাবে এর কার্যকারিতা প্রমাণিত হয়নি।
ভারতের একজন ঊর্ধ্বতন রাজনীতিবিদ সুব্রামানিয়াম স্বামী দাবি করেন, ভারতে যে করোনা ভাইরাস ছড়িয়েছে তা এ ভাইরাসের একটি দুর্বল মিউটেশন এবং মানবদেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা একে কার্যকরভাবে মোকাবেলা করতে পারে।
সব ভাইরাসেরই মিউটেশন বা পরিবর্তন হয়, কিন্তু বিজ্ঞানীরা এমন কোনো নমুনা এখনো পাননি যে কোভিড-১৯ কত মারাত্মক হতে পারে। আসলে এ ব্যাপারে অনেক কিছুই এখনও মানুষের অজানা।
এই কোভিড-১৯ আমাদের সবার জন্যই বিপদের কারণ। কিন্তু তা অনলাইনে ভুয়া দাবির যে ভাইরাস বিশ্বব্যাপী ছড়াচ্ছে, তা ঠেকানো যাচ্ছে না।